সাড়ে ১৫ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্জনগুলো তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের জবাবে একগুচ্ছ সাফল্য তুলে ধরেন তিনি। তিনি জানান, এই সরকার তার লক্ষ্য অর্জনে অন্য সরকারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে।
পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘নামেই অন্তর্বর্তী সরকার, কাজে সবদিক থেকেই এক ধরনের এনজিও-গ্রাম—একটি গ্রাম-স্তরের সংগঠন! অনেকের দৃষ্টিতে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন। এতটাই দুর্বল যে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এর সঙ্গে পারস্পরিক ট্যারিফ ব্যবস্থার দিকে এগোতে চায়নি!’
‘এই সরকারের নেতারা ভীতু! ৫০০ দিনে ১৭০০-এর বেশি বিক্ষোভের সময়ও রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে! তারা নবীন ও অদক্ষ—আইন পাশ করা তো দূরের কথা, প্রয়োগ করতেও হিমশিম খায়! ছোট বা অজ্ঞাত গোষ্ঠীগুলোর চাপেও অন্তর্বর্তী সরকার বারবার ন্যুয়ে পড়েছে! গত ১৫ মাস ধরে এই সরকারকে জড়তা ও অযোগ্যতার অভিযোগ তুলেছে। অনেকেই ‘কিছু না করা, মাখন-খাওয়া দল’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে—যারা কপালগুণে ক্ষমতায় উঠেছিল, কিছুই অর্জন করেনি, আর এখন এক লজ্জাজনক নিরাপদ প্রস্থান খুঁজছে!’
‘তবুও, যখন আমি পেছনে তাকাই তখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলি—এটি বহু দশকের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা প্রায় সবকিছুই অর্জন করেছে, যা করার লক্ষ্য নিয়েছিল।
- এই সরকারের আমলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরেছে। বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা থেমে গেছে।
- মার্কিন ট্যারিফ চুক্তি একটি লবিং ফার্মও না নিয়েই সম্পন্ন হয়েছে।
- রেকর্ডসংখ্যক আইন মাত্র ১৫ মাসে পাশ হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে ব্যাপক শ্রম সংস্কার।
- জুলাই ঘোষণাপত্র একটি ঐতিহাসিক নতুন মঞ্চ তৈরি করেছে এবং জুলাই চার্টার এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা দিয়েছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম জাতীয় রাজনীতিকে রূপান্তর করতে পারে।
- সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ভবিষ্যৎ সরকারগুলো যাতে জামিন–বিষয়ক সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
- বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি সই করেছে। যা উৎপাদন খাতে রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি ইউরোপের একক বৃহত্তম বিনিয়োগ।
- নতুন বৈদেশিকনীতি কাঠামো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
- অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে এবং পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে।
- ব্যাংকিং খাতের লুটপাট কমেছে। টাকা স্থিতিশীল হয়েছে, এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে—খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে সাত-এ নেমে এসেছে।
- আদালতীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অতীত অপব্যবহারের জবাবদিহি শুরু হয়েছে। বহু প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের উদ্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনাকে তার জায়গা দেখানো হয়েছে!
- গুম বন্ধ হয়েছে। বহু বছর ধরে জাতীয় জীবনে আধিপত্য বিস্তারকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চরমপন্থি রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে এবং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ ঘটেছে—ফারুকি–ইফেক্ট দ্বারা জোরদার, যেখানে আগের অপব্যবহার নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারিগুলো ব্যাপকভাবে দেখা হয়েছে।
- র্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, অনানুষ্ঠানিক নীতিতে নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে।
- গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। গত ১৬ মাসে একটি সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ ঘটনারও খবর পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো লেখেন, ‘আমি আরো বলতে পারি। বাংলাদেশের কোনো সরকারের পক্ষেই এত কম সময়ে এত কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার এই পনেরো-সাড়ে পনেরো মাসে করেছে।’