হোম > বাণিজ্য

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ল ৫৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসের মাথায় ‘নজিরবিহীনভাবে’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। হঠাৎ করে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ।

এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ খুবই অবাস্তব। দেশের অর্থনীতি এতটা বড় হয়ে যায়নি যে, চাইলে যে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক আকারের সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার কোনো ধরনের সামঞ্জস্য নেই। নতুন এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন খুবই কঠিন হবে। হঠাৎ করে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ঘটনা নজিরবিহীন।

তবে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ আমার দেশকে বলেন, জিডিপির তুলনায় আমাদের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ খুবই কম। জিডিপির আকার বাড়ছে, কিন্তু সেভাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। এর অর্থ হচ্ছে ঠিকমতো তা আদায় করা হচ্ছে না।

রাজস্ব বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতেই হবে। যারা বড় ধরনের করফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। একই ব্যক্তির কাছ থেকে কর আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন তাদের ট্যাক্স ফাইল যথাযথভাবে যাচাই করতে হবে, যাতে কেউ করফাঁকি দিতে না পারে। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এনবিআরের যে ধরনের প্রচেষ্টা থাকা দরকার তার অভাব রয়েছে।

এদিকে হঠাৎ করেই লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ভূমিকা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে এনবিআরের পক্ষ থেকে নানাভাবে চাপ তৈরি করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এনবিআরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে নানাভাবে চাপ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, রাজস্ব বাড়ানোর জন্য আইএমএফ নানাভাবে চাপ তৈরি করে। এর মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম কর ২ শতাংশ নির্ধারণ, কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল, যেসব খাতে কর সুবিধা রয়েছে, সেসব খাত থেকেও কর আদায়ের মতো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভ্যাটের ক্ষেত্রেও একক হার হিসাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ এবং ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বাতিলের পরামর্শ দিয়েছে দাতাগোষ্ঠীটি। কিন্তু আইএমএফের এসব শর্ত পরিপালন করে শুধু রাজস্ব আহরণের বিষয়টি বিবেচনা করা হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের ধস নামবে। এতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৩ সালে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছিল। চলতি বছরের জুনে আইএমএফের পর্ষদ আরো ৮০ কোটি ডলার যুক্ত করে মোট ঋণের পরিমাণ ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করে। ইতোমধ্যে পাঁচ কিস্তিতে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণছাড় করেছে সংস্থাটি। ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে শর্ত যাচাইয়ে গত অক্টোবর মাসে আইএমএফ প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর শেষ করে প্রতিনিধিদলটি। তাদের এ সফরের পরই রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের নতুন এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলো।

অবশ্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আইএমএফের ঋণের প্রয়োজন নেই। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পরই আইএমএফ কিস্তিছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিনিয়োগে মন্দা, রপ্তানি আয় কমে যাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ নানা কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে অর্থনীতি। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা বাস্তবায়নে এনবিআর কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করছেন। আগামী ৩০ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরই নতুন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (করনীতি) মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী আমার দেশকে বলেন, এনবিআরের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এটির বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, সেটি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চেয়ারম্যান দেশে ফেরার পরই এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। লক্ষ্য অর্জনে নতুন করে করের বোঝা চাপবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে এ বিষয়ে মন্তব্য করা কঠিন।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, চলতি অর্থবছরের চার মাসে ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশের মতো হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোক্তা চাহিদা বাড়বে। এছাড়া শীতের সময় দেশের পর্যটন খাতেও গতিশীলতা তৈরি হবে। এতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়বে। নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর শঙ্কার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে নতুন লক্ষ্যমাত্রার খাতভিত্তিক বিভাজন করেছে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগ। আমদানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে ভ্যাট এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা করে। এ দুটি খাতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা করে। এর ফলে উভয় খাতে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৯৮০ কোটি টাকা করে।

এদিকে তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, বিগত একযুগেরও বেশি সময় ধরে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। এমনকি লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সংশোধন করা হলেও সেটি অর্জন করতেও ব্যর্থ হয়েছে রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি। বিগত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শুরুতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের মাঝপথে কাটছাঁট করে সে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। কিন্তু সে লক্ষ্য অর্জনেও ব্যর্থ হয় এনবিআর।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.০৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে

এক্সক্ল‍ু‍সিভ সিটি ব্যাংক মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড এলিট ক্রেডিট কার্ড চালু

আইবিসিএফ টাস্ক কমিটির ৪৩তম সভা অনুষ্ঠিত

তরুণদের কর্মসংস্থান ও নতুন ব্যবসা প্রসারে ইউসিবির প্রশিক্ষণ

আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে নতুন অধ্যাদেশ

২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু হবে

বর্ষসেরা সিইও পুরস্কার পেলেন ওয়ালটন মাইক্রো-টেকের নিশাত তাসনিম শুচি

ব্যাংকে অতিরিক্ত তার‌ল্য তিন লাখ কোটি টাকা

নভেম্বরের ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২১৩ কোটি ডলার

মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ পেল ইসলামী ব্যাংক