যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশি নাগরিক ফয়সাল আহমেদ (ছদ্মনাম) দেশটির ডিটেনশন সেন্টার ও কারাগারে নিজের ওপর হওয়া অমানবিক আচরণের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ সময় তাকে হাত-পা ও কোমরে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয় এবং ৭৫ ঘণ্টা ধরে বাথরুম ব্যবহারের সুযোগও দেওয়া হয়নি। পাঁচ বছর আগে ভিজিট ভিসায় বলিভিয়া গিয়ে আর দেশে ফেরেননি তিনি। দালালের মাধ্যমে পেরু, ইকুয়েডর ও মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে বৈধ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় বা ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন গ্রহণ না হওয়ায় তিনি অনিশ্চয়তায় ছিলেন। তার অভিযোগ, আইনি সহায়তার নামে কিছু বাংলাদেশি প্রতারণার চক্রও গড়ে তুলেছে।
মার্কিন প্রশাসনের নীতি কঠোর হওয়ার পর ছয় মাস আগে নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার হন তিনি। তাকে বাফেলো থেকে লুইসিয়ানার একটি কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে অমানবিক পরিবেশে তাকে খাবার দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ তার। দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায়ও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন আরো অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চার্টার্ড ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফেরার সময়ও দীর্ঘ সময় ধরে তাদের হাত, পা ও কোমরে শেকল পরানো ছিল। বিমানে থাকা আরো কয়েকজন জানায়, প্রায় ২৭–৪০ ঘণ্টা শেকল পরা অবস্থায় থাকতে হয়েছে, এমনকি বাথরুমে যাওয়ারও সুযোগ মেলেনি।
ফয়সাল আহমেদসহ ৩১ জনকে সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামানো হয়। তাদের অধিকাংশই নোয়াখালীর বাসিন্দা। কেউ কেউ বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারের তথ্য বলছে, গত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আড়াইশোর বেশি বাংলাদেশিকে এই পদ্ধতিতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আরো অনেক বাংলাদেশি এখনও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন অনুযায়ী নথিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো স্বাভাবিক হলেও তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ উদ্বেগজনক। ব্র্যাক মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানিয়েছেন, হাত-পায়ে শেকল পরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাখা একজন ব্যক্তির জন্য চরম ট্রমার কারণ হতে পারে।
তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা এবং মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে বৈধ ভিসায় গিয়ে সেখান থেকে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য নেতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কর্মী পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত শ্রমিকদের অবস্থান ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা এবং অনিয়ম রোধে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা