আঞ্চলিক উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণে বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ও মানবিক বিভাগের সমন্বয়ে প্রায় একই সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দুটি প্রযুক্তিসহ ছয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো—জগন্নাথ, বেগম রোকেয়া, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু একই সময় প্রতিষ্ঠিত হলেও সমসাময়িক অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সব দিক থেকেই পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রকাশিত ৫০তম বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শিক্ষক সংখ্যার দিক থেকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষ ২০ তালিকার সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে কুবি। যেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) অবস্থান যথাক্রমে ৪র্থ, ১২তম ও ১৮তম।
ইউজিসির তথ্যমতে, জবিতে বর্তমানে শিক্ষক আছেন ৬৮০ জন, নোবিপ্রবিতে ৪১৫ জন এবং জাককানইবিতে ২৯৩ জন। অন্যদিকে কুবিতে শিক্ষকসংখ্যা মাত্র ২৬৬ জন।
জানা যায়, ২০০৭ সালে মাত্র সাতটি বিভাগ, ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে কুবি। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে বিভাগের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা ছয় হাজার ৮৮৮ জন এবং শিক্ষক ২৮০ জন। তবে ইউজিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষে কর্মরত শিক্ষক ছিলেন ২৬৬ জনের মতো। এদের মধ্যে ৯৮ জন বিভিন্ন ছুটিতে রয়েছেন।
অন্যদিকে জবিতে ৩৮টি বিভাগে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থী, নোবিপ্রবিতে ৩১টি বিভাগে ৮ হাজারের বেশি এবং জাককানইবিতে ২৫টি বিভাগে ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
বিশ্বমান অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাত হওয়া উচিত ১:২০। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুপাত ১:৩৮। অর্থাৎ প্রতি ৩৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। বর্তমানে ৬ হাজার ৮৮৮ শিক্ষার্থীর বিপরীতে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষক মাত্র ১৮২ জন। কলা অনুষদের বাংলা ও ইংরেজি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি, নৃবিজ্ঞান ও প্রত্নতত্ত্ব, বিজ্ঞান অনুষদের গণিত ও রসায়ন, ব্যবসায় অনুষদের অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং ও ম্যানেজমেন্ট, প্রকৌশল অনুষদের আইসিটি এবং আইন অনুষদের আইন বিভাগে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর অনুপাত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছেনি।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অবস্থা সবচেয়ে সংকটজনক। ২৭১ শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিভাগটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন, অর্থাৎ অনুপাত ১:৬৮। ফার্মেসি বিভাগে ১:৪৬ এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ১:৪২ অনুপাতে শিক্ষক পাওয়া যায়।
ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি একসঙ্গে ছুটিতে থাকতে পারেন না। কিন্তু কুবিতে ২৮০ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯৮ জন বর্তমানে ছুটিতে— যা মোট শিক্ষকের ৩৪.৮৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯৫ জন শিক্ষা ছুটিতে, দুজন ডেপুটেশনে এবং একজন বাধ্যতামূলক ছুটিতে রয়েছেন।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিএসই বিভাগের নয়জন, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগের আটজন, পরিসংখ্যান, ফার্মেসি ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাতজন, ইংরেজি ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ছয়জন এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাঁচজন শিক্ষক বর্তমানে ছুটিতে আছেন।
এছাড়া লোকপ্রশাসন ও আইসিটি বিভাগের চারজন, অর্থনীতি ও মার্কেটিং বিভাগের তিনজন এবং ফিন্যান্স, ব্যবস্থাপনা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুজন করে শিক্ষক ছুটিতে আছেন। ফলে বহু বিভাগে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, একই সময়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় কুবি কিছুটা পিছিয়ে আছে, তবে আমরা সেই ব্যবধান ঘোচাতে কাজ করছি। শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপাত আন্তর্জাতিক মানে আনতে ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগিরই নতুন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠব বলে আশা করছি।