ঢাকা গ্যাজেটিয়ার এবং ১৯৬০ সালের ঢাকা ম্যাপে রাজধানীর ভেতরে কনাই, নড়াই, দেবদোলাই, জিরানি প্রভৃতি নদীর অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এসব নদী হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া নদীগুলোর একটি কনাই নদীতে আবারও প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
এই হারিয়ে যাওয়া কনাই নদী উদ্ধার কার্যক্রমকে উদযাপন করতে আজ সোমবার দুপুরে উত্তরায় ডিএনসিসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘হারিয়ে যাওয়া কনাই নদী উদ্ধার উদযাপন অনুষ্ঠান’।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, পাউবোর বোর্ড মেম্বার ও পরিবেশকর্মী আমিনুর রসুল এবং পরিবেশকর্মী মিহির বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “আমরা হারিয়ে যাওয়া কনাই নদী উদ্ধার করে দেখিয়ে দিয়েছি যে চাইলেই ঢাকার ভেতরে ওয়াটারওয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সামনে যারা নগরের দায়িত্বে আসবেন, তাদের দায়িত্ব হবে এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নেওয়া।”
তিনি আরও বলেন, “ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কনাই নদী উদ্ধার করে নৌচলাচল উপযোগী ৯ কিলোমিটার নদীতে প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে ফিল্ড স্টাডি ও পরে উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।”
এসময় উত্তরা বাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস ডিএনসিসি প্রশাসকের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে হারিয়ে যাওয়া কনাই নদীর প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
উত্তরার তরুণ প্রতিনিধি রাসেল বলেন,“জুলাই আন্দোলনের পর আমরা পরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। খিদির খালের আগের অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছিলাম। এ খালে যেখানে হাঁটা যেত, সেখানে এখন নৌকা চলছে। এই পরিবর্তনে আমরা ভীষণ আনন্দিত।”
পাউবোর বোর্ড মেম্বার আমিনুর রসুল বলেন,“একসময় বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, যা কমে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারে নেমে এসেছে। আজ নতুন করে ৯ কিলোমিটার নৌপথ যুক্ত হলো। এখন এটি রক্ষা করার দায়িত্ব এলাকাবাসীর। নদীভাঙন রোধে ব্লক বা বাঁধ না দিয়ে নদীর পাড়ে গাছ লাগাতে হবে, তাহলে পরিবেশও সুন্দর হবে এবং ঢাকাবাসী এখানে ঘুরতে আসতে পারবে।”
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন,“আমরা থাইল্যান্ডে ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে যাই, অথচ ঢাকার চারপাশে থাকা নদীগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে এর চেয়েও সুন্দর পর্যটন এলাকা তৈরি করা সম্ভব।”
ডিএনসিসির উদ্যোগে আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নদী খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়দের কাছে এই নদীটি ‘খিদির খাল’ নামে পরিচিত। উদ্ধার হওয়া কনাই নদীটি আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে গড়ান চটবাড়ি হয়ে দ্বিগুণ খাল অতিক্রম করে তুরাগ নদীতে মিলিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এবিএম শামসুল আলম সহ ডিএনসিসির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।