ঢাবি সাদা দলের সেমিনারে সালাহউদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ১৫-১৬ বছর আমরা আন্দোলন করেছি শুধু একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য। আর সেই নির্বাচনের জন্য শেষ পর্যন্ত সবাইকে জনগণের কাছেই যেতে হবে।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সাদা দলের উদ্যোগে আয়োজিত “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষার রূপান্তর: একটি কৌশলগত রোডম্যাপ” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে তিনি জুলাই সনদ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, শিক্ষা ব্যবস্থা, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়ন, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তর নিয়ে বিস্তৃত বক্তব্য রাখেন। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।
জুলাই সনদ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্যের নামে একটি অনৈক্য তৈরি করা হয়েছে। গণভোটের জন্য যেসব প্রশ্ন সাজানো হয়েছে, তা পিএইচডি ডিগ্রি করা মানুষেরও বুঝতে সময় লাগবে। দেশের সার্বভৌমত্বকে কোনো আদেশ দিয়ে বাধ্য করা যায় না - সর্বোচ্চ সার্বভৌমত্ব জনগণ, আর জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমেই সেই অধিকার প্রয়োগ করে।”
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতির জারি করা সাম্প্রতিক আদেশের কোনো সংবিধানিক ভিত্তি নেই। “দেশে আদেশ জারির কোনো ইতিহাস নেই; এই আদেশ টিকবেও না। এর উদ্দেশ্য কেবল একটি ‘লিগ্যাল কেওয়াজ’ তৈরি করা।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“এই নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট শাসন বা স্বৈরাচারের পুনরুত্থান না ঘটে। স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসরদের বহাল রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, যে দেশের মানুষ এখন ভোটের অপেক্ষায় আছে- সেই ভোটের মাধ্যমেই একটি নতুন জাতীয় ন্যারেটিভ তৈরি হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংকট বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন,
“একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে অ্যাটম বোমার থেকেও বেশি কার্যকর হলো তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। জিপিএ-৫, গোল্ডেন জিপিএর বাণিজ্যিক বন্যায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আগামী ২০-৩০ বছর শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করতে লাগাতার চেষ্টা না করলে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না।”
তিনি বলেন, হাসিনা আমলে পরিকল্পিতভাবে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও শিক্ষাগত আগ্রাসন চালানো হয়েছে।“ব্রিটিশরা যেমন বলতো- রক্তে ভারতীয়, চিন্তায় ব্রিটিশ- তেমনি এই দেশে এমন একটি শ্রেণি তৈরি করা হয়েছে যারা রক্তে বাংলাদেশি হলেও চিন্তায় অন্য দেশের প্রভাব বহন করে। বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে সাংবাদিকতা, শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি- সবখানেই দূষণ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ এক সন্ধিক্ষণে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করলেও শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন দেয়নি- এটি অত্যন্ত হতাশাজনক।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, প্রভোস্ট, শিক্ষক- শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।