পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দলগতভাবে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা পেয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। এ ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে কমিশন।
নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দিন শেখ হাসিনার পিলখানায় যাওয়ারও কথা ছিল কিন্তু কেন যাননি সেটিও উঠে এসেছে তদন্ত কমিশনের জবানবন্দিতে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনকে দেওয়া ১৮ নম্বর কয়েদি সাক্ষী মোহাম্মদ আব্দুল মতিনের দেওয়া জবানবন্দিতে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
জবানবন্দিতে মতিন বলেন, বিডিআর সদর ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মোস্তাক ২৫ ফেব্রুয়ারির ২/১ দিন আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মেজর শোয়েব মো. তারিক উল্লাহ (অব.) কে সতর্ক করেন যেন ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় না আসেন। মেজর শোয়েব খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে—শেখ হাসিনা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি পিলখানায় যাবেন না।
এদিকে বিডিআর সদর দপ্তরে কর্মরত দরজি আকাশ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের জন্য ইউনিফর্ম বানাতে তার অফিসে গমন করেন এবং তার শরীরের মাপ নিয়ে আসেন। সোহেল তাজ এর ইউনিফর্ম বানানোর জন্য সদর রাইফেল ব্যাটালিয়ন এর মেজর মোস্তাক তাকে নির্দেশ দেন। ইউনিফর্মের জন্য মাপ নিতে বিডিআর হত্যাকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ডিএডি তৌহিদ আকাশকে সোহেল তাজের অফিসে নিয়ে যান। সেখানে সোহেল তাজের শরীরের মাপ নিয়ে তার কিছুদিন পরেই তিনি ইউনিফর্ম তৈরি করে সোহেল তাজ এর অফিসে পৌঁছে দেন।
আকাশের ভাষ্য মতে— সোহেল তাজের জন্য বানানো ইউনিফর্মে কোনো র্যাংক লাগানো হয়নি কিন্তু ডিপ সাইন ছিল। ইউনিফর্ম পৌঁছে দেয়ার দিন আকাশের সাথে সোহেল তাজ এর দেখা হয়নি।
আকাশ আরো জানান—যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ প্যারেড দেখতে আসবেন বলে তার নিজের জন্য একটি ইউনিফর্ম বানাচ্ছেন, এমন অভূতপূর্ব ঘটনা অন্যান্য অফিসাররা জানতে পারলে তাদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করে এবং তারা অনেকেই ইউনিফর্মটি দেখেন, যেমন : হত্যাকাণ্ডে শহিদ কর্নেল আনিস, মেজর হুমায়ুন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। এই নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ১১ মাস ধরে তদন্ত করে গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিশন।