ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত মক ভোটিংয়ে একজন ভোটার গড়ে ৩ মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সাংবাদিকদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য দেন।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এবার দুটি ভোট হবে। ফলে সময়ের ব্যাপারে সবার একটু সংবেদনশীল হতে হবে। মক ভোটিংয়ে দেখা গেছে, একটা ভোটার গড়ে তিন মিনিট ৫২ সেকেন্ড সময় নিচ্ছে। যে ব্যালট না পড়ে ভোট দিচ্ছে, তার দুই মিনিট লাগছে। আর যে ব্যালট পড়ে ভোট দিচ্ছে, তার সাত-আট মিনিট লাগছে। এই বাস্তবতা আমরা জানি। কেন্দ্র বাড়বে না, বুথও বাড়বে না। ভোট ব্যবস্থাপনাকে আমাদের আরো স্মার্ট করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত। এখন সেই কাঠামোকে মেরামত, পুনর্গঠন ও সঠিক রূপে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা একটি ইমপোর্টেড সিস্টেমকে আবার অর্গানাইজ ও রি-স্ট্রাকচার করার কাজ করছি। এটি কোনো এক পক্ষের পক্ষে সম্ভব নয়; এটি সমগ্র জাতির উদ্যোগ হতে হবে। রাজনৈতিক দল, ভোটার, প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক-সবারই দায়িত্ব আছে।
সানাউল্লাহ বলেন, সাংবাদিকরা শুধু বিষয়কে স্পটলাইটে আনেন না-নির্বাচনকে সঠিক পথে রাখতে আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ট্রান্সপারেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি হলো সাংবাদিকরা। তাই আপনাদের জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
সাংবাদিকদের চাওয়া অনুযায়ী গণমাধ্যম নীতিমালায় পরিবর্তন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভুয়া সাংবাদিক প্রবেশ ঠেকাতে কিউআর কোডযুক্ত কার্ড দেওয়া হবে। সাংবাদিকরা যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করতে পারেন, সাক্ষাৎকার নিতে পারেন-এর সব সুযোগ বজায় থাকবে। তবে ভোটকক্ষের ভেতরে প্রবেশে একটি যৌক্তিক সীমাবদ্ধতা থাকবে, কারণ কক্ষ ব্যবস্থাপনায় এটি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা অনির্দিষ্ট সংখ্যক কেন্দ্র বা বুথ বাড়াতে পারব না। তাই বুথ ব্যবস্থাপনাকে আরো স্মার্ট করার দিকেই হাঁটছি। আগামী রোববার কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমরা একটা ভালো নির্বাচন চাই। শতাব্দীর ভালো নির্বাচন চাই।
গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো একটা রাজনৈতিক দলের ম্যানিফেস্টে ২৫ থেকে ৩০টা প্রস্তাবনা থাকে। আমরা কি সবগুলো সমভাবে সমর্থন করি? না। হয়তো ২০টার মধ্যে ১৫টা করি, পাঁচটার ব্যাপারে আপত্তি থাকে কিন্তু আমরা টোটাল প্যাকেজটাকে দেখি। তারপর তুলনামূলকভাবে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তটা দেই। এ বিষয়টাও (গণভোট) তাই যে, চারটা প্রস্তাবনার ভেতরে আমি হয়তো দুটিতে একমত, একটিতে আধা-আধি, আরেকটাতে একমত না। কাজেই পুরো প্যাকেজটা দেখে তারপরে আবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, হ্যাঁ অথবা না।
গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে, এই জায়গায় আপনারা আমাদেরকে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা।
ইসি সচিব আরো বলেন, নির্বাচনি জোয়ারে আমরা আছি। আমাদের মূল দায়িত্বটা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানগুলোকে স্পষ্ট করে সামনে তুলে দেওয়া। কারণ আমরা একটা ভালো নির্বাচন চাই। শতাব্দীর ভালো নির্বাচন চাই। এটা আমাদের সবারই প্রত্যাশা। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা এটা নিজেও বলেছেন বারবার করে এবং আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ।