হোম > জাতীয়

দেশের ইতিহাসে বিধ্বংসী যত ভূমিকম্প

স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার সকালে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তা মাঝারি মাত্রার হলেও গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছেন ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র।

এর আগে ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ–ভারত–মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতের মিজোরাম রাজ্যে। মিজোরামে কোনো হতাহত না হলেও বাংলাদেশের চট্টগ্রামে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ভূমিকম্প ঢাকাতেও অনুভূত হয়েছিল।

বিংশ শতকে বাংলাদেশের শেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পটি হয় মহেশখালী দ্বীপে। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে দ্বীপের বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রথম বড় ভূমিকম্প হয় ১৫৪৮ সালে। চট্টগ্রাম–সিলেট অঞ্চলে অনেক স্থানে মাটি ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধযুক্ত কাদা–পানি বেরোনোর ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে। তবে হতাহতের তথ্য নেই।

১৬৪২ সালে সিলেট জেলায় এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু দালান–কোঠা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনও প্রাণহানীর তথ্য পাওয়া যায়নি।

১৭৬২ সালের এপ্রিলের ভূমিকম্পটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রামের বহু স্থানে মাটি ফেটে কাদা–পানি বেরোয়, ‘পর্দাবন’ এলাকায় একটি নদী শুকিয়ে পড়ে এবং ‘বাকর চনক’ অঞ্চলের প্রায় ২০০ মানুষ ও তাদের গৃহপালিত প্রাণী সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়। ভূমিকম্পের ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে অতল গহ্বর সৃষ্টি হয় ও বহু গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়।

ঢাকাতেও সে সময় ভয়াবহ ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল। নদী–ঝিলে প্রবল আলোড়ন দেখা যায়, পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং পরে নামার সময় জলাশয়ের পাড়ে অসংখ্য মরা মাছ দেখা যায়। প্রায় ৫০০ মানুষের প্রাণহানী ঘটে।

১৭৭৫ ও ১৮১২ সালের আরও দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যায়। ১৮১২ সালের ভূমিকম্পটি হয়েছিল সিলেটে। উভয় ক্ষেত্রেই হতাহতের কোনো বর্ণনা নেই।

১৮৬৫ সালের শীতে সীতাকুণ্ডের এক পাহাড় ফেটে বালি ও কাদা বেরোনোর মতো ভূমিকম্প হয়েছিল। বড় কোনো ক্ষতির তথ্য নেই।

১৮৮৫ সালে মানিকগঞ্জে প্রায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ‘বেঙ্গল আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এর উপকেন্দ্র ছিল সাটুরিয়ার কোদালিয়া। বাংলাদেশসহ ভারতের কয়েকটি অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়। বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে প্রাণহানীর সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

১৮৯৭ সালের ১২ জুনের ধ্বংসাত্মক ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক’ বাংলাজুড়ে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ধারণা করা হয় প্রায় ৮। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বহু স্থানে স্থাপনা ধ্বংস হয়। সিলেটে ৫৪৫ জনের মৃত্যু হয়। যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয় এবং প্রায় ৫০ লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতি অনুমান করা হয়।

১৯১৮ সালে শ্রীমঙ্গলে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এটি সেখানকার বহু দালান–কোঠা ধ্বংস করে। মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর–পূর্বেও এর প্রভাব অনুভূত হয়।

১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আসোম ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। বাংলাদেশে কম্পন অনুভূত হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ইনচার্জ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত কবির বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নতুন করে ভাবাচ্ছে সবাইকে।

তিনি বলেন, এই ভূমিকম্পে যে ধরনের প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে, তা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। দিনের বেলায় হওয়ায় সবাই তা প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করেছে।

তিনি জানান, আজকের ভূমিকম্পটি ইন্দো–বার্মা টেকটনিক প্লেটের অংশে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন ঝাঁকুনি আগে অনুভূত হয়নি।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পটি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। এটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫ দশমিক ৫, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম–দক্ষিণ–পশ্চিমে, গভীরতা ১০ কিলোমিটার। ইউরোপিয়ান সিসমোলোজিক্যাল সেন্টার জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কম্পন অনুভূত হয়। এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কলকাতাসহ আশপাশের এলাকাও কেঁপে ওঠে।

আগামী নির্বাচনে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকার বিকল্প নেই

খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও নৌ সদস্যদের শান্তিকালীন পদক প্রদান

ভূমিকম্প নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০

ভূমিকম্পে নরসিংদী জেলায় যত ক্ষয়ক্ষতি

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মার্কিন দূতাবাসের সমবেদনা

প্রধান উপদেষ্টার সহধর্মিণীর খোঁজ-খবর নিলেন খালেদা জিয়া

জমাদিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা যায়নি

নরসিংদী কেন ভূমিকম্পের কেন্দ্র?

বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে