শুরু হলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এ মাসেই অর্জিত হয় বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের বুকে জন্মলাভ করে বাংলাদেশ নামে এক নতুন ভূখণ্ড। পূর্ণতা পায় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আত্মপরিচয় লাভ করে বাংলাদেশের জনগণ।
সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি কয়েক হাজার বছরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত বিজয় আসে।
বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ এবং যৌথবাহিনীর জল, স্থল ও আকাশপথের জোরালো আক্রমণের মুখে ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
দীর্ঘ ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর আসে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। বিশ্বের বুকে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় লাভ করে বাংলাদেশের মানুষ। মাসটি একদিকে যেমন আনন্দ ও গৌরবের, একইসঙ্গে বেদনাবিধুরও।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই জাতিকে মেধাহীন করতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নেশায় মেতে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনীর নীলনকশা বাস্তবায়নে দেশি দোসরদের সহায়তায় ১৪ ডিসেম্বর রাতে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
মাত্র দুদিন পরই ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী। শেষ হয় হাজার বছরের বঞ্চনার ইতিহাস। বিজয়ের মাসটি প্রতিবছর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়।
লাখো শহীদ আর মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনের পরও শুরু থেকেই নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। জাতীয় জীবনের বহু সংকট পার করে দেশকে এগিয়ে নিতে এখনো দেশের মানুষ আশায় বুক বাঁধে।