ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অকার্যকর ও সেবার বিকাশে বাধা হয়ে থাকা পুরোনো লাইসেন্স নীতিতে আর ফেরার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং–২০২৫’ নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। যা বাস্তবায়নের ফলে আগের সরকারের আমলে দেওয়া বৈধ–অবৈধ তিন হাজারের বেশি লাইসেন্স পুনরায় পর্যালোচনার আওতায় আসবে।
শনিবার দুপুরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন লাইসেন্সগুলোর ফি–চার্জ, রেভিনিউ শেয়ারিং সম্পর্কিত যে নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে, তা এখনো খসড়া। অংশীজন, অপারেটর ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আরও আলোচনা করেই এটি চূড়ান্ত করা হবে। নীতিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের দাম বাড়বে—এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পুরোনো লাইসেন্স ব্যবস্থা দেশের ঘরে ঘরে, ব্যবসায় বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত ফাইবার সংযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার পৌঁছানোর হার এখনো মাত্র ২২ শতাংশ। পর্যাপ্ত ফাইবার নেটওয়ার্ক না থাকায় ডেটা ব্যবহারের পরিমাণও ভারতের তুলনায় মাথাপিছু প্রায় এক-পঞ্চমাংশে সীমিত রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নতুন নীতিতে টেলিযোগাযোগকে কেবল ‘কানেকশন-ভিত্তিক’ সেবা থেকে ‘ডিজিটাল সার্ভিস’-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এখনো মোবাইল অপারেটরদের সেবা মূলত ফোন বান্ডেল এবং আইএসপির প্যাকেজনির্ভর। কিন্তু এডটেক, হেলথটেক, ফিনটেক, এগ্রিটেক বা লজিস্টিক্স টেকের মতো স্টার্টআপভিত্তিক সেবাগুলো মূলধারায় আসেনি। এ ছাড়া আইএসপি, মোবাইল ইন্টারনেট, এনটিটিএন বা আইআইজি—কোনো ক্ষেত্রেই কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভিত্তিক ইন্টারনেট বা ডিজিটাল সেবা চালু হয়নি। ‘সিকিউর ইন্টারনেট’-এর ধারণাও কার্যকর হয়নি। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই হার্ডওয়্যার সিকিউরিটি মডিউল, প্যাম, সফটওয়্যার, ফায়ারওয়াল—এসব আধুনিক নিরাপত্তা সুবিধা নেই, যা পুরো খাতকে অনিরাপদ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি সম্প্রসারণে বর্তমানে থাকা ২৬ ধরনের লাইসেন্স ব্যবস্থা বাতিল করে সহজ ও কনভার্জড লাইসেন্স কাঠামো আনার বিকল্প নেই বলে মনে করছে সরকার। দেশীয় বাজার বাস্তবতা ও মনোপলির ঝুঁকি বিবেচনায় সবাইকে সব সেবা দেওয়ার সুযোগ পুরোপুরি উন্মুক্ত না করলেও নতুন নীতিতে চার স্তরের লাইসেন্স প্রতিযোগিতা বাড়াবে। অপারেটরদের জন্যও বাড়বে কার্যক্রমের পরিসর। আগের নীতিতে সাত ধরনের লাইসেন্স দিয়ে তার ছয়টি একই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সুযোগ ছিল, যাকে ‘দুর্বৃত্তপনা’ আখ্যা দিয়ে বলা হচ্ছে—নতুন ব্যবস্থায় এ ধরনের ঝুঁকির জায়গা বাদ দেওয়া হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী কমাতে লাইসেন্সিংয়ের স্তরও কমানো হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব কমবে না, বরং ব্যবহারকারী সুলভ মূল্যে সেবা পাবে।