ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক ঋণ সুদহারের সীমা বেঁধে রাখা হয়েছিল। সরকার পতনের পর সেই সীমা তুলে দিয়ে বাজারমুখী করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় আমানতের সুদহার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। তাতে কিছু ব্যাংকে প্রচুর আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। এতে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে হয়েছে তিন লাখ ছয় হাজার ১১২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল এক লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে আগস্টের শেষে অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৩ কোটি টাকা। বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৯৫১ কোটি এবং বিদেশি ৯ ব্যাংকে ৩২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
গত আগস্টে ব্যাংকগুলোর তারল্য রাখার প্রয়োজন ছিল দুই লাখ ২৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। তবে কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাখায় ব্যাংক খাতে মোট তারল্য দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। প্রয়োজনের তুলনায় যা রাখা হয়েছে, তা হলো- অতিরিক্ত তারল্য। প্রয়োজনীয়তা স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ও ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বজায় রাখার পরে অতিরিক্ত তারল্য হিসাব করা হয়। ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর নগদ আকারে এবং ১৩ শতাংশ এসএলআর সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কেনার মাধ্যমে রাখতে হয়।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতের আর্থিক চিত্র সামনে চলে এসেছে। এতে কিছু ব্যাংকের অবস্থা নাজুক দেখা গেছে। আবার কিছু ব্যাংকের অবস্থা ভালো দিকে রয়েছে। সাধারণ মানুষ ভালো ব্যাংকগুলোয় তাদের সঞ্চয় জমা করছে। এতে ভালো ব্যাংকগুলোয় আমানত বাড়লে বিনিয়োগ করতে পারছে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উচ্চ সুদের কারণে কমে গেছে বেসরকারি খাতের ঋণ, সরকারও ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ দিতেও সতর্ক হয়ে গেছে কিছু ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, গত আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২ শতাংশ এবং ঋণে প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ওই সময় বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে হয়েছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত আগস্ট শেষে সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত তারল্য ছিল সোনালী ব্যাংকের, যার পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্র্যাক ব্যাংকের, ১৮ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা । তৃতীয় পূবালী ব্যাংকের, ১৮ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। চতুর্থ সর্বোচ্চ অগ্রণী ব্যাংকের, ১৮ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। শীর্ষ পাঁচে থাকা ব্যাংক এশিয়ার ছিল ১৭ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকের ১৬ হাজার ২২০ কোটি, যমুনা ব্যাংকের ১৪ হাজার ৮০১ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১২ হাজার ৫৫৩ কোটি, সিটি ব্যাংকের ১২ হাজার ৪৮১ কোটি এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ১২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত তারল্য থাকা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শওকত আলী আমার দেশকে বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ। গ্রাহক সেসব ব্যাংকের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। গ্রাহক তার জমানো টাকার নিরাপত্তা চায়। যে ব্যাংকে গ্রাহকের আস্থা রাখতে পারছে, সেখানেই টাকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে অনেক দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আমার ব্যাংকে রাখছে। এজন্য তারল্য খুব দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। তারল্য যত দ্রুত বাড়ছে, তত দ্রুত ঋণ দেওয়া কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ঋণ বাড়াতে একটু সময় লাগে। ভালো গ্রাহক নির্বাচন করতে হয়। ফলে তারল্য তুলনামূলকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ঋণ বাড়াতে না পারলেও এসব অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হচ্ছে। কারণ এসব টাকার ওপর আমাকে কিন্তু গ্রাহককে সুদ দিতে হচ্ছে। তাই আমি অগ্রাধিকার খাতের ঋণ দিচ্ছি। পাশাপাশি সরকারি সিকিউরিটিজ ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ করছি।
জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের এমডি কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম হওয়াতে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য বাড়ছে। যদিও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিনিয়োগ অবস্থাই রয়েছে।
তবে তারল্য নিয়ে সব ব্যাংকের পরিস্থিতি এক না। অনেক ব্যাংক প্রয়োজনীয় তারল্য রাখতে পারছে না। তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের তারল্য ঘাটতি তিন হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংকের তিন হাজার ২১৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। এছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংক এক হাজার ৭৩২ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক এক হাজার ১১৫ কোটি, বেসিক ৬৭৪ কোটি, ইউনিয়ন ৫৬২ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ৩৭৪ কোটি, পদ্মা ৩৬৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ৩২৫ কোটি, গ্লোবাল ১৩৮ কোটি এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক পাঁচ কোটি টাকার তারল্য ঘাটতিতে রয়েছে।


ভূমিকম্প আতঙ্কে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখতে কৌশল প্রণয়ন করছে ইসি
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ড