হোম > ফিচার

খিলাফত রাষ্ট্রের প্রাদেশিক শাসনকর্তা

মাহমুদ আহমাদ

হিজরতের পরে আল্লাহর রসুল মদিনায় একটি স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মদিনা রাষ্ট্রের একক কার্যনির্বাহী ছিলেন এবং রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিচার ও ফয়সালার দায়িত্ব একাই পালন করতেন। কখনো কখনো তিনি সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেও কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করতেন।

যখন কোনো যুদ্ধ বা ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি মদিনার বাইরে যেতেন, তখন সাহাবিদের মধ্য থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করতেন এবং মদিনা রাষ্ট্রের সার্বিক দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেন। নবীজি ﷺ এই বিষয়ে অনমনীয় ছিলেন, কারণ তিনি চাইতেন না, কোনো কারণে মদিনার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হোক। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মদিনার বাইরে গেলেও তিনি সর্বদা একজন সাহাবিকে নায়েব ও স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্বশীল রাখতেন।

হুদাইবিয়া সন্ধি ও মক্কা বিজয়ের পরে মদিনা রাষ্ট্রের পরিধি যখন বৃদ্ধি পেতে শুরু করল, রাষ্ট্রের সীমানা মদিনার বাইরেও বিস্তৃত হলো, তখন তিনি শাসনকাঠামোকে বিন্যাসে মনোযোগী হলেন। মদিনা থেকে দূরবর্তী অঞ্চলগুলোয় তিনি প্রশাসক, বিচারক ও শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য দায়িত্বশীলদের নিয়োগ দিলেন। নির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে কখনো কখনো গোত্রকেন্দ্রিক প্রশাসকও তিনি নিযুক্ত করেছিলেন। মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) ছিলেন সে সময়ের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ প্রশাসক।

নবীজি (সা.)-এর ইন্তেকালের পরে মদিনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এবং প্রতিষ্ঠা করেন খিলাফত রাষ্ট্র। তিনি ১৩২ থেকে ১৩৪ সন পর্যন্ত মাত্র ২৭ মাস রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ে রাষ্ট্রের মজবুত কাঠামো ও ভিত্তি স্থাপিত হয়। শক্তিশালী প্রশাসনিক বিন্যাস ও প্রাদেশিক গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণে সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন।

আবু বকর (রা.)-এর শাসনকালে খিলাফত রাষ্ট্রের পরিধি অনেকখানি বিস্তৃত হয়েছিল। খিলাফতের কার্যক্রম হিজাজ, নজদ, ইয়েমেন ও বাহরাইন ছাড়িয়ে ইরাক ও বৃহত্তর শামের অভ্যন্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। জিহাদের কার্যক্রম সুবিন্যস্ত পন্থায় অব্যাহত থাকায় রাষ্ট্রের সীমানা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাঁর শাসনকালে খিলাফত রাষ্ট্র সাতটি প্রদেশে বিন্যস্ত ছিল—হিজাজ, নজদ, বাহরাইন, ওমান, ইয়েমেন, ইরাক ও শাম। এসব প্রদেশে প্রায় ২০ জন প্রশাসক ও গভর্নর নিযুক্ত ছিলেন। তারা হলেন—

হিজাজ : (মদিনা বাদে) এই অঞ্চলে দুজন প্রশাসক নিযুক্ত ছিলেন। মক্কায় ছিলেন আত্তাব ইবনে আসিদ ইবনে আবুল ঈস; তাঁকে আল্লাহর রসুল (সা.) মক্কার গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁর নিয়োগকে বহাল রেখেছিলেন। (ফুতুহুল বুলদান, পৃষ্ঠা : ১১৫।) আর তায়েফের প্রশাসক ছিলেন ওসমান ইবনে আবুল আস (রা.)। তাঁকেও নবীজি (সা.) শাসনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ ছাড়া হিজাজের অন্য অঞ্চলটি হলো মদিনা। মদিনা থেকে আবু বকর (রা.) খিলাফতের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তাই সেখানে স্বতন্ত্র কোনো প্রশাসক ছিল না।

বাহরাইন : নবীজি (সা.)-এর জীবনকালে বাহরাইন মুসলিম শাসনের অধীনে এসেছিল। নবীজি (সা.) সেখানে আলা ইবনে হাজরামিকে পাঠিয়েছিলেন। আবু বকর (রা.) তাঁকে স্বপদে বহাল রাখেন। (তারিখু খলিফা ইবনে খাইয়াত, পৃষ্ঠা : ১২২)

ওমান : ধর্মদ্রোহীদের দমনের পরে আবু বকর (রা.) হুজাইফা ইবনে মুহসিনকে ওমানের শাসনের দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল শাসনের সার্বিক বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা, জাকাত উত্তোলন করা ও হকদারদের মধ্যে বণ্টন করা এবং চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমদের থেকে জিজিয়া কর সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠানো। (তারিখে ইয়াকুবি, খণ্ড : ২, পৃষ্ঠা : ১৩৮)

নজদ : আবু বকর (রা.)-এর শাসনকালে নজদের শাসনকাঠামো মূলত গোত্রনির্ভর ছিল। তাই সামুরা ইবনে আমর আম্বারিকে সেখানের গভর্নর নিযুক্ত করা হলেও গোত্রভিত্তিক কয়েকজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.)-কে হাওয়াজিন গোত্রের জাকাত উত্তোলনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ানকে তাইমা গোত্রের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।

ইয়েমেন ও হাজরামাওত : এই অঞ্চল দুটি নবীজি (সা.)-এর সময়ে স্বতন্ত্র প্রদেশ ছিল। তিনি প্রদেশ দুটিকে ছোট ছোট প্রশাসনিক অঞ্চল বা জেলায় বিভক্ত করেছিলেন এবং প্রতিটি জেলায় প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছিলেন। আর তাদের সবার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)-কে সেখানে পাঠিয়েছিলেন।

আবু বকর (রা.)-এর শাসনকালেও ইয়েমেন ও হাজরামাওত একাধিক জেলায় বিভক্ত ছিল এবং স্বতন্ত্র প্রশাসকের অধীনে পরিচালিত হতো। সে সময় সানআর শাসক ছিলেন মুহাজির ইবনে আবু উমাইয়া (ফুতুহুল বুলদান, পৃষ্ঠা : ১১৪); হাজরামাওতের দায়িত্ব পালন করতেন জিয়াদ ইবনে লাবিদ। (তারিখে তাবারি, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ২৭০)।

ইরাক : ধর্মদ্রোহীদের দমন করার পরে খলিফা আবু বকর (রা.)-এর অনুমতিক্রমে মুসাননা ইবনে হারিসা (রা.) ইরাক আক্রমণ করেন। এরপরে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) ইরাক অভিযানের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। সে সময় তিনিই ছিলেন ইরাকের বিজিত অঞ্চলের শাসক এবং প্রধান সেনাপতি। তিনি একেকটি অঞ্চল জয় করে একজনের হাতে শাসনভার তুলে দিতেন এবং নিজে নতুন অঞ্চল জয় করতে এগিয়ে যেতেন। খালিদ (রা.) যাদের শাসনভার প্রদান করেছিলেন, তাদের দুজন হলেন—জাবরেকান ইবনে বদর (আম্বার); ইয়াজ ইবনে গানম (হিরা)।

১২ হিজরিতে খালিদ (রা.) শামে চলে এলে মুসাননা ইবনে হারিসা ইরাকে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন।

শাম : আবু বকর (রা.)-এর শাসনকালে বৃহত্তর শামের কিছু অংশে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। তখন একজন সেনাপতিই প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতেন। সে হিসেবে হোমসের শাসক ছিলেন আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (ফুতুহুশ শাম, আজদি, পৃষ্ঠা: ৭), শুরাহবিল ইবনে হাসানাহ ছিলেন জর্দানের শাসক, দামেশকের শাসক ছিলেন ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান আর ফিলিস্তিনের শাসক ছিলেন আমর ইবনুল আস। (আবু বাকর আছ ছিদ্দীক, পৃষ্ঠা: ৩৩৫)

ম্যানুয়ালি ভোট গণনাসহ দুই দফা দাবি জবি ছাত্রদলের

শুকনো নাকি ভেজা, কীভাবে উপকার চিয়া সিডের

ঘরের কাজকে সহজ করে দেবে ‘হোম রোবট’

শহীদ হাদি, আবরার ও ফেলানীর নামে হলের নামকরণ দাবি

জকসু নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের

৯ দিনের শীতকালীন ছুটি পাচ্ছেন জাবি শিক্ষার্থীরা

সংবেদনশীল স্থানে ভ্রমণ

‘নতুন বছর হোক ঘুরে দাঁড়ানোর বছর’

স্বপ্নগুলো ফলবতী হোক

জবি শিক্ষার্থীদের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটাব