হোম > জাতীয়

বিশেষ সম্মাননা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কৃত হলেন আবদাল আহমদ

স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বিশেষ সম্মাননা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কৃত হয়েছেন আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমদ। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে রিপোর্টারদের সংগঠনটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাকে এ সম্মাননা পুরস্কার দেয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্মাননা ও পুরস্কারপ্রাপ্ত আবদাল আহমদকে নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। যেখানে তার সাংবাদিকতা জীবনের নানা অধ্যায় ও স্কুপ এবং অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপিত হয়।

বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার সংকটে আবদাল আহমদকে এক আলোকস্তম্ভ আখ্যা দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় আজ একটি বড় সংকট হলো অভিজ্ঞতার ঘাটতি। দেশের বেশিরভাগ নিউজরুমে কর্মরত সাংবাদিকদের গড় বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অনেকে আরো কম বয়সেই কঠিন ও জটিল সংবাদ কাভার করতে নেমে পড়েন। অভিজ্ঞতার অভাবে তারা অনেক সময় ঘটনাকে প্রেক্ষাপটহীনভাবে দেখে ফেলে। একজন তরুণ সাংবাদিক হঠাৎ একটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড বা রাজনৈতিক সংঘর্ষ দেখলেই মনে করতে পারে –দেশে আর কিছুই বাকি নেই, সবই ধ্বংসের পথে। কারণ অতীতের ঘটনাবলি, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সমাজের দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ –এসব অভিজ্ঞতা তাদের এখনো তৈরি হয়নি। তাদের কপি এডিট করতে যারা থাকেন, তাদেরও বয়স প্রায় একই রকম। ফলে এক ধরনের সমষ্টিগত উত্তেজনার ভেতর দিয়ে সংবাদ তৈরি হয়, যেখানে খবর থাকে, কিন্তু ভারসাম্য ও বিচক্ষণতা অনেক সময় অনুপস্থিত থাকে। এই সমস্যার দায় স্বীকার করতেই হবে—এবং এখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন আবদাল ভাই।

আবদাল আহমদকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূষিত করে প্রেস সচিব বলেন, আবদাল ভাই কেবল একজন সাংবাদিক নন—তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি যখন ফিলিপস পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখনকার সময়ে সেটি ছিল অসাধারণ মর্যাদার। বর্তমানে তার বয়স ৬৫, কিন্তু তিনি যে পথ পাড়ি দিয়েছেন, যে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ধারণ করেন –সেটা আমাদের বহু সাংবাদিকের নেই। তিনি খালেদা জিয়ার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। কিন্তু তিনি তার পেশায় ছিলেন নিরপেক্ষতার অনুসারী।

প্রেস সচিব আরো বলেন, বয়স ৬৫ হওয়া সত্ত্বেও তিনি জার্নালিজম, বই প্রকাশ, লেখালেখি, প্রেস ক্লাবের সুস্থ রাজনীতি—সবই চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ৫০ পেরোলেই কাজ থেকে সরে যেতে চান, কিন্তু আবদাল ভাইয়ের কাছে কাজই আনন্দ, কাজই পরিচয়। আমরা ৯০ বা ৯৫ বছর পর্যন্ত যদি সুস্থ থাকি, কেন জার্নালিজম করব না? তিনি আমাদের সামনে সেই উদাহরণ রেখে গেছেন—কিভাবে কর্মই একজন মানুষের মূল শক্তি হতে পারে। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় আজ যে অভিজ্ঞ, দূরদর্শী, ধীরস্থির মানুষের অভাব—আব্দুল ভাই সেই শূন্যতা পূরণ করেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন -সাংবাদিকতা উত্তেজনার নয়; ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও নিরপেক্ষতার পেশা। সাংবাদিকতা এক জীবনের কাজ –এবং সেই কাজে অবিচল থাকা যায়, যদি ভাইয়ের মতো আলোকবর্তিকা সামনে থাকে।

সম্মাননা ও পুরস্কৃত করার জন্য রিপোর্টারস ইউনিটিকে ধন্যবাদ জানান আবদাল আহমদ। তিনি বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে এমন একজন প্রধান অতিথি উপস্থিত—শফিকুল আলম—যিনি এএফপি’র মাধ্যমে বহু আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত প্রতিবেদন উপহার দিয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশত্যাগের তথ্য বিশ্বে প্রথম প্রচারিত হয় তাঁর রিপোর্টে –এটিও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।

ফ্যাসিবাদী শাসনামলের দুঃসময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ‘আমার দেশ’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দীর্ঘসময় রিপোর্টিং করতে পারিনি। তবে থেমে থাকিনি—বিভিন্ন পত্রিকায় কলাম লিখেছি ও শিশু-কিশোরদের জন্য মাসিক প্রকাশ করেছি। সেই সময় ৪০টির বেশি বই প্রকাশ করেছি, কিছু বই বহুবার পুনর্মুদ্রিতও হয়েছে।

সাংবাদিকতার শুরুর দিনের কথা মনে করে তিনি বলেন, ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র থাকা অবস্থায় আমার সাংবাদিকতা শুরু হবিগঞ্জে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দৈনিক বাংলার সাংবাদিকতা আমাকে পেশাগতভাবে গড়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাধর্মী বিষয়গুলো নিয়ে রিপোর্ট করে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলাম। পরবর্তীতে খাদ্য নিরাপত্তা, ভেজাল, পরিবেশদূষণ ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ বহু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কাজ করেছি যেসব প্রচুর আলোড়ন তোলে। এখনো রিপোর্টিং আমার ধ্যান–জ্ঞান; ভবিষ্যতেও সত্য ও মানুষের কথা তুলে ধরতে চাই।

আবদাল আহমদের সাথে দীর্ঘদিনের পথচলার স্মৃতিচারণ করে আমার দেশ-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী বলেন, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ হাই স্কুলে ১৯৭৬ সালে আমাদের পরিচয়—আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে, তিনি নবমে। সেই পরিচয়ই ৪৯ বছরের বন্ধনে পরিণত হয়েছে। স্কুলের পর আমরা আবার মিলিত হই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে; একই হলে থেকেছি, একসাথে সময় কাটিয়েছি। আমার দুই বড় ভাই দেশের বাইরে থাকায় তিনি–ই জীবনে বড় ভাইয়ের ভূমিকা পালন করেছেন। জাহাঙ্গীরনগরে তিনি তখন দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তার কাছ থেকেই আমার সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ জন্মায় এবং তার উৎসাহেই সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশ করি।

ছাত্রজীবনে গরুর ট্রাকে চড়ে রাতে জাহাঙ্গীরনগর ফেরা কিংবা পথে ড্রাইভারদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়া—সাংবাদিকতার প্রতি আবদাল আহমদের নিষ্ঠার দুর্লভ উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, দৈনিক আমার দেশ ফের চালু হলে প্রথম লিড স্টোরি ‘দিল্লিকে ঢাকা অ্যাটাক করতে বলেছিল হাসিনা’ তারই রিপোর্ট হয়, যা দর্শক ও পাঠকদের মাঝে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। যেটি ৩৬ লাখ মানুষ দেখেছে। ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এখনো সাংবাদিকতার মাঠে সক্রিয়। আল্লাহ তাকে সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু দিন—যাতে তিনি আরও বহু বছর সত্য ও মানুষের কথা তুলে ধরতে পারেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, ডিআরইউ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুলতান মাহমুদ বাদল, সাংবাদিক মোস্তফা কামালসহ সংগঠনটির সিনিয়র সাংবাদিকরা।

বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে পারে ওয়ানু

খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

কৃষির উপখাত হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কোনো ভর্তূকি পায় না

কড়াইলবাসীর জন্য জরুরি মানবিক সেবাকেন্দ্র চালু করলো আনসার–ভিডিপি

জুলাই আন্দোলন: আমিরাতের কারাগারে বন্দিদের সুখবর

আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

বাউল আবুল সরকারের শাস্তির দাবিতে হেফাজতের বিক্ষোভ

৭০ হাজারের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন, কোন দেশে কত

অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস কমিশন গঠনের দাবি সরকারি কর্মকর্তাদের