কাকের ছোট্টবাচ্চাটি থাকে ওর মায়ের সঙ্গে। কদমগাছের মাথার ওপর ওদের বাসা। কদমগাছটা রেলস্টেশন মাঠের পশ্চিম কোণে। আশপাশে আর কোনো গাছ নেই। কদমগাছটি কারও সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে না। এ জন্য ওর মন খারাপ থাকে। ইচ্ছে করে হেঁটে হেঁটে দূরে কোনো গভীর বনে চলে যেতে।
হাত-পা মাটির অনেক গভীরে চলে গেছে বলে সেই উপায়ও নেই। সে শুধুই ভাবে, তার মতো আর একটাও গাছ নেই। কেন নেই? সে ভীষণ অবাক হয়। ভেবে পায় না কোথা থেকে এখানে এসেছিল? কে তাকে এখানে একা রেখে গেছে? তার মা, বাবা, ভাই বোনরা কোথায়? কত দূরে আছে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে কদমগাছটি আকুল হয়ে পড়ে।
মায়ের কথা মনে পড়তেই তার খুব কান্না পায়। কিন্তু সে মন খুলে কাঁদতেও পারে না। কাঁদলে যদি কাকের ছোট্ট বাচ্চাটির ঘুম ভেঙে যায়।
কদমগাছটি এত দিন একদম একাই ছিল। কদিন আগে তার মাথার ওপর কাক বাসা বেঁধেছে। তখন সে ভেবেছিল এবার কথা বলার মতো কাউকে পেল। কিন্তু কদিনেই তার ভুল ভাঙল। কাকটি সারা দিন শুধু মন খারাপ করে বসে থাকে, হঠাৎ হঠাৎ কাকা করে ওঠে। অথচ চড়ুই, দোয়েল, শালিক, টিয়ে সারা দিন কেমন নেচে নেচে বেড়ায়, শিস দেয়, গান গায়। কিচিরমিচির করে কত যে কথা বলে। খুব ভালো লাগে ওর। কদিন যেতেই কাকের বাসায় বাচ্চার গলা শোনা গেল।
কদমগাছের খুব আনন্দ হলো। সে লুকিয়ে লুকিয়ে কাকের বাসায় উঁকি দেয়, দেখলÑফুটফুটে দুটি কাকের ছানা। আহা, কত সুন্দর! কদমগাছের ইচ্ছে করে বাচ্চা দুটোর ঠোঁট ধরে একটু আদর করে। এ সময় মা কাকটি বাসায় ফিরে এলো।
কদমগাছটি আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তা তোমার বাচ্চাদের নাম-টাম কিছু কি রেখেছো?’
মা কাক বিরক্তি ও তাচ্ছিলের সুরে জবাব দেয়, ‘কাকের বাচ্চার আবার নাম! ময়না, টিয়া, শালিক হলেও কথা ছিল...।’ বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল মা কাকের। সে তার বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে লাগল।
কদমগাছটি তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘এমন করে ভাবছো কেন? তুমি কী জানো না যে, কাক হলো কালো তবু কাক ভালো।’
মা কাক সঙ্গে সঙ্গে কড়া ভাষায় জবাব দেয়, ‘হেই কদম