হোম > বাণিজ্য

১৬ মাস তালিকাভুক্তিবিহীন

শেয়ারবাজার

কাওসার আলম

গত ১৬ মাসে দেশের শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। এমনকি এ সময় তালিকাভুক্তির জন্য কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদনও জমা পড়েনি। বহুজাতিক যেসব কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ার দ্রুত ছাড়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা থাকলেও সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি। করোনা মহামারির সময় ছাড়া এত দীর্ঘ সময় ধরে আইপিও আবেদন জমা না পড়া ও তালিকাভুক্তি না হওয়ার ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইর ওয়েসবাইটের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সবশেষ কোম্পানি হিসেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় টেকনো ড্রাগস। এরপর আর কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন কিংবা তালিকাভুক্তির ঘটনা ঘটেনি। ২০২৪ সালে টেকনো ড্রাগসসহ মোট পাঁচটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন ও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিগুলো হলো—এনআরবি ব্যাংক, শিকদার ইনস্যুরেন্স ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এদিকে, দীর্ঘ সময় কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় দেশের শেয়ারবাজার অন্তত দুই বছর পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে গেলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) পুনর্গঠিত হয়। পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। পুঁজিবাজার সংস্কারে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। টাস্কফোর্সের কাজের সুবিধার্থে ১৭টি কার্যপরিধিও নির্ধারণ করে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কার্যপরিধির আলোকে অন্যান্য বিধিমালার পাশাপাশি আইপিও বিধিমালা, ২০১৫ পরিবর্তন করে নতুন বিধিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় টাস্কফোর্স। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইক্যুয়িটি সিকিউরিটিজ) বিধিমালা, ২০২৫ নামে অভিহিত এ বিধিমালার ওপর জনমত যাচাই শেষ হয়েছে। এটি এখন কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। চলতি ডিসেম্বর মাসে নতুন বিধিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত নতুন বিধিমালা প্রণয়নের কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে বিএসইসিতে কোনো আবেদন জমা পড়েনি। যদিও আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধি নিষেধ ছিল না। কয়েকটি আবেদন জমা থাকলেও নানা ধরনের অসংগতির কারণে সেগুলোর আইপিও অনুমোদন নাকচ করে দেয় পুনর্গঠিত বিএসইসি। ফলে তালিকাভুক্তির আবেদনে নতুন করে কোনো কোম্পানির কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।

এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আমার দেশকে বলেন, নতুন বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আইপিও বিধিমালা, ২০১৫ কার্যকর ছিল। কোম্পানিগুলো এ বিধিমালার আলোকে আবেদন জমা দিতে কোনো বাধা ছিল না। বর্তমান কমিশন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে পারত। কিন্তু কোম্পানিগুলোর সুশাসনের অভাব থাকায় কিংবা বর্তমানে রেস্ট্রিকটেড প্রাইস মডেলের কারণে এ সময়ে আবেদনে আগ্রহী হয়নি। শুধু বেসরকারি কোম্পানিই নয়, এ সময় সরকারি কোনো কোম্পানির শেয়ারও বাজারে আসেনি। গত ১১ মে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে পাঁচটি নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল—সরকারি মালিকানা রয়েছে এ ধরনের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দ্রুত তালিকাভুক্ত করা। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেলেও একটি কোম্পানিও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মাজেদা খাতুন আমার দেশকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তবে সরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভজনক কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি নেই। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হলেও বেশ কিছু পলিসিগত ইস্যু রয়েছে। অন্যদিকে, বহুজাতিক যেসব কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে, সেগুলো বাজারে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বোর্ডের অনুমোদনের বিষয়সহ আরো কিছু বিষয় জড়িত রয়েছে। বড় ধরনের কর সুবিধা না থাকার কারণেও কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তিতে অনাগ্রহ রয়েছে। তারপরও কোম্পানিগুলো যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে, সেসব মন্ত্রণালয় থেকে যদি নির্দেশ দেওয়া হলে তালিকাভুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত হত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, আইপিও বিধিমালা সংস্কারের কারণে বেসরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে আসার ক্ষেত্রে হয়তো আগ্রহী হয়নি। কিন্তু এ সময়ে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিকে নিয়ে আসা যেত। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও একটি কোম্পানিও বাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটি অরাজনৈতিক সরকারের আমলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়াটা মোটেও কাম্য ছিল না। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির যে ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল, সেটি করেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৬ মাসে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণে দেশের শেয়ারবাজার দুই বছর পিছিয়ে গেছে উল্লেখ করে সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। সরকারি ১০টি ভালো কোম্পানি না হোক অন্তত কয়েকটি কোম্পানিও যদি তালিকাভুক্ত হতো, তাহলে বাজার পরিস্থিতি এতটা মন্দ হতো না এবং আস্থার সংকটও তৈরি হতো না।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৮৪টি কোম্পানির মধ্যে ১০২টি দুর্বল বা জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি দুর্বল কোম্পানি। এর মধ্যে, খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত কমিশনের আমলে অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর ৩৫ শতাংশই দুর্বল কোম্পানির তালিকায় নাম লিখিয়েছে।

ই-রিটার্ন ব্যবস্থায় যুক্ত হবে ব্যাংকিং তথ্য: এনবিআর চেয়ারম্যান

কৃষি ও এসএমই ঋণ বাড়াতে প্রভিশন হার আরও কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ছয় মাসে ২৯৩ কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

তিন মাসে ভোক্তা ঋণ কমেছে ২২ হাজার কোটি টাকা

সংকুচিত হয়ে আসছে ইউরোপের রপ্তানি বাজার

ছয় সুগার মিল চালুর ঘোষণা শুধু কাগজেই

ডিসেম্বরের ১৭ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

ডিএসই ইনফরমেশন হেল্প ডেস্ক উদ্বোধন

মালিকরা এককভাবে কোনো ব্যাংক ধ্বংস করতে পারে না, কর্মকর্তারাও দায়ী

সরকারের ব্যাংকঋণে উল্লম্ফন