চমৎকার নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়া। বসন্তের আগমনে গাছে গাছে কচিপাতায় সবুজ রঙ ধরতে শুরু করেছে। রোদটাও যেন বেশ আরামদায়ক। এমনই একটি মিষ্টি বিকাল ছিল গতকাল বুধবার।
অমর একুশে বইমেলার পরিবেশও ছিল দর্শনার্থী ও পাঠকদের পক্ষে, অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল মেলায় ভিড় ছিল অনেক কম। ক্রেতারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে বই কিনতে পেরেছেন। স্টল মালিক এবং বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে বই বিক্রি।
যেসব অভিভাবক বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন, তারাও ছিলেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। মেলায় খোলা জায়গায় বাচ্চারা খেলার সুযোগ পেয়েছে। নিজেরাও ফাঁকা জায়গায় বসে একটু বিশ্রাম নিতে পেরেছেন।
দেখতে দেখতে ১৯তম দিন পার করে ফেলল অমর একুশে বইমেলা। আর একদিন পরেই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অনেকে এখনো বিভিন্ন স্টল থেকে বইয়ের তালিকা নিচ্ছেন। মেলার শেষ দিকে পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করবেন বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন মেলায় আশা অনেক ক্রেতা।
গতকাল মেলার ১৯তম দিনে নতুন বই জমা পড়েছে ৭০টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– প্রতিভা প্রকাশ থেকে আকাশ মণির ‘স্বপ্ন ভাঙার শব্দ হয় না’, অমরাবতী থেকে হোসনেয়ারা বেগমের ‘জাগো জাগো শিশুদল’, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন থেকে মোহাম্মদ মোশতাক চৌধুরীর ‘সিলেটি কথ্যভাষার অভিধান’, চারু সাহিত্যাঙ্গন থেকে ইসা নিজামের ‘সোনালী সম্ভার’, কবিতাচর্চা থেকে আব্দুস সালাম মণ্ডলের ‘মানুষ প্রয়োজন’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দির প্রবেশপথও ছিল বেশ ফাঁকা। ওই গেটের পাশেই শিশু চত্বর। কর্মদিবসে শিশু চত্বরে ছুটির দিনগুলোর মতো ভিড় ছিল না। স্টলগুলোতে বেশকিছু শিশুকে দেখা গেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরে বই কিনতে। বিভিন্ন কার্টুনের কাটআউটের সঙ্গে ছবি তোলার আবদার তো ছিলই।
শিশু চত্বর পার হয়ে সামনে হেঁটে যেতে যেতে চোখে পড়বে অক্ষর, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সসহ বিভিন্ন স্টল। পাঞ্জেরীতে কমিকস পাওয়া যাওয়ায় সেখানে কিশোর ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ওই স্টলে কমিকস কিনতে আসা তেজগাঁ কলেজের হৃদয় জানান, কমিকস সহজে বুঝি বলে পড়তে মজা লাগে।
১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সব্যসাচী স্টলটি বন্ধ। কারণ জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মেলা কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম রেজা আমার দেশকে জানান, তসলিমা নাসরিনের একটি বই বিক্রিকে কেন্দ্র করে সব্যসাচী স্টলের প্রকাশকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ স্টলটি বন্ধ ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরো তিন দিন সময় নিয়েছে। স্টলটি খোলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন স্টলের সামনে বৃহৎ আকৃতির স্ক্রিনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয়। বেঞ্চে বসে সেগুলো দেখছিলেন আতিউর নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, মেলায় ঘুরতে এসেছি। এখন বিশ্রামের ফাঁকে গত বছরের জুলাইয়ের ঘটনাগুলো দেখছি।
পুঁথিনিলয়, গতিধারা, ঐতিহ্য, বাতিঘর, অন্যপ্রকাশ, সৃজনী, দি রয়েল পাবলিশার্সসহ স্টলগুলোতে ভিড় লক্ষ করা যায়। পাঠক ও দর্শনার্থীদের কেউ কেউ ছবি তুলছেন। আবার কাউকে দেখা যায় তালিকা করে আনা বই খুঁজতে। অন্যপ্রকাশের সামনে কথা হয় উত্তরা থেকে আসা গৃহিণী হাসনা ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আসলে একটি অস্থির সময় পার করছি। তাই বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় আসতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু না এসেও থাকতে পারলাম না। প্রতি বছর হুমায়ূন আহমেদের বই কিনি আমি।
একে একে কবি প্রকাশনী, ছাপাখানা কিংবা বিদ্যাপ্রকাশের সাদাকালো স্টলগুলোর সামনে দেখা যায়, নানা বয়সি মানুষ ছবি তুলছে। শুধু ছবি তুলে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তরুণী পৃথিকা বলেন, আমার প্রথমবার মেলায় আসা। স্মৃতি ধরে রাখতেই ছবি তুলে রাখছি।
মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের চিত্র একটু ভিন্ন। সেখানে ভিড় কম । দর্শক যারা আসেন, তাদের অনেকেই মূলত একাডেমির ঐতিহ্য, বর্ধমান হাউস এবং বইমেলার প্রথম প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখতেই এসেছেন বলে জানান। বর্ধমান হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়ের ছবি তুলছিলেন জেসিকা জেসি। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় আসি প্রতি বছর। বাংলা একাডেমিতে আসি নিজের ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করতে।
গতকাল বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবর্ষ : রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জুলফিকার শাহাদাৎ। সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহাবুদ্দীন নাগরী।