রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ১৭টি আবাসিক হলে স্থাপিত সবগুলো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এমনকি অনেক হলে যন্ত্রগুলোর গায়ে মেয়াদ বা উৎপাদনের তারিখও লেখা নেই। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেগুলো ব্যবহারের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।
তবে শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তাজনিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একেবারেই উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুই মাস আগে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও এ বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে জানায় প্রশাসন। এতে ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়। যন্ত্রগুলোর মেয়াদ চলতি বছরের ২ অক্টোবর শেষ হলেও সেগুলো সরিয়ে নতুন করে কোনো যন্ত্র স্থাপন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর ঠিকই মেয়াদ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার সময় মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, ১৭টি হলে প্রায় ১২ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী বসবাস করেন। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার এমন অবহেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক ভবনকে সুরক্ষার আওতায় রাখা হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিবর্তন করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান জানান, আবাসিক হলগুলোয় স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো তুলনামূলক পুরোনো এবং এগুলোর গায়ে কোনো মেয়াদ বা উৎপাদনের তারিখ লেখা নেই। ফলে জরুরি সময়ে এগুলো কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ ও আতঙ্ক রয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। যদি কখনো আগুন লাগে, এগুলো দিয়ে কাজ হবে না। এটা ভেবে ভয় লাগে।
হলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি। তাই দ্রুত নতুন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ভয়াবহ ও বেদনাদায়ক হতে পারে। সৌভাগ্যক্রমে ক্যাম্পাসে এখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলে স্থাপিত অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। তবে অনেক যন্ত্রের মেয়াদ ইতোমধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নজরদারি অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অনেকে এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম বলেন, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, এ তথ্য আমার জানা নেই। যদি যন্ত্রগুলোর মেয়াদ সত্যিই উত্তীর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো পরিবর্তনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান জানান, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে, এ তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।