অধ্যাদেশ অনুমোদন
গণভোট অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ এবং প্রকাশনা শাখা থেকে গতকাল মঙ্গলবার এটি প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পাবলিক রিলেশন অফিসার ড. রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে অধ্যাদেশটি অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কতিপয় প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি আছে কি না তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়ন করতে এ অধ্যাদেশ তৈরি করা হয়েছে।
গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে ‘গণভোট অধ্যাদেশ, ২০২৫’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে গণভোট অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারণসহ ভোট অনুষ্ঠানের বিস্তারিত বিষয় এ অধ্যাদেশে যুক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর গতকাল বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বিষয়টি জানান। এ সময় নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতির বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট যেমন একই দিনে হবে, দুটি নির্বাচনের তফসিলও একই সঙ্গে ঘোষণা করা হবে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা আর গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন।
গণভোট অধ্যাদেশ অনুমোদন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুসারে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে দেশের মানুষের মতামত বা সম্মতি জানার জন্য গণভোট আয়োজনে এ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ বক্স থাকবে। যারা এতে সম্মতি জানাবেন তারা ‘হ্যাঁ’ এবং যারা জানাবেন না তারা ‘না’ ভোট দেবেন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লিখিত চারটি প্রস্তাবের জন্য এই ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে ভোটাররা অধিকতর সম্মত হওয়ার ভিত্তিতে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দেবেন।
অধ্যাদেশের বিধানগুলো তুলে ধরে উপদেষ্টা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটকেন্দ্রই হবে গণভোটের ভোটকেন্দ্র। সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণকারী সব কর্মকর্তা গণভোটেরও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় হবে গণভোটের ভোটগ্রহণেরও সময়। গণভোটের ব্যালট সংসদ নির্বাচন থেকে ভিন্ন হবে। ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্য গণভোটের ব্যালট রঙিন হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত সিলমোহর গণভোটেও ব্যবহার হবে।
গণভোটেও পোস্টাল ব্যালটের ভোট দেওয়া যাবে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ভোটগণনা এবং ফলাফল ঘোষণাসহ অন্যসব ক্ষেত্রেও জাতীয় নির্বাচনের বিধানগুলো গণভোটে প্রযোজ্য হবে।
তিনি জানান, কোনো কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হলে নির্বাচন কমিশন (গণভোটের ক্ষেত্রে) যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হয়, অন্যান্য ভোটকেন্দ্রের ফল দিয়ে গণভোটের ফল নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তখনই কেবল কমিশন ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেবে। কমিশন যদি মনে করে যেসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, তাছাড়াই গণভোটের ফল নির্ধারণ করা যাবে, তাহলে ওই সব কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণের দরকার পড়বে না।
গণভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় বিধি, নির্দেশনা ও পরিপত্র প্রণয়ন করতে পারবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে।
একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, এবার আমাদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়। তবে আমরা দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে উৎসাহ দেখছি, তাতে দুটি চ্যালেঞ্জই ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে আশা করি।
চারটি প্রশ্নে গণভোটে জনগণ বিভ্রান্ত হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে এটি শুরু হবে। নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকেও এটি করা হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনে সবার সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরো বলেন, প্রায় ২০ বছর পর দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। চ্যালেঞ্জ থাকলেও আশা করি আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট করতে পারব।
গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের তফসিলও একই দিনে হবে বলে আইন উপদেষ্টা জানান।
মনে হয় না ভারতের প্রবাসীরা নিবন্ধিত হবে
ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে এক গণমাধ্যমকর্মী জানতে চান, ভারতের প্রবাসীরা ভোট দেবেন কি না? এর জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আপনি ভারতের প্রবাসী কয়েকজনের ব্যাপারে হয়তো জানতে চাচ্ছেন। এটা নির্বাচন কমিশন দেখবে। আমার মনে হয় না ওনারা ভোট দিতে নিবন্ধিত হবেন।
অবশ্য এ সময় ইসি সচিব জানান, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ‘লকড’ আছে। যাদের পরিচয়পত্র লকড, তাদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ নেই।
নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো গণভোটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে আইন উপদেষ্টা বলেন, জনগণের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় রয়েছে। উচ্চকক্ষের বিষয়টি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য আমরা অসহনীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দল বা অন্যরা যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করেন। তবে আমরা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন, সেটা তাদের ব্যাপার। গণভোটে সবকিছুই বিবেচনা করা হয়েছে। এখানে যে চারটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করে ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে অধিকতর সম্মত হলে ‘হ্যাঁ’ দেবেন আর অধিকতর অসম্মত হলে ‘না’ ভোট দেবেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে ইসির প্রত্যাশা
নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করছি। আশা করছি ডিসেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে এটি চূড়ান্ত করতে পারব। এছাড়া সব নির্বাচনি সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো আমরা ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে জড়ো করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে দেব। শেষদিকে যাতে চাপ না পড়ে, সেজন্য এগুলো আমরা আগেভাগে পৌঁছে দেব।
তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাদা কাগজে কালো রঙের প্রিন্ট করে ব্যালট তৈরি করা হয়েছে। গণভোটের ব্যালটের ক্ষেত্রে আমরা রঙিন কাগজ ব্যবহার করব। ওই কাগজের সঙ্গে দৃশ্যমান রঙের প্রিন্ট করা হবে।
সচিব জানান, পোস্টাল ভোটের জন্য প্রবাসীদের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছি। দেশের ক্ষেত্রে আমরা আরেকটু পরে শুরু করব।
এ পর্যন্ত ৩১ হাজার ৮০১ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা জানান, আশা করি এ সংখ্যা কয়েক লাখ হবে।
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র বা বুথ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে কি না, তা পর্যালোচনা করতে ২৯ নভেম্বর মক ভোটের আয়োজন করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ওই মক ভোটে কতটুকু সময় প্রয়োজন হয়, সে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।