হোম > বাণিজ্য

শেয়ারবাজারে ফের আলোচনায় বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তি

কাওসার আলম

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন

শেয়ারবাজারে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির (ডাইরেক্ট লিস্টিং) বিষয়টি। বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি, বিশেষ করে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি ও বড় মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ থাকা উচিত। এছাড়া অর্থের প্রয়োজন নেই—এমন কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির জন্যও শেয়ারবাজার উন্মুক্ত করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোম্পানির জন্য একই ধরনের নিয়ম থাকাই বাঞ্ছনীয়। এর মাধ্যমে বাজারে শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) বিধিমালা, ২০২৫-এর খসড়া বিষয়ে অংশীজনদের পরামর্শ গ্রহণে সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) একটি বৈঠকের আয়োজন করে। সে বৈঠকে শেয়ারবাজারে বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া গত কয়েক মাস আগে ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) পক্ষ থেকে দেওয়া এক চিঠিতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। শেয়ারবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি আইপিও খসড়া আইনে বহুজাতিক ও বেসরকারি খাতের বৃহৎ কোম্পানিকে সরাসরি তালিকাভুক্তির সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বিএসইসির খসড়া আইপিও বিধিমালায় সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, আইপিও বিধিমালায় বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তিতে একটি হাইব্রিড মডেল চালুর জন্য বিএসইসিকে সুপারিশ করেছি। আইপিওতে যে শেয়ার ছাড়া হয়, তাতে কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তা সরাসরি লাভবান হন না। এখন যদি আইপিওতে সে শেয়ার ইস্যু করা হয়, তার একটি অংশ উদ্যোক্তা বা পরিচালকরা সরাসরি বিক্রি করতে পারেন, তাহলে তারা বাজারে আসতে উদ্বুদ্ধ হবেন। এতে বাজারে ভালো কোম্পানির শেয়ারের সরবরাহ বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিএসইসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেটি তুলে দেওয়া উচিত। একই বাজারে সরকারি কোম্পানির জন্য এক ধরনের বিধান আর বেসরকারি কোম্পানির জন্য ভিন্ন বিধান থাকলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। প্রয়োজনে আইন-কানুন পরিপালন এবং কোম্পানিগুলো যেন সঠিক তথ্য প্রদান করে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কোম্পানির প্রকৃত তথ্য জানার পর যদি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটি বিনিয়োগকারীর ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ডিবিএ সভাপতি।

আইপিওর খসড়া বিধিমালায় সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়টি না থাকার বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আমার দেশকে বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য লিস্টিং রেগুলেশন রয়েছে। সেখানে সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়টিও রয়েছে। কিন্তু বিএসইসি নির্দেশনা দিয়ে বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য সরকারি কোম্পানির জন্য এ সুযোগ রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আইপিও বিধিমালা হচ্ছে প্রাইমারি মার্কেটের জন্য। আর সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়টি সেকেন্ডারি মার্কেটের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুতরাং অনেকে না বুঝেই আইপিও বিধিমালায় সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয় না থাকার বিষয়ে সমালোচনা করছেন।

প্রসঙ্গত, সরাসরি তালিকাভুক্তি এমন এক পদ্ধতি, যেখানে কোম্পানি নতুন কোনো শেয়ার ইস্যু করে না। এ পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সরাসরি সেকেন্ডারি মার্কেটে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে অর্থ তুলে নেন; এতে কোম্পানির পুঁজির জোগান হয় না। বেসরকারি কোম্পানিগুলো সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিলেও কোম্পানির আর্থিক কোনো উন্নতি হয় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়া নিয়ে বড় ধরনের সমালোচনা তৈরি হলে ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ২০০৯ সালের জুনের দিকে বেসরকারি খাতের কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির সুযোগ রহিত করে। তারপরও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের চিঠির প্রেক্ষিতে বিএসইসির নির্দেশে সামিট গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল) ও ওশ্যান কনটেইনার লিমিটেড (ওসিএল) শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তিতে বাধ্য হয় ডিএসই।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দর বাড়িয়ে এ দুটি কোম্পানির উদ্যোক্তারা এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেন। বর্তমানে কেপিসিএল দুর্বল ‘জেড ক্যাটাগরি’তে অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে, ওসিএল পরবর্তীতে সামিট এলায়েন্স পোর্টের সঙ্গে একীভূত হয়। ফলে ওসিএল নামে কোনো কোম্পানি এখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান বর্তমানে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনী হিসেবে পরিচিত।

তবে ২০১৬ সালে বেস্ট হোল্ডিংস নামে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন এক পরিচালক (বর্তমানে প্রয়াত)। কোম্পানিতে সরকারের মালিকানার একটি অংশ থাকায় সে সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএসইর লিস্টিং রেগুলেশন, ২০১৫-এর ৮ থেকে ১৩ ধারায় সরাসরি তালিকাভুক্তির বিষয়ে বেসরকারি কোম্পানির জন্য যে বিধান রয়েছে, তা ২০১৬ সালে রহিত করে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম বলেন, এখন বিএসইসি যদি সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে বেসরকারি কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। সুতরাং এটি আইপিও বিধিমালার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়।

এদিকে বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্সের সুপারিশে আইপিও বিধিমালায় সরাসরি তালিকাভুক্তির সুপারিশ প্রসঙ্গে টাস্কফোর্সের সদস্য অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, এ বিষয়ে টাস্কফোর্স কি সুপারিশ দিয়েছিল, তা এখন পুরোপুরি মনে নেই। এখন বিএসইসি প্রয়োজন মনে করলে টাস্কফোর্সের সুপারিশের ওপর প্রয়োজনীয় সংশোধন করতেই পারে।

চলমান আস্থা ও তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু গত এক বছরের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে নতুন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি।

সেপ্টেম্বরে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৫ শতাংশ

বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে দৃশ্যত অগ্রগতি হয়নি

বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুকের মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ল

২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪.৬ শতাংশ বৃদ্ধি

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংককে চূড়ান্ত লাইসেন্সের অনুমোদন

বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

ইসলামী ব্যাংকের শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন সাফায়াত আরেফীন

আইএফআইসির খেলাপি ঋণ ১০ থেকে বেড়ে ৬১ শতাংশ

হাসিনাকে ‘১০০ কোটি ঘুষ’: ট্রান্সকম সিইও সিমিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক