বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার পর রাজধানীর পূর্বাচলে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে স্থাপিত গণসংবর্ধনা মঞ্চ থেকে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা দেখা গেছে বিএনপিপন্থি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গন এবং শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির তারকাদের মধ্যেও কমতি ছিল না সেই উচ্ছ্বাসের। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। পোস্টে বাঁধন লেখেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে দেশ শোক, অবিচার ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে গেছে। এমন বাস্তবতায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন তার মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।’ পাশাপাশি তারেক রহমানের রাজনৈতিক আচরণ ও ব্যক্তিগত ব্যবহারেরও প্রশংসা করেন অভিনেত্রী।
বাঁধনের ভাষ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের কথাবার্তায় অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব, স্ত্রী ও কন্যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আনুষ্ঠানিক আসনে না বসে সাধারণ প্লাস্টিকের চেয়ারে বসার বিষয়টি তাকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে। এমনকি পরিবারের পোষা প্রাণীর প্রতিও যে স্নেহ প্রদর্শন করা হয়েছে, সেটিকে তিনি সহমর্মিতা ও নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। ফেসবুক পোস্টে বাঁধন আরো লেখেন, ‘রাজনীতিতে ছোট আচরণ অনেক সময় বড় বার্তা দেয়।’ তার মতে, ‘দেশ এমন নেতৃত্বের যোগ্য—যারা শাসন নয়, সেবার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
তারেক রহমানের প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্টে অভিনেতা খায়রুল বাসার লেখেন, ‘স্বাগত বাংলাদেশে। একইসঙ্গে এই ফেরার মধ্য দিয়ে দেশে শান্তি ফিরে আসুক। বাংলার শিশিরভেজা ঘাসের স্পর্শে আপনার অন্তর শীতল হোক। আর আপনার নেতৃত্বে এ দেশে শান্তি ফিরুক। আপনি সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং বাংলার মানুষের আস্থা হয়ে থাকুনÑএই দোয়া রইল। যখন মানুষ আপনার হাতে দেশের দায়িত্ব তুলে দেবে, সেদিন থেকে আপনার সব ভালো কাজের স্তুতি করতে না পারলেও অসংগতির প্রতি ভরপুর সমালোচনা করব।’
এদিকে অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক লেখেন, ‘আমি আলোচনা-সমালোচনা করতেই থাকব একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে। কারণ, নীরবতা কখনো দেশ গড়ে না।’ তবে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে লেখেন, ‘তারেক রহমান, আপনাকে আপন ঘরে স্বাগতম। আমরা খুব খুশি আপনাকে ফিরে পেয়ে।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছোটপর্দার অভিনেতা সাঈদ জামান শাওন তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে এক খোলা চিঠি লিখেছেন, ‘চারপাশে চাটুকার মানুষ থেকে সতর্ক থাকুন। শুধু অভিজাতদের নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও থাকুন। ফাঁকা প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের মাধ্যমে কথা বলুন। আপনি ভালো করছেন; এভাবেই এগিয়ে চলুন।’ চিঠিতে দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরে যারা বিশৃঙ্খলা করে বা দুর্নীতি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। এতে জনগণের আস্থা আরো বাড়বে।’
তরুণ সমাজের ভাবনা নিয়ে শাওন বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম কোনো নির্দিষ্ট ‘মার্কা’, ‘নেতা’ বা ‘দল’-এর প্রতি অন্ধভাবে অনুগত নয়। আপনি সঠিক হলে তারা আপনার পাশে থাকবে, ভুল হলে সমালোচনা করবে।’ এ ছাড়া তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সংগ্রাম, বাবা হারানোর বেদনাসহ আরো অনেক বিষয়ে কথা বলেন তিনি। চিঠির শেষে তারেক রহমানকে ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর স্থপতি হিসেবে আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘দেশে আপনাকে স্বাগতম, স্যার।’ তারেক রহমান বক্তব্য শুনে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও লেখক লুৎফর হাসান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পুরো বক্তব্য শুনলাম। বাপের গীত নাই। বংশের গীত নাই।’
‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ গানের এই শিল্পী বলেন, ‘আমি আমি, আমার আমার বলা জাহির নাই। প্রতিপক্ষের প্রতি তীব্র ঘৃণা নাই। শুধু দেশ গড়ার উদাত্ত আহ্বান আছে। সাথে আছে হাদি এবং অন্য শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ।’ লুৎফর হাসান বলেন, ‘আজকের এই বক্তব্য ইতিবাচক স্বপ্নের ইঙ্গিত দেয়। আজকের এই বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় দেশটা কারো বাপের না, গোষ্ঠীর না। দেশটা একান্ত জনগণের। স্যালুট, প্রিয় তারেক রহমান।’
তবে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় হাজির হওয়া বিপুল জনস্রোত নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে মন্তব্য করেছেন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আবু হেনা রনি। তারেক রহমানের জনসভায় মানুষের ভিড়ের বিষয়টি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিনটির সঙ্গে রসিকতার ছলে তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা। রনি তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এরচেয়ে বেশি লোক হয়েছিল আমাদের নেত্রীকে বিদায় দিতে!’ তার এই মন্তব্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে গত বছরের ৫ আগস্টের ঘটনাকে। সেদিন গণআন্দোলনের মুখে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং দেশ থেকে পালিয়ে যান। ওই সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গিয়েছিল, সে বিষয়টিই রনি রম্য করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। রনির এই স্ট্যাটাস মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। মন্তব্যের ঘরে নেটিজেনদের নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ এটিকে সময়োপযোগী রাজনৈতিক ব্যঙ্গ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন রনির রসিকতায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন ফুটে উঠেছে।