চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রক্টর অফিসের প্রবেশমুখের দেয়ালে লেখা একটি কুরআন আয়াত মুছার প্রতিবাদের জেরে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আলমাস মাহফুজ রাফিদ। এ সময় হামলাকারীরা ইট ও লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে গুরুতর জখম করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আলমাস মাহফুজ রাফিদ। অভিযোগটি গ্রহণ করেন সহকারী প্রক্টর সাইদ বিন কামাল।
এর আগে বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদলের নেতাকর্মী কর্তৃক আলমাসকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়—৮ থেকে ১০ জন লাঠি দিয়ে তার মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করছে।
লিখিত অভিযোগে আলমাস জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেলস্টেশনে অবস্থানকালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিল্পী রশিদ চৌধুরী হলের ভিপি আল মাশরুর ফাহিম, নূর সানি ও শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জমাদিউল আউয়াল সুজাত তাকে হুমকি দেন। প্রক্টর অফিসের দেয়ালে লেখা কুরআনের আয়াত মুছার প্রতিবাদের জেরেই এই হুমকি দেওয়া হয়।
পরে রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে ২ নম্বর গেটে গেলে ওই তিনজনসহ রেদোয়ান, আরিফ, মেহেদী এবং অজ্ঞাত আরও ২০–৩০ জন তাকে ঘেরাও করে মারধর করে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা শাখা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মামুন উর রশিদের অনুসারী।
আলমাসের দাবি, তারা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় অসংখ্যবার লাঠি দিয়ে আঘাত করে। সুজাত ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে আমার মাথা ফেটে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান বলেন, আমি রাতে চা খেতে বের হয়েছিলাম। পরে ঝামেলা দেখে থামাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আমার নাম অভিযোগে দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগের চেষ্টা করেও সুজাত ও আল মাশরুর ফাহিমের সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তারা অন্য গণমাধ্যমকে দাবি করেছেন, মারধরের অভিযোগটি মিথ্যা। এটি চারুকলার অভ্যন্তরীণ বিষয়। নিজেদের বিভাগের ঝামেলা থেকেই হাতাহাতি হয়েছে।
ফাহিম আরো দাবি করেন, আলমাসের বিরুদ্ধে বিভাগে একাধিক অভিযোগ রয়েছে এবং চলমান তদন্ত নিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে তার তর্ক-বিতর্ক থেকে ঘটনাটি ঘটে। পরে অবস্থানকারীরা ‘গণপিটুনি’ দেয় বলে জানান তিনি।
সহকারী প্রক্টর সাইদ বিন কামাল বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি বোর্ড অফ রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল মাসুম বিল্লাহর নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।