হোম > মতামত

যেভাবে ভারতকে বদলে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন

মুজিব মাশাল ও হারি কুমার

আগস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণটা দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ ছিল সেটা। যে গোষ্ঠীটি তার জীবনকে একটা রূপ দিয়েছে, তাদের সম্মান জানিয়েছেন তিনি ওই ভাষণে। এই গ্রুপটা এখন ভারতকেও বদলে দিচ্ছে।

মোদি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে জোরালো ধন্যবাদটা জানান বক্তৃতায়। জনগণ এই সংগঠনকে বলে আরএসএস। কট্টর ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী এরা। মোদি যখন বালক, তখন থেকেই তার জীবনে আরএসএসের প্রভাব। ১১ বছরের শাসনামলে এটা ছিল তার সবচেয়ে বড় নমস্কার। আরএসএসের বয়স ১০০ হলো এই বছর। কতটা শক্তিশালী হয়েছে তারা, সেটাও এবার বোঝা গেল।

আরএসএসের শুরুটা হয়েছিল গোপন সংগঠন হিসেবে। হিন্দুদের অহংকার ফিরিয়ে আনা ছিল তাদের লক্ষ্য। ভারতে দীর্ঘ সময় মুসলিমদের শাসন ছিল। ব্রিটিশদের শাসন ছিল। ১৯৩০ ও ১৯৪০-এর দশকে আরএসএসের তৎকালীন নেতারা ইউরোপের ফ্যাসিবাদী দলগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিত। বহুবার নিষিদ্ধও হয়েছে তারা। গান্ধীর হত্যার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ছিল। তারপরও তাদের আকার বেড়েছে। এখন তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দক্ষিণপন্থি শক্তি।

মোদি আরএসএসের সেরা সদস্যদের একজন। দশ বছরের বেশি ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। আরএসএসের বিরাট সাফল্য এনে দিয়েছেন। অনেক নেতারাই বলেছেন, এতটা স্বপ্ন তারা কখনো দেখেননি। মোদিকে নিয়ে কখনো কখনো উত্তেজনা হয়েছে। কিন্তু গোষ্ঠীটি তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা ভারতের সেক্যুলার প্রজাতন্ত্রকে শক্তিশালী ‘হিন্দু-প্রথম’ জাতিতে রূপ দিতে চায়।

ভারতের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঢুকে পড়েছে আরএসএস। তাদের শিকড় অনেক গভীরে। মোদি চলে যাওয়ার পরও তাদের শক্তি থাকবে। বহু গোষ্ঠীর নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে এরা। সমাজে, সরকারে, আদালতে, পুলিশ, মিডিয়া ও স্কুলগুলোয় সদস্যদের ঢুকিয়ে দেয়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে। আবার ভেঙেও দেয়। তরুণদের মধ্যে তারা আনুগত্য গড়ে তুলেছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী কাজের মাধ্যমে তারা গুরুত্ব অর্জনের চেষ্টা করে।

আরএসএস এখনো গোপন সংগঠনের স্টাইলেই কাজ করে। তবে আগের চেয়ে অনেক প্রকাশ্য এখন তারা। তাদের সদস্যরা এখন সবখানে।

মোদির দল বিজেপি যখন নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে, তখনই আরএসএসের শক্তি দেখা গেছে। দলের প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করে তারাই। হিন্দু অ্যাকটিভিস্ট যখন মুসলিম এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায় অথবা চার্চে হামলা করে, তখনো আসলে আরএসএসের শক্তিটাই দেখা যায়।

এই গোষ্ঠীর শাসন ভারতকে গভীরভাবে ভাগ করে ফেলেছে। ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষ ভারতে। ধর্মের ভিত্তিতে তারা এই জনগোষ্ঠীকে ভাগ করেছে। ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিম আর খ্রিষ্টানকে আরএসএস বহিরাগত মনে করে। এরা নাকি এসেছে আক্রমণকারীদের মাধ্যমে। তাদের নিজেদের জায়গা খুঁজে নিতেও বলে তারা।

১৯৮০-এর দশকে আরএসএসের রাজনৈতিক শাখায় যোগ দেন মোদি। সংগঠক হিসেবে সুনাম ছিল তার। আরএসএসকে বড় একটা নদী মনে করেন তিনি। বহু ধারা এই নদী থেকে বেরিয়ে এসেছে। ভারতীয় জীবনের সব অংশকেই তারা স্পর্শ করেছে। ঐতিহ্যের মূল্যবোধ ধরে রাখার কারণে আরএসএসের প্রশংসা করেন তিনি। তাদের হাতে অনেকটাই বদলে গেছে ভারত।

লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেন মোদি। সেদিন জোর বৃষ্টি ছিল। তিনি বলেন, ‘সেবা, নিষ্ঠা, সংগঠন এবং অতুলনীয় শৃঙ্খলাÑএগুলোই হলো তাদের বৈশিষ্ট্য।’

আরএসএসকে বড় সামাজিক সেবা গোষ্ঠী মনে হবে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড চালায় তারা। সারাজীবনের স্কাউট হিসেবে প্রশিক্ষণ দেয়। তারা ব্যায়াম করায়। আধ্যাত্মিক আলোচনা করে। এগুলো তাদের জনবল বাড়াতে সাহায্য করে। সমাজে পরিবর্তনও চাপিয়ে দেয়। সব জায়গায় তাদের প্রভাব ছড়ায়।

বিজেপি মোদির দল। নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় দল দাবি করে তারা। ১০০ মিলিয়নের বেশি সদস্য তাদের। আরএসএসের অনেক গ্রুপ আছে। একটা হলো শিক্ষার্থীদের শাখা। আরো আছে ট্রেড ইউনিয়ন। কৃষকদের ইউনিয়ন। পেশাজীবীদের নেটওয়ার্ক। ধর্মীয় গ্রুপ। দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এরা একসঙ্গেও বসে। হিন্দু আইডিয়াগুলো এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষমতা তাদের এসব ভিশনকে স্থায়ী রূপ দিতে সাহায্য করে।

আরএসএসের এক সহযোগী বলেছেন, ‘আমরা ক্ষমতা পেলে সবকিছু ঠিক করে দেব। তার নাম দুর্গা নন্দ ঝা। তিনি একজন একাডেমিক। আরএসএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি থিংক ট্যাংক চালান তিনি।’

আরএসএসকে বিভিন্ন সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারা এমন সমাজ চায়, যেটা হবে সেক্যুলার ধারণার বিরোধী। ভারতের জনগণের ওপর এখন তাদের ক্ষমতা অনেক। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডের প্রকাশ্য দলিল কম। সেই রকম রেকর্ড নেই। তাদের সম্পদ ছড়িয়ে আছে বহু ছোট ছোট গ্রুপ আর ট্রাস্টের হাতে।

মুম্বাইয়ের এক নেতা বললেন, আরএসএস কোনো কিছুরই মালিক না। আমাদের আছে শুধু মানুষ। তার নাম ড. নিশীথ ভাণ্ডারকার।

নেতারা এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের কথা বলছেন। কিন্তু মাঠের বাস্তবতাটা ভিন্ন। তরুণ চরমপন্থি নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে তারা স্বাভাবিক করে তোলে।

আরএসএসের বিভিন্ন নজরদারি গোষ্ঠী ধর্ম দিয়ে জনজীবন নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা মুসলিম দোকানপাট বর্জন করছে। হিন্দু উৎসবগুলো শক্তি প্রদর্শনীর জায়গা হয়ে গেছে। ধর্মান্তরের অজুহাতে তারা গির্জায় হামলা করছে। ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে বাধা দিচ্ছে। মুসলিম কবর খুঁড়ে লাশ তুলে ফেলছে। ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার কারণে ট্রেন থেকে দম্পতিকে টেনে নামানো হচ্ছে। গরুর মাংসের ব্যবসা করায় খুন করা হচ্ছে।

আরএসএসের আইডিয়াগুলো পাঠ্যবইয়েও জায়গা পেয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তো আছেই। টিভিতে জোর বিতর্ক হচ্ছে। আদালতে মামলা হচ্ছে। যে আদালত একসময় সেক্যুলার বিশ্বাসকে সুরক্ষা দিত, সেগুলো বদলে গেছে।

গত ডিসেম্বরে আরএসএসের একটি কট্টরপন্থি গোষ্ঠী এলাহাবাদ হাইকোর্টে সেমিনার করেছিল। আদালতটা বড় আর পুরোনো। বিচারপতি শেখর কুমার যাদব সেখানে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছেন, হিন্দুরা তাদের ভুলগুলো শুধরে দিচ্ছে। মুসলিমদের ‘ভুলগুলো’ও তিনি তুলে ধরেন। মুসলিমদের উদ্দেশে খারাপ ভাষাও ব্যবহার করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার এ কথা বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, এটা ভারত। আর এই দেশটা চলবে সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছা অনুযায়ী।’

মূল ভিত্তি

মুম্বাইয়ে আগস্টের এক সকালে মানুষ সকাল-সকাল এক পার্কে জড়ো হয়েছে। সময়টা তখনো অন্ধকার। বৃষ্টি হচ্ছিল। জন বারো মানুষ ছিল সেখানে। তারা হলো প্রপার্টি ডিলার। বিজ্ঞাপনের এজেন্ট। একজন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। ৫ থেকে ৫৫ বছর ধরে তারা আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত।

তারা একটা গেরুয়া পতাকার সামনে মাথা ঝোঁকাচ্ছিল। নেতাদের সম্ভাষণ জানাচ্ছিল। গোল হয়ে গান করছিল। এক প্রশিক্ষক বাঁশি বাজালেন। দ্রুত শরীর স্ট্রেচ করলেন তারা। সামরিক কায়দায়। তারপর শুরু হলো মার্চ।

প্রতিটি সকালই এভাবে কাটছে। মানুষ সারি বেঁধে দাঁড়াচ্ছে। ডান হাত তুলছে। তালু নিচের দিকে। পতাকার সামনে নত হচ্ছে তারা।

এই ইউনিটগুলোকে বলা হয় শাখা। এরাই আরএসএসের ভিত্তি। ১৯২৫ সালে এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক ডাক্তার।

ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য লড়েছিল ভারত। ডানপন্থি চিন্তাবিদরা এটাকে বড় প্রয়োজন মনে করেছিলেন। হিন্দুত্ববাদের পুনরুজ্জীবনের জন্য। মুসলিমদের অতীত শাসনকাল তাদের পীড়া দিত। সেই সূত্রেই এসেছিল ব্রিটিশ শাসন। একেবারে তলানি থেকে সমাজে কাজ শুরু করেছিল আরএসএস।

এখন এ ধরনের শাখা আছে ৮৩ হাজারের মতো। এরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত। স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত এদের বিস্তার। হিন্দুদের তারা আরএসএসের আদর্শে গড়ে তোলে। প্রতিদিনের অভ্যাস গড়ে তোলে। বন্ধু আর গ্রুপের মাধ্যমে পরস্পরকে যুক্ত করে।

শাখাগুলো মেধাবীদের খুঁজে বের করে। নেতা নিয়োগ দেয়। মোদিও এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বালক বেলায়। পরে পূর্ণকালীন কর্মী হন। নিয়োগকারীরা অন্যান্য গ্রুপও শুরু করেছে। তাদের নেটওয়ার্ক বিশাল।

আরএসএসের বর্তমান প্রধান মোহন ভগত। তিনি বলেছেন, সব পরিস্থিতিতেই স্বেচ্ছাসেবকরা এই সংগঠন টিকিয়ে রেখেছে।

প্যারিসে আরএসএস নিয়ে গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন গ্রুপ তৈরি করে এরা। এদের কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত রাখে। আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত আড়াই হাজার গ্রুপের খোঁজ পেয়েছেন তারা। সব মিলিয়ে বিশাল এক নেটওয়ার্ক।

প্রথমদিকের নেতাদের লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার। ভারত শুধু হিন্দুদের জন্য।

১৯৩৯ সালে লেখা বইয়ে আরএসএসের দীর্ঘদিনের প্রধান এমএস গোলওয়াকার আদর্শ হিসেবে হিটলারের ইহুদি নিধনের কথা বলেছেন। বলেছেন, সংস্কৃতিতে কোনোভাবেই মিশ্রণ হতে পারে না।

তিনি বলেছেন, অহিন্দুরা তখনই থাকতে পারবে, যদি তারা পুরোপুরি বশ্যতা স্বীকার করে। তাদের কোনো অধিকার থাকবে না।

১৯৪৭ সালে মুসলিমদের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়। হিন্দু ডানপন্থিদের সেটা ক্ষুব্ধ করে। ভারত হিন্দু রাষ্ট্র নয়। তারা গান্ধীকে এ জন্য দায়ী করে। কট্টর ডানপন্থিদের একজন তাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। সেই ঘাতকের সঙ্গে আরএসএসের যোগ ছিল। যদিও তারা দাবি করে সে দল ছেড়ে দিয়েছিল। এরপর আরএসএস নিষিদ্ধ ছিল অনেক দিন।

সেক্যুলার ভারতের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল আদর্শভিত্তিক। বহিরাগতদের আক্রমণ আর পুরোনো আঘাত তারা অগ্রাহ্য করেছিল। সেটাকে পরে পুঁজি করে বড় হয়েছে আরএসএস।

১৯৫০-এর দশকে রাজনীতিতে সক্রিয় হয় তারা। সেটাই পরে বিজেপি হয়ে ওঠে। ১৯৭০-এর দশকে বড় সুযোগ আসে তাদের।

ক্ষমতায় উত্থান

১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হাতে গণতন্ত্র থমকে যায়। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকেন তিনি। আদালত রায় দেয় তার বিরুদ্ধে। তার শাসন আরএসএসের ক্ষতি করেছিল। বহু নেতা জেলে গিয়েছিল। তখন তারা সমবেদনা পেয়েছিল। গণতন্ত্রের ত্রাতা হিসেবে নিজেদের দাঁড় করিয়েছিল তারা।

দলের পুরোনো এক সদস্য বলেন, তার মা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিলেন। বাবা ছিলেন আরএসএসে। কারাভোগের পর মার মনোভাব বদলে যায়। ৮৪ বছর বয়সি এই ব্যক্তির নাম এসএম বাঘাদকা। বাড়ি নাগপুর।

১৯৯০ দশকে অযোধ্যা ইস্যু নিয়ে প্রচারে বড় শক্তি অর্জন করে আরএসএস। রাজনীতি পুরোপুরি বদলে দেয় তারা।

বাবরি মসজিদ ছিল সেখানে। আরএসএস দাবি করে এর নিচে ছিল রামমন্দির। দীর্ঘ সময় মামলা চলেছে আদালতে। হিন্দু ডানপন্থিরা সেখানে সক্রিয় ছিল প্রবলভাবে।

বিজেপি নেতারা সেই সময় ছাদখোলা ট্রাকে সফর করেছেন। ঘৃণা উসকে দিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাইÑহিন্দুদের এক করো। অতীতের আক্রমণকারীদের মতো। জয় শ্রী রাম স্লোগান তোলো।

১৯৯২ সালে আরএসএসের উগ্রবাদীরা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়। হাতুড়ি-শাবল আর ঘৃণা ছিল তাদের অস্ত্র।

আবার নিষিদ্ধ হয় তারা। কিন্তু কৌশলটা তাদের জন্য কাজ করেছে। পুরোনো ক্ষতকে পুঁজি করে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জঙ্গিরা ফিরে এসেছে। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তারা অতীতের শত্রুর মতো আচরণ করেছে।

১৯৯০-এর দশকে জোটের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসে। এককভাবে ক্ষমতায় আছে ২০১৪ সালে। পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান মোদি। এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু হয় তাদের।

অযোধ্যায় বিশাল রামমন্দির নির্মাণ করেন মোদি। আদালতের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেন তিনি। দিল্লিতে শুরু হয় সরাসরি শাসন।

দশ বছরে আরএসএসের তৎপরতা দ্বিগুণ বেড়েছে। নেতাদের চলনবলনে এসেছে বিলাসিতা। দিল্লিতে নতুন বিশাল ক্যাম্পাস হয়েছে তাদের। তিনটি সুউচ্চ টাওয়ার। বড় ধরনের নিরাপত্তা পাচ্ছেন ভগত।

তিনি বলেছেন, সমাজ তাদের কথা শুনেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি খাতে সূক্ষ্মভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ভগত। তিনি বলেছেন, প্রকাশ্যে গন্ডগোল করা যাবে না। সংগ্রাম আছে, থাকবে। কিন্তু গন্ডগোল করা যাবে না।

প্রতিদিনের কাজকে ক্ষমতার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন মোদি। এক স্বেচ্ছাসেবক বললেন, মোদি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। সবকিছু ভালোই বোঝেন তিনি।

প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি সড়ক

অক্টোবরে শতবর্ষ সম্মেলন হলো আরএসএসের। আগের গোপনীয়তা আর নেই। টিভিতে পুরো অনুষ্ঠানের প্রচার হলো। রাজনীতিবিদরা ইউনিফর্ম পরে স্যালুট জানাল। বড় বড় তারকারা শুভেচ্ছাবাণী দিলেন। দালাই লামাও দিলেন।

তাদের সদর দপ্তর নাগপুরে। সেখানে হাজারো মানুষের মহড়া দেখলেন ভগত। গাইলেন। যোগ ব্যায়ামে অংশ নিলেন। জনসমাগম ছিল বিশাল। ছিলেন কূটনীতিকরাও।

ভগত বক্তৃতা করলেন। লক্ষ্যের কথা পরিষ্কার ভাষায় বললেন। ‘প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছাতে হবে। প্রতিটি সড়কে।’

কিন্তু তার সব কথারই দ্বিতীয় অর্থ থাকে। মুখের কথা আর বাস্তব কাজ হয় আলাদা।

হিন্দু বর্ণ ইস্যু নিয়ে কাজ করেন ভগত। ন্যায্য সমাজের কথা বলেন। নজরদারি হামলাকারীদের সমালোচনা করেন। অযোধ্যা ছাড়া অন্য কোনো মসজিদে হামলাকারীদের সমর্থন না দেওয়ার কথা বলেন।

কিন্তু সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে দেখা করতে পারে। সেখানে কী কথা হয় শোনা যায় না।

তাদের লক্ষ্য হিন্দু রাষ্ট্র গঠন। তিনি বলেন, তাদের নাকি ভুল বোঝা হচ্ছে। সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলেন তিনি। সর্বভারতীয় হিন্দু নিয়ে কথা বলেন।

অন্য সম্প্রদায়ের কথাও বলেন তিনি। সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ আসে। নিজের তিন সন্তানের খবর জানান। হিন্দুদের জন্মহার কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানান।

বক্তৃতায় ভিন্ন ধর্মকে আলিঙ্গনের কথা বলেন ভগত। ধর্মীয় উপাসনালয়কে শ্রদ্ধার কথা বলেন। কোনো সহিংসতা নয়। গুন্ডাগিরি নয়। এসব শোনা যায় তার বক্তৃতায়।

এরপর দরজা খুলে যায়। তিনি বলেন, ‘ভালো মানুষ আর তরুণদের সতর্ক নজর রাখতে হবে। সংগঠিত থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাধা দিতে হবে।’

উত্তর প্রদেশে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। বিরাট রাজ্য। ২০০ মিলিয়নের বেশি মানুষের বাস। মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির যোগি আদিত্যনাথ। মোদির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবেও তাকে দেখেন অনেকে।

হিন্দুদের বড় বড় সমাবেশে যোগ দেন আদিত্যনাথ। হেলিকপ্টার থেকে তীর্থযাত্রীদের উপর ফুল ছেটানো হয়। কিন্তু মুসলিমদের প্রকাশ্য অনুষ্ঠানগুলোয় পুলিশ বাধা দেয়। মুখে সেক্যুলারিজমের কথা বলেন তিনি। চর্চা করেন ভিন্ন আদর্শের। তিনি বলেন, বিশ্বাস কোনো প্রদর্শনীর জিনিস নয়। অথচ নিচে গেরুয়া বসন পরেন তিনি। শতবর্ষপূর্তির সময় রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তখন।

মুসলমানদের নবীর জন্মবার্ষিকীতে ‘আই লাভ মুহাম্মাদ’ সাইন বহনের কারণে তখন অনেককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বিক্ষোভ হয়েছিল। তাদের পিটিয়েছিল পুলিশ। হাজারের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। বুলডোজার দিয়ে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। যোগি আদিত্যনাথ নামকে তখন অনেকে বুলডোজার বাবা নাম দিয়েছিল। হিন্দুত্ববাদের সমর্থকদের ওপর কখনো এ ধরনের আচরণ করা হয়নি। তারা বিশাল সব সমাবেশ-বিক্ষোভ করেছে। ‘আই লাভ মহাদেব’ চিহ্ন নিয়ে ঘুরেছে। ‘আই লাভ ইয়োগি’ সাইনবোর্ডও ছিল অনেকের কাছে। এমনকি ‘আই লাভ বুলডোজার’ সাইনও ছিল।

নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে জুলফিকার হায়দার

নয়া বন্দোবস্তে ওসমান হাদির জবানবন্দি

নির্বাচন হতে যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ

একজন সেলজুক বায়রাকতার ও আমাদের মেধাবী তরুণরা

নয়া জমানার মুয়াজ্জিন ওসমান হাদি

আরেক জিয়া দেখতে চায় মানুষ

বাংলাদেশের গোয়েন্দা ব্যবস্থা : কাঠামোগত সংকট ও করণীয়

ওসমান হাদি : সংস্কৃতি, ক্ষমতা এবং গণতন্ত্রের সংগ্রাম

অধীনতাবিরোধী নতুন শক্তির উত্থান : লড়াই ও বিভাজন

বাংলাদেশের গণতন্ত্র : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

নির্বাচনি ইশতেহারে শিক্ষা কতটা গুরুত্ব পাবে?