সমস্যাগ্রস্ত পাঁচ ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের প্রক্রিয়া এগোতে থাকায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকটাই কেটে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহ থেকেই ধাপে ধাপে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের কাজ শুরু হতে পারে। প্রথম পর্যায়ে প্রতি আমানতকারী সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবেন, যা আসবে আমানত বিমা তহবিলের মাধ্যমে।
কীভাবে টাকা পাবেন: টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্কিম প্রণয়ন করছে, যা টাকা ফেরতের আগে প্রকাশ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যেসব গ্রাহকের হিসাবে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আছে, তারা চাইলে পুরো টাকা তুলতে পারবেন। যাদের হিসাবে এর বেশি আছে, তারা আপাতত সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবেন। বাকি টাকার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং সেই আমানতের মুনাফার হার নতুন করে নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে ৫ ব্যাংকের ৭৫ লাখ গ্রাহকের সবাই তাৎক্ষণিকভাবে পুরো টাকা না পেলেও পরে চাইলে সম্পূর্ণ টাকা তুলতে পারবেন। মূলত ছোট আমানতকারীদের সুরক্ষার দিক বিবেচনায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টাকা পেতে যে নিয়মগুলো মানতে হবে: একজন নাগরিকের এক ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও শুধু একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা দেওয়া হবে। এ জন্য তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্রভিত্তিক হিসাব থাকতে হবে। বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে খোলা হিসাবধারীরাই টাকা পাবেন। পাঁচ ব্যাংকে কারও আলাদা আলাদা পাঁচটি হিসাব থাকলে প্রতিটির বিপরীতে টাকা পাবেন। যেসব আমানতের বিপরীতে ঋণ রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে ঋণ সমন্বয়ের পর টাকা ফেরত দেওয়া হবে। অবশিষ্ট টাকার ওপর নতুন করে সুদের হার নির্ধারণ করা হবে।
খরচ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে মোট ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা—এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি এবং আমানত বিমা তহবিল থেকে আসবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ঠিক করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি।
ইতোমধ্যে সরকারের ২০ হাজার কোটি টাকার মূলধন ছাড় করা হয়েছে, বাকিটাও মূলধন হিসেবে ব্যাংকে দেওয়া হবে। নতুন ব্যাংকটিকে শক্তিশালী করতে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, আন্তর্জাতিক মানের নীতিমালা প্রণয়নসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।
রাজধানীর মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে এবং সরকার ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ দিয়েছে। শিগগিরই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পর্ষদকে আরো কার্যকর করা হবে।