দেশীয় মঞ্চনাটকে এতদিন ধরে একক অভিনয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র নারী শিল্পীকেই দেখা গেছে। তবে এবার সেই রীতি এবার ভেঙেছে নাট্যগোষ্ঠী বিবেকানন্দ থিয়েটার। মঞ্চে এনেছে নাট্যশিল্পী মো. এরশাদ হাসান-এর একক অভিনয়ে নতুন নাটক 'ভাসানে উজান'। এটি দলের ২৫তম প্রযোজনা।
দস্তয়ভস্কির ছোটগল্প ‘দ্য জেন্টেল স্পিরিট’ অবলম্বনে নাট্যকার অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ, শুভাশীষ দত্ত তন্ময় এর নির্দেশনা এবং অভিজ্ঞ নাট্যশিল্পী মো. এরশাদ হাসান-এর একক অভিনয়ে নাটকটি নির্মাণ করা হয়েছে।
নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের একক অভিনয়ের পথিকৃৎ, বহুমাত্রিক অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার।
দস্তয়ভস্কির দ্যা জেন্টেল স্প্রিরিট গল্প অবলম্বনে নাটক ‘ভাসানে উজান’। ভাসানে উজান নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রের আসরাফ বোয়ারি অতীতে নাট্যদল ভাসানে উজান এর দলীয় প্রধান, কিন্তু বর্তমানে তিনি চা বাগানের একজন বন্ধকের কারবারি। অসংখ্য কাস্টমারের ভীড়ে একজন বন্ধকের কাস্টমার সাবরিনা। বন্ধকের জিনিস আনা নেওয়ার মাঝে নিজের কণ্ঠকময় জীবন থেকে পরিত্রাণ পাওয়া, নেশাখোর ও নারী লোলুপ জব্বর খন্দকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া, দরিদ্র রূপ ব্যাধি থেকে একটু সচ্ছল জীবনের আশায় সাবরিনা সুরক্ষা চায় বন্দকের কারবারি আশরাফ বোয়ারীর কাছে। আশরাফ বোয়ারী নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সাবরিনাকে সুরক্ষা দিতে সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে বিয়ে করে সাবরিনাকে এবং সাবরিনা ব্যক্তি জীবনে পায় সুরক্ষা। কিন্তু খরা কেটে বানের ডাক আসলে নদী উপচিয়ে যেমন দুকূল প্লাবিত হয়ে খাল-বিল-হাওড় সব তলিয়ে দেয় তেমনি উত্তলা হয় সাবরিনা। ফলে ভুল বোঝাবুঝি হয় আশরাফ- সাবরিনা দম্পতির মাঝে। অতীত ভুলে যাওয়ার মোহ, অহমিকার ক্রোধ আর আত্মগ্লানির অনুশোচনায় এক সময় আত্মহত্যা করে বসে সাবরিনা। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা মৃত স্ত্রী সাবরিনার পাশে বসে গভীর রাতে বিপন্ন- নি:স্ব- অসহায় স্বামী আশরাফ বোয়ারী আপন মনে কথায় কথায় হিসাব-বেহিসাবীর কথার নকশা বুনন করে চলে। সে শেষ পর্যন্ত উত্তর মেলাতে পারে না যে, একজন মানুষ সত্যিকারে ভালো হয়ে শেষ পর্যন্ত কি ভালো থাকতে পারে। এই অমীমাংসিত উত্তর খোঁজার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় নাটক ভাসানে উজান। হৃদয়ে রক্তক্ষরণের নাটক ভাসানে উজান।
ভাসানে উজান নাটকের একক চরিত্রাভিনেতা মো. এরশাদ হাসান প্রায় দুই দশকের বেশি সময় নিয়ে মঞ্চে দাপিয়ে অভিনয় করে চলেছেন। কাজের ব্যাপ্তি ও প্রসারের কারনে একটি একক অভিনয়ের নাটক তুলে ধরা ও তুলে রাখা তার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। সে প্রয়োজনে আমরা সমবেতভাবে সাড়া দিয়ে যে এগিয়ে চলেছি সেটি আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধননামা। তবে আশরাফ বোয়ারীর সান্ত্বনাহীনতার বেদনা যেন সে কোন অবস্থায় না ভোলে, এটুকু ছিল বন্ধুত্ব পূর্ণ নির্দেশনার মর্মমূলের মূল কথা।