সংসদের ভেতরে এমপিদের (সংসদ সদস্য) কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক চেয়ারম্যান) ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, এমপিদের কাজই হচ্ছে দেশের জন্য আইন তৈরি করা। নির্বাহী বিভাগ সেটা রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রয়োগ করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের দুর্নীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কমে আসবে।
দুদক চেয়ারম্যান মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুদকের কার্যক্রমে রাজনৈতিক চাপ, বিগত সরকারের আমলের মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
দুর্নীতি রোধে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে এমপিদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এমপিদের পদ কোনো লাভজনক নয়। তারপরেও ব্যবসায়ীরাসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন এমপি হওয়ার জন্য। এটি রোধ করতে পারলে দুর্নীতিও অনেক কমে যাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এখন আমরা কোনো ধরনের চাপ অনুভব করছি না। দুদক স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে। সামনে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসবে। ওই সময়ে দুদকের কার্যক্রমে কেউ হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে কিংবা তদন্ত ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে বাধা দিলে তাদের নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করে দেয়া হবে দুদকের পক্ষ থেকে।
মতবিনিময় সভায় দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ ও সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সব দুর্নীতি রোধ করার দায়িত্ব দুদকের নয় উল্লেখ করে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানেরই দুর্নীতি প্রতিরোধে আইনগত পদ্ধতি রয়েছে। ঠিকমতো অডিট হলে কেউ দুর্নীতির সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের সব প্রতিষ্ঠান নিজেরাই নিজেদের দুর্নীতি নিরোধক। এর বাইরেও একটি কমিশন রয়েছে, যার কাজ হচ্ছে দেখাশোনা করা, খবরদারি করা।
দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভোটে কালো টাকার দৌরাত্ম্য আগে দেখেছি। এবার যাতে এমন কেউ প্রার্থী হতে না পারে সেটির নিশ্চয়তা রাজনৈতিক দলগুলোকেই দিতে হবে। তাছাড়া এমপিদের পদ ও পদবী কোনো লাভজনক নয়, এটিও নিশ্চিত করতে হবে।
দুর্নীতিবাজদের শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একজন ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলো। সে এক কোটি টাকা জরিমানা দিয়ে মাফ পেয়ে গেলে পরবর্তীতে আরও দুর্নীতি করবে। কারণ জরিমানা দেওয়ার পরও তার আরো ৯ কোটি টাকা লাভ থাকছে। ১০ কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে একশ কোটি জরিমানার বিধান হলে কেউ আর ভয়েই দুর্নীতিতে যুক্ত হতো না।