পাঁচগুণ বেশি অর্থ আদায়
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ৫২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ৬ রিক্রুটিং এজেন্সির ১১ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার আসামিরা হলেন, মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক রুহুল আমিন, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের মালিক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও এমডি মো. বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ও এমডি মো. আলমগীর কবীর এবং থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন ও পরিচালক শামসের আহমেদ এবং মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী ও এমডি শাহানা ফেরদৌস।
দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার পরিবর্তে ৩১ হাজার ৩৩১ জনের কাছ থেকে পাঁচগুণ বেশি অর্থ আদায় করে তারা বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগে গত মঙ্গলবার মামলাগুলো অনুমোদন করেছে দুদক। ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।
দুদক জানায়, মেসার্স আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে ৭ হাজার ৪৩০ জনের কাছ থেকে ১২৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রুহুল আমিনকে প্রথম মামলায় আসামি করা হচ্ছে। মেসার্স মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৪৮৯ জনের কাছ থেকে ৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের নামে দ্বিতীয় মামলা হয়েছে। এ মামলায় কিরণের স্ত্রী ও মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের এমডিকেও আসামি করা হয়েছে। সাদিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩২১ জনের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ৬২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানকে তৃতীয় মামলার আসামি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইমপেরিয়াল রিসোর্স লিমিটেডের মাধ্যমে ৮ হাজার ১০১ জনের কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসাইন ও এমডি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর রামে মামলা হয়েছে। আরআরসি হিউম্যান রিসোর্ট সার্ভিস লিমিটেডের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০২ জনের কাছ থেকে ৮৭ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, এমডি মো. আলমগীর কবীরকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, থানেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির ৩ জনকে আসামি করে মামলা হচ্ছে। তারা হলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডি আব্দুল্লাহ শাহেদ, পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন নোমানী ও এমডি শমসের আহমেদ। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি)/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা অনুসারে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন অনিয়ম ও সিন্ডিকেটের কারণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল মালয়েশিয়া। ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করে দেশটি। তখন শ্রমিক ভিসায় দেশটিতে যেতে সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। ২০২২ সালে এক অফিস আদেশে এ খরচ নির্ধারণ করেছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।