সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আসা যাত্রা দলগুলোর অংশগ্রহণে গতকাল থেকে শুরু হলো বিজয়ের মাসজুড়ে যাত্রাপালা প্রদর্শনী।
গতকাল সোমবার, বিকাল ৫টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল ফটকে মাসব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মাসব্যাপী যাত্রাপালা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরেণ্য কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিভিন্ন গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি রয়েছে। নন্দনমঞ্চে গত দুই ঈদের এবং বুদ্ধ পূর্ণিমার অনুষ্ঠান আয়োজনসহ সোহরাওয়ার্দী মুক্তমঞ্চে দুর্গাপূজা উৎসব আমরা আয়োজন করেছি। আমরা যখন কোনো অনুষ্ঠান করি সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়কে যুক্ত করি। আমরা একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে এদেশে বসবাস করতে চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক বরেণ্য কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (রেজাউদ্দিন স্টালিন) বলেন, ‘হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত যাত্রাশিল্প শুধমাত্র বিনোদন নয়, একটা শিক্ষা থাকে। যাত্রায় রাজা, নায়ক কিংবা মূল চরিত্র যখন কোনো ভুল পথে পরিচালিত হয় তখনই হঠাৎ করে একজন মানুষের আবির্ভাব হয় তার নাম হচ্ছে বিবেক। বিবেক এমন একটি গান করে রাজা বা নায়ক তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে সৎপথে ফিরে আসে। যাত্রায় সামাজিক অনাচার, দুর্বৃত্তায়ন, সামাজিক বৈষম্য, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য যাত্রাশিল্প একটা অনেক বড় জায়গা দখল করে আছে।’
উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয় ‘মৃত্যুর চোখে জল’। যাত্রা পালাটি মঞ্চায়ন করে পাইকগাছা খুলনার ‘সূর্যতরুণ নাট্য সংস্থা’। পালাটির পালাকার হিসেবে রয়েছেন দেবেন্দ্রনাথ এবং পরিচালনায় রয়েছেন প্রণব মন্ডল। যাত্রাদলের মালিক হিসেবে রয়েছেন গোপাল বৈরাগী।
এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রনব মন্ডল, নীপা রানী, দেবব্রত বাইন, সুকুমার সর্দার, স্বপন কুমার মন্ডল, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, সুকুমার বিশ্বাস, উজ্জ্বল রায়, রিপন মিস্ত্রি, ব্রজেন বালা, রমেশ সানা, লিজা আক্তার, সবিতা রানী ও সঞ্চিতা রানী প্রমুখ।
আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬:৩০ টা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে এই যাত্রাপালা প্রদর্শনী চলবে। মাসব্যাপী এই যাত্রাপালা প্রদর্শনীতে ৩১টি যাত্রাদল ৩১টি যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করবে।
যাত্রাপালা প্রদর্শনীর টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রদর্শনীর টিকেট বিক্রি হতে প্রাপ্ত অর্থ সংশ্লিষ্ট যাত্রাদলকে প্রদান করা হবে।
এছাড়াও প্রতিদিন বিকেল ৫ টা থেকে জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে থাকছে দেশাত্মবোধক যাত্রাগানের কনসার্ট। উল্লেখ্য, প্রতিদিনের প্রদর্শিত যাত্রাপালাগুলো জুরি বোর্ডের বিচারকদের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।