হোম > জাতীয়

ধরা পড়ছেন এনবিআরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা

কাওসার আলম

ফাইল ছবি

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের। গত কয়েক মাসে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে উঠে আসছে তাদের নাম। কেউ ঘুস নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ছেন, কেউবা টাকা নিয়ে তুলে দিয়েছেন আয়কর নথি। কেউ রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস করেছেন, কেউ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং সংস্থাটির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তথ্য। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্য দেশে সফর কিংবা ট্রাফিক পুলিশকে গালিগালাজ বিতর্ক-কোনোকিছুই বাকি নেই। এমনকি প্রায় দেড়শ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগও উঠেছে।

এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠনে গত এপ্রিলে অধ্যাদেশ জারির পর সংস্থাটির মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। অধ্যাদেশ বাতিল ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে ‘সিবিএ স্টাইলে’ ধর্মঘট, কলম বিরতি, মার্চ টু এনবিআরের মতো কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তারা। কর্মসূচি চলাকালীন নির্দিষ্ট কিছু সেবা ছাড়া সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। মে ও জুন মাসে বাজেট প্রণয়ন এবং রাজস্ব আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অচলাবস্থা তৈরি করেন কর্মকর্তারা। আন্দোলন চলাকালীন কয়েকজনের বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মতো ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণও’ দেখা যায়। তাদের এ ধরনের অপেশাদার ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে সংস্থাটি বেশ ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে।

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শোষণামলের শেষ সময়ে দেশজুড়ে আলোচিত ‘ছাগলকাণ্ডের’ মতিউর রহমানও ছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ আছে। বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া মতিউর ও তার স্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এনবিআরে এমন আরো বহু ‘মতিউর’ আছেন। চলতি অক্টোবরে সংস্থাটির সদস্য বেলাল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এর পর তাকে প্রথমে সদস্য (ভ্যাট বাস্তবায়ন ও আইসিটি) থেকে সরিয়ে কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট করা হয়। এর একদিন পর সেখান থেকে সরিয়ে ওএসডি করা হয়।

বেলাল এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার কয়েকদিন আগে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গিয়ে সরকারি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া সফর করে আলোচনায় আসেন। দুর্নীতির অভিযোগে বেলালের বিদেশযাত্রায় গত জানুয়ারিতে আদালত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে আদালতের বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে গিয়ে এমন কাণ্ড করেন তিনি। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফেরার পর তাকে কারণ দর্শনোর নোটিস দেয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।

বেলালের বিরুদ্ধে যেদিন (গত ৭ অক্টোবর) দুদক মামলা করে, সেদিনই বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা শামীমা আক্তারকে গ্রেপ্তার করে দুদকের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়। ‘সহযোগী নিয়োগের’ মাধ্যমে ঘুস নেওয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদকের মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন শামীমা ও তার সহযোগী হাসিবুর রহমান। ওই ঘটনার দায়ে গত ১৪ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ওই ঘটনার একদিনের মাথায় এনবিআর চেয়ার‌ম্যানের আয়কর নথি ফাঁসের ঘটনায় মামলা হয়। গত ৮ অক্টোবর কর অঞ্চল-৪-এর সহকারী কর কমিশনার আতাহার আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির নামে মামলাটি করেন। বিষয়টি নিয়ে এনবিআরে তোলপাড় হয়। আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের ফেসবুক পেজেও এটি প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনার গোপন নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় এনবিআরের শুল্কনীতি শাখার দ্বিতীয় সচিব মুকিতুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত ও পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

ঘুস নিয়ে আয়কর নথি হস্তান্তরের ঘটনায় সহকারী কর কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌস মিতু চাকরি হারিয়েছেন। ৩৮ লাখ টাকার বিনিময়ে এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদের ২৩৭ কোটি টাকার সম্পদ বৈধ করতে পুরোনো আয়করের সব ধরনের নথি তার আইনজীবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মিতু। ওই ঘটনায় গত ১ সেপ্টেম্বর চাকরি হারান এই কর্মকর্তা।

এর কয়েকদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে দুদকের অভিযানে ৩০ হাজার টাকা ঘুসসহ ধরা পড়েন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাজীব রায় এবং তার সঙ্গী দালাল মাইনুদ্দীন। পণ্য ছাড় করাতে আমদানিকারকের কাছ থেকে অর্থ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন তারা।

শুধু ঘুসই নয়, অসদাচরণের ঘটনাও ঘটিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে গত আগস্টে চাকরি খুইয়েছেন সহকারী কর কমিশনার ফাতেমা বেগম। ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহ জামাল কর্তব্যরত অবস্থায় ফাতেমার কাছে তার গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। গত এপ্রিলে ঘটনাটি ঘটে।

এছাড়া এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে ভূমিকা থাকায় তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতমূলক অবসরে পাঠায় সরকার। আরো ২১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কয়েক মাস ধরে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে রাজস্ব আদায়কারী একমাত্র সংস্থাটিতে। এতে এনবিআরের অভ্যন্তরে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনবিআর সদস্য বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ওএসডির পর থেকে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এনবিআরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্নীতি কমানোর জন্য অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে চলতি করবর্ষ থেকে অনলাইন ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আয়কর অডিট সিলেকশন অনলাইন প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে। ভ্যাট অডিটও অনলাইনের আওতায় আসছে। ভ্যাট রিফান্ডও অনলাইন করা হচ্ছে। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে জড়িত ১৯টি সংস্থার কাগজপত্র অনলাইনে দাখিল করা হচ্ছে। সব কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক হলে ঘুস, দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের হয়রানিও কমবে।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় এনবিআরের এক সদস্য আমার দেশকে বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সংস্থাটির ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেভাবে কর্মকর্তারা একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন, তাতে মনে হতে পারে এনবিআরের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীই বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত। তবে সাধারণ মানুষের এ ধারণার সঙ্গে বাস্তবতার পার্থক্য আছে।

তিনি আরো বলেন, এখানে অবশ্যই অনেক সৎ, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা আছেন। কিছু কর্মকর্তার কারণে এখন এনবিআরের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছে।

একই কারণে নাম প্রকাশ না করে এনবিআরের এক কমিশনার আমার দেশকে বলেন, অধিকাংশ কর্মকর্তাই আর্থিক অনিয়মে জড়িত। টাকা ছাড়া এখানে কেউ কাজ করতে চান না। এখন কেউ ধরা পড়ছেন, কেউ ধরা পড়ছেন না-এটাই পার্থক্য।

এনবিআরের একজন দ্বিতীয় সচিব বলেন, বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এনবিআরে কাজ করছিÑএ পরিচয় দেওয়াটা অনেকক্ষেত্রে লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ৭৬১

সংস্কার নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার তথ্য সঠিক নয়

পারস্পরিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় একমত বাংলাদেশ-পাকিস্তান

ভারতে পালানোর সময় শামীম ওসমানের সহযোগী আজিজ গ্রেপ্তার

জুলাই শহীদদের তথ্য লুকাতে রেকর্ড গায়েব

ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে আজ

মেট্রোরেলের নকশা পুনর্মূল্যায়ন চান বিশেষজ্ঞরা

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ঢাকায় তুরস্কের বিশেষজ্ঞ দল

নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিষয়ে যা বললেন ইসি সচিব

কাল জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেবে কমিশন