বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট। তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৮তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর মাধ্যমে শিগগিরই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিনেটের অনুমোদনের তথ্য নিজেই নিশ্চিত করেছেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম লিংকডইনে এক পোস্টে ব্রেন্ট এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের অনুমোদন পেয়ে আমি সম্মানিত এবং এর জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ক্রিস্টেনসেনের নিয়োগকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক সংলাপ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানবাধিকার এবং আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে দুই দেশের পারস্পরিক যোগাযোগ আরো সক্রিয় হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক রূপান্তর, নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিস্থিতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত আগ্রহের প্রেক্ষাপটে নতুন রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। ক্রিস্টেনসেনের নেতৃত্বে ওয়াশিংটন–ঢাকা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতিপথ আরো স্পষ্টভাবে রূপরেখা পেতে পারে।
রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ মহল, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ফরেন সার্ভিসের ক্লাস অব কাউন্সেলরের একজন ক্যারিয়ার সদস্য। তিনি বর্তমানে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের বৈদেশিক নীতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্রিস্টেনসেন ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অস্ত্র স্থানান্তর অফিসের উপপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর আগে ফিলিপাইন, এল সালভাদর ও ভিয়েতনামে মার্কিন মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিস্টেনসেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়া নীতিবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির বিশেষ সহকারী, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির ফেলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোতে বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মনে করে, ক্রিস্টেনসেনের শক্তিশালী কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং একজন নেতা ও ব্যবস্থাপক হিসেবে সাফল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে তার বিস্তৃত অভিজ্ঞতা তাকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে।
ক্রিস্টেনসেন ন্যাশনাল ওয়ার কলেজ থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি টেক্সাস এঅ্যান্ডএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং রাইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্প্যানিশ, জার্মান, ফরাসি এবং ভিয়েতনামি ভাষায় কথা বলতে পারেন। এছাড়া পর্তুগিজ, ডেনিশ এবং জাপানি ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
ঢাকায় সবশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিটার হাস। তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন।