পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পদোন্নতিতে অনিয়ম, আর্থিক সমন্বয়হীনতা ও ঘুস–দুর্নীতির মতো অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার কর্মকর্তা এবং বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদেরও নির্বাহী সদস্য।
জানা যায়, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নিজাম উদ্দিন সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল- এই পদে নিয়োগ পেতে শিক্ষাজীবনে অন্তত একটি প্রথম শ্রেণি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সৈয়দ নিজামের শিক্ষাগত রেকর্ডে কোনো পর্যায়েই প্রথম শ্রেণির ফল নেই। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন আওয়ামী লীগপন্থি কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ঘুস দিয়ে তিনি নিয়োগ লাভ করেন।
২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ডের সুপারিশ এবং একই বছরের ৪ জুন রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে (বর্তমান বিজয়-২৪ হল) তাকে সেকশন অফিসার (গ্রেড–৯) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অস্বাভাবিক পদোন্নতিরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা জানান, সরকারি পর্যায়োন্নয়ন নীতিমালা অমান্য করে মাত্র চার বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাছাই বোর্ড ও রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত দেখিয়ে তাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (গ্রেড–৫) হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ পদোন্নতির জন্য লোকদেখানো এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অর্থ ও হিসাব শাখায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সৈয়দ নিজাম ব্যক্তিগতভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন—এমন অভিযোগও করেছেন বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তাদের দাবি, তিনি পটুয়াখালীর বনানী এলাকায় বিলাসবহুল জমি কেনাসহ জৈনকাঠি গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করেছেন, যার উৎস ব্যাখ্যা করতে পারেননি তিনি। হিসাব সংক্রান্ত যে কোনো কাজে গেলে নিজাম অর্থ দাবি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিজাম বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফজাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে তিনি প্রশাসনে দীর্ঘদিন অনৈতিক প্রভাব ধরে রেখেছিলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি বদলালেও বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখে অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি অভিযোগকারীদের।
নথিপত্রে আরো পাওয়া গেছে—নিজাম তার পছন্দের কয়েকজন শিক্ষককে বেতনের সঙ্গে অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত ভাতা প্রদান করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোন কমিটির সদস্য হিসেবে নিজের অবস্থান ব্যবহার করে গৃহনির্মাণ ঋণ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষক–কর্মকর্তার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক নেই, তাদের বেতন ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট ২০২৪–এর পর তাকে হল প্রশাসন থেকে হিসাব শাখায় পুনরায় নেওয়ার চেষ্টা হলে তিনি গোপনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে আগের অবস্থানেই বহাল থাকেন।
অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ নিজাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে আমার ফাইল সব আছে, আমার বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করেন তারাই ভালো বলতে পারবে। আমার পদোন্নতিতে কোনো অনিয়ম কিংবা আমি কোনো দুর্নীতি করলে সেটার যদি প্রমাণ পায় প্রশাসন, আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেবে আমি তা মেনে নেব।
এ সময় শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তার ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট আছে কি না, থাকলেও কোন কোন পর্যায়ে–এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি এ বিষয়েও রেজিস্ট্রার দপ্তর ভালো বলতে পারবে বলে জানান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস বলেন, সৈয়দ নিজামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগসমূহের ব্যাপারে আমরা দুদক সদর দপ্তরকে অবহিত করব। অভিযোগের সুনির্দিষ্টতা থাকলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা.) অধ্যাপক ড. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, সৈয়দ নিজামের পদোন্নতিতে যদি কোনো অসামঞ্জস্যতা থাকে তবে সে বিষয়ে আমরা খোঁজ নেব। তদন্ত অনুসারে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগগুলো নিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে আলোচনা করব। পদোন্নতির আইনের লঙ্ঘন কিংবা দুর্নীতির প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।