আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) ঐতিহাসিক রায়ে উঠে এসেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অন্যদের ওপর জুলুম-নিপীড়নের প্রসঙ্গ।
গত সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ে এ প্রসঙ্গ উঠে আসে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শোষণ, নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অধিকার অস্বীকার এবং ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার অপচেষ্টার কথাও উঠে আসে।
রায়ের একটি অংশ পাঠ করে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র্য, সরকার ও ক্ষমতাশালী মহলের অহংকার-নিপীড়নের অবসান হবে এবং মানুষ স্বাধীনতা, সুখ ও সব মৌলিক অধিকার ভোগ করবে। কিন্তু তাদের এসব প্রত্যাশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিজ্ঞ প্রসিকিউটর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদী একটি দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তৎকালীন আওয়ামী সরকার শোষণ, নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অধিকার অস্বীকার করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার দিকে মনোনিবেশ করেছিল। একই সঙ্গে বাকশাল গঠন করে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল আওয়ামী লীগ।
এ সময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের ওপর আওয়ামী নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা সমালোচক, লেখক, সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটির সদস্য, আইনজীবী ও বিচারকদের ওপর দমন-পীড়ন চালান এবং তাদের অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এবং বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদ মাহমুদুর রহমান, রাজনীতিক ও সাংবাদিক পিনাকি ভট্টাচার্য, শফিক রেহমান, ইলিয়াস হোসাইন, কনক সরওয়ার, মুশফিকুল ফজল আনসারী, অলিউল্লাহ নোমান, শাহেদ আলম, জাওয়াদ নির্ঝর, তাসনিম খলিল, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই সরকারের অন্যায়, দমন-পীড়ন ও বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করার কারণে দেশত্যাগে বাধ্য হন।
রায়ে বিচারপতি শফিউল আলম আরো বলেন, ‘তৎকালীন সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের গৌরবময় সেনাবাহিনীকে দুর্বল ও বিলুপ্ত করার পরিকল্পনা করে এবং সেই লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে রক্ষীবাহিনী গঠন করে। একইভাবে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকার নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, মিথ্যা মামলা, কারাবন্দি করা ও জোরপূর্বক গুমসহ একই ধরনের কাজ করেছে। এ সময় বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়।’