গম ফসলের মারাত্মক রোগ গম ব্লাস্ট দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য উদ্ভাবিত শনাক্তকরণ কিটের ব্যবহারিক প্রয়োগের কার্যকারিতা যাচাই শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পুরাতন অডিটোরিয়ামে গাজিপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় -এর ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উদ্যোগে এবং "Disease Early Warning System (DEWAS)-Wheat Blast Diagnostic" প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার আলোচ্য বিষয় হিসেবে এ কিটের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি অত্যন্ত দ্রুত, সহজে, কম খরচে এবং সুনির্দিষ্টভাবে গম ব্লাস্ট সৃষ্টিকারী ছত্রাক জীবাণু Magnaporthe oryzae Triticum (MoT)- কে শনাক্ত করতে পারে । এটি PCRD স্ট্রিপ পদ্ধতিতে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে জীবাণু শনাক্ত করতে সক্ষম। একটি সনাক্তকরণ নমুনা পরীক্ষায় খরচ হয় মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা।
দিনব্যাপী তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজিপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান। আইবিজিই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ নাইমুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাকৃবির প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ সফিউল ইসলাম আফ্রাদ।
বিশ্বের কৃষির জন্য দিগন্ত উন্মোচনকারী এ কর্মশালায় বারি, বিরি, বিএডিসি, বিজেআরআই, ওএমসি হেলথ কেয়ার, বিডব্লিউএমআরআই, এসিআই, অ্যাপেক্স বায়োফার্টিলাইজার, লালতীর, সুপ্রীম সিড, ব্র্যাক সিডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শিল্পখাত থেকে প্রায় ৭০ জন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদীয় ডিন, রেজিস্ট্রার মো. আবদুল্লাহ্ মৃধা, প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল আলম, পরিচালক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম তার মূল প্রবন্ধে গমের ব্লাস্ট দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য উদ্ভাবিত র্যাপিড ডিটেকশন কিটের আবিষ্কার ও প্রকল্পের বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরেন। প্রবন্ধ উপস্থাপনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে মাঠে ব্যবহার করা সহজ এবং রোগটির সংক্রমণ দ্রুত নিরূপণে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও প্যান্ট কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রযুক্তিটি ভবিষ্যতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসলের রোগ নির্ণয়ের প্রযুক্তি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি মডেল হিসেবেও কাজ করবে।” এ সময় প্রধান অতিথির উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘‘ গাকৃবিতে আন্তর্জাতিকমানের বিজ্ঞানী আছে বলেই এ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক বিবিধ র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।” উপাচার্য আরো বলেন, ‘‘ যুগান্তকারী এ কিটের সাহায্যে রোগ সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব বিধায় সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারা যাবে। এর ফলে দেশের গম উৎপাদন সুরক্ষিত থাকবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।” কর্মশালার দ্বিতীয় সেশনে, কিটের কার্যকারিতা, পরীক্ষণ পদ্ধতি ও মাঠ পর্যায়ের প্রয়োগবিধি নিয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন আইবিজিই-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. দীপালী রাণী গুপ্তা। এরপর প্রফেসর ড. তোফাজ্জল ইসলামের নেতৃত্বে শুরু হয় একটি প্রাণবন্ত উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও গবেষণাধর্মী প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেন। সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ এ কর্মশালার সমাপ্তি ঘটে।