রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ঐতিহ্যবাহী শেরে বাংলা হল এখন শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের নাম। হলের দেয়াল ও ছাদে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা, বৃষ্টির দিনে পানি ঝরছে কক্ষজুড়ে। পুরোনো এই ভবনটি এখন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অথচ প্রশাসন থেকে আশ্বাস মিললেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দিন কাটছে শিক্ষার্থীদের।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে ছাদ বেয়ে পানি পড়ে। হঠাৎ হঠাৎ ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে। একাধিকবার হল প্রশাসনকে তারা জানিয়েছেন, দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কখনো কখনো হলের ওয়াশরুমে সাপ ঘুরতে দেখা যায়। হলটি বসবাসের অনুপযুক্ত হওয়ার কারণে এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকায় নবনির্মিত নতুন হলে ছেলেদের স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, হলটিতে বিভিন্ন ব্লকের দেয়াল, ছাদে ফাটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে পড়ার ক্ষত দেখা যাচ্ছে ছাদে। ওয়াশরুম ও বেসিনেরও নাজুক অবস্থা। পিলারগুলোতেও ফাটল দেখা যাচ্ছে।
হল প্রশাসন জানিয়েছে, হলের অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তারা অবগত। সমস্যাগুলো একদিনে হঠাৎ করে শুরু হয়নি। সমস্যাগুলো অনেক আগে থেকেই ছিল। তবে বিষয়গুলো তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। টেন্ডার পাস হয়ে কাজও শুরু হয়ে গেছে। খুব শিগগির সমস্যার সমাধান হবে।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রনি আহমেদ বলেন, আমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, না আতঙ্কে বাঁচতে? শেরে বাংলা হলের ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ে। ভয় নিয়ে থাকতে হয়, কখন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ওয়াশরুম নোংরা, খাবারের মান খারাপ, পানির সংকটও নিয়মিত। এমন পরিবেশে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব।
এ বিষয়ে হল সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) রানা হোসাইন বলেন, হলের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। পাঁচ বছর আগেই এটি বাসযোগ্যতার সময়সীমা অতিক্রম করেছে। বারবার মেরামত করেও লাভ নেই। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি—এই হলে আর থাকতে চাই না, দ্রুত অন্য হলে স্থানান্তর করতে হবে।
কেন্দ্রীয় সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) এস. এম. সাব্বির বলেন, শেরে বাংলা হল এখন সম্পূর্ণ বসবাসের অনুপযোগী। ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে, ভবনের কাঠামোও দুর্বল হয়ে গেছে। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে দ্রুত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি।
রাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হল ও মন্নুজান হলের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত করুণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এই দুই হলের ভবন এখন আর সংস্কারের উপযুক্ত নয়। আমাদের মতে, এই ভবনগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নতুন ভবন নির্মাণই একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান। আমরা প্রথম অধিবেশনে বিষয়টি দৃঢ়ভাবে উপস্থাপন করব। নির্মাণাধীন নতুন ছেলেদের হলে শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থীদের এবং নির্মাণাধীন নতুন মেয়েদের হলে মন্নুজান হলের শিক্ষার্থীদের দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে ভাইস চ্যান্সেলর, চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ আমরা সবাই অবগত আছি। হলের উপরতলাসহ যেসব জায়গায় পলেস্তরা খসে পড়ছে এবং এর পাশাপাশি অবকাঠামোগত অন্য যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে—সেসব কাজের জন্য টেন্ডার পাস হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে তিনটি পৃথক টিম কাজ শুরু করেছে। সমস্যাগুলো আসলে একদিনেই হঠাৎ করে শুরু হয়নি; অনেক আগে থেকেই এই সমস্যা। কাজ চলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলে আশা করি।