হোম > মতামত

বাংলাদেশের গণতন্ত্র : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

আবু এন এম ওয়াহিদ

বাংলাদেশ ২০২৪ সাল থেকে এক নতুন রাজনৈতিক যাত্রাপথে প্রবেশ করেছে—যে যাত্রাপথের জন্ম হয়েছে অসন্তুষ্টি, বঞ্চনা ও ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষের দীর্ঘদিনের প্রতিরোধ থেকে। ছাত্রদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দেয়। বহু বছর ধরে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, বিরোধী মতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের বাস্তবতা, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় প্রশ্ন—এসব মিলিয়ে একটি রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকে। আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে দেশ এখন এক ধরনের সম্ভাবনা ও উদ্বেগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে।

রূপান্তরকালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো হলো—গণতন্ত্রের ভিত্তি কতটা অক্ষত আছে? প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা পুনর্গঠনযোগ্য? কীভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রতিশোধ ও বিভাজন থেকে বেরিয়ে আসা যায়? কীভাবে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মাণ করা যায় যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই হবে?

এই প্রবন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হবে তিনটি প্রধান স্তরে—(১) গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা; (২) প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ; (৩) স্থিতিশীল গণতন্ত্রে রূপান্তরের বাস্তবসম্মত কৌশল ও সম্ভাবনা। এই আলোচনা শুধু রাজনৈতিক ঘটনাবলির তালিকা নয়—এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, যা একটি রূপান্তরশীল দেশের অন্তর্গত গভীর সমস্যাকে তুলে ধরার চেষ্টা করবে।

২০০৯–২০২৪ : এক কেন্দ্রীভূত শাসনের দীর্ঘ প্রভাব

ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ: ২০০৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ক্রমশ নির্বাহী প্রধানের চারপাশে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। বাস্তবিকভাবে ক্ষমতার তিনটি মূল স্তম্ভ—সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাহী প্রশাসন—এ তিনটিই ধীরে ধীরে ভারসাম্যহীন হয়ে এক ব্যক্তির হাতের মুঠোয় চলে আসে। এই পরিস্থিতিতে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় বারবার; সংসদ বিরোধীপক্ষহীন একমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়; আর প্রশাসনের বড় অংশ রাজনৈতিক প্রভাবাধীন বলে সমালোচনার মুখে পড়ে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্য এবং স্থানীয় প্রশাসনের স্বাধীনতার অভাব দেশজুড়ে একটি ‘top-down governance model’ তৈরি করে। এর ফলে নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয়; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকে না; রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নিস্তেজ হয়ে পড়ে; গণমাধ্যম আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়। এগুলো সার্বিকভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে দুর্বল করে তুলে।

বিরোধী দল ও রাজনীতি ক্রমশ অকার্যকর হয়ে যায় : গণতন্ত্রে বিরোধী দল রাষ্ট্রশক্তির একটি প্রধান নিয়ামক। কিন্তু ২০০৯–২০২৪ পর্বে বিরোধী দলের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে সংকুচিত করে। বিরোধী মত দমনের সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক পরিবেশে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ফলে নাগরিকদের রাজনৈতিক বিকল্পের ওপর আস্থা কমতে থাকে এবং ‘গণতন্ত্রবিহীন উন্নয়ন’ ধারণাটি রাষ্ট্রায়ত্ত হয়ে যায়, যা দীর্ঘ মেয়াদে অসম্ভব ও একটি বিপজ্জনক মডেল হয়ে ফুটে ওঠে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর দলীয় প্রভাবের অভিযোগ : এই সময়ে যে বড় সংকটটি গভীরভাবে প্রোথিত হয় তা হলো ‘দল–রাষ্ট্রের সমার্থক ধারণা’—অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলনির্ভর করে ফেলা। প্রশাসন, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহও পূর্ণ দলীয় আনুগত্যের ভেতর চলে আসে। এটি শুধু প্রশাসনিক ন্যায্যতাকেই নয়—সামাজিক ন্যায়বিচারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

নির্বাচনি ব্যবস্থার সংকট : ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গোটা দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। অংশগ্রহণ কম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমিত, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোটারদের আস্থাহীনতা, এসব অভিযোগ নির্বাচনি ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। ফলে নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের বিশ্বাস কমে যায়, গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত

কেন আন্দোলন বিস্ফোরিত হলো? দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জমে থাকা ক্ষোভ, বৈষম্য, কর্মসংস্থানের সংকট, যুবকদের ভবিষ্যৎহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা—এসবের ওপর অত্যধিক কেন্দ্রীভূত শাসনের প্রভাব ছাত্রসমাজকে আন্দোলনে নামতে বাধ্য করে। ২০২৪ সালে কোটাব্যবস্থাকে ঘিরে অসন্তোষ, পুলিশের কঠোরতা, সহিংসতা ও একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা আন্দোলনকে উত্তরোত্তর আরো বেগবান করে তুলে। রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে জনগণের যে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ ছিল, ছাত্র আন্দোলন সেই ক্ষোভকে জাতীয় রূপ দেয়।

একজন ছাত্র থেকে লাখো মানুষের উত্থান : ব্যক্তিগত ক্ষোভ সামষ্টিক আন্দোলনে পরিণত হয়—সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা, নাগরিক সমাজের সমর্থন, তরুণ প্রজন্মের নৈতিক নেতৃত্ব, সামাজিক বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্য, এসব মিলে অল্পদিনের মধ্যে একটি বৃহত্তর গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তি গড়ে তোলে। এ আন্দোলন রাজনৈতিক ক্ষমতাকে অস্থির করে তোলে এবং ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর দেশে নতুন পালাবদলের সূচনা হয়।

গণতন্ত্রের নতুন সুযোগ: রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যেখানে গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের সুযোগ তৈরি হয়েছে, ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা বেড়েছে, যুবসমাজের নেতৃত্বের দাবি জোরদার হয়েছে। কিন্তু এই সুযোগ ঝুঁকিমুক্ত নয়।

৪. বর্তমান গণতান্ত্রিক বাস্তবতা : সুযোগ ও সীমাবদ্ধতা

গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেলেও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দুর্বল রয়ে যায়: মানুষ পরিবর্তন চায় কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠন এখনো শুরুর পর্যায়ে। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা কম, প্রশাসনে পুরোনো কাঠামো বজায় থাকা, নির্বাচন কমিশন দুর্বল রয়ে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার শুরু না হওয়া, এবং সমাজে দুর্নীতি এখনো বহাল থাকা। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের যে কোনো অগ্রগতি ভঙ্গুর হতে বাধ্য।

রাজনৈতিক বিভাজনের গভীরতা : সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন এতটাই গভীর যে, দেশের অভ্যন্তরে এক অংশ অন্য অংশকে দেশদ্রোহী মনে করে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরোধিতা ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত হয়; রাজনৈতিক প্রভাব পরিবার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে; অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ছাড়া এ থেকে উত্তরণ প্রায় অসম্ভব।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ গণতন্ত্রকে আরো দুর্বল করে: একটি দুর্বল অর্থনীতি গণতন্ত্রের শত্রু। বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমলেও; বিনিয়োগ গতিশীলতা নেই; ব্যাংকিং খাতে অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ; যুবকদের বেকারত্ব; এসব সংকট রাজনৈতিক অস্থিরতাকে যে কোনো সময় আরো উসকে দিতে পারে।

৫. প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ

এ পর্যায়ে আমরা বিশদভাবে ছয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করব—

বিচারব্যবস্থার পুনর্গঠন : গণতন্ত্রের মূলভিত্তি হলো স্বাধীন বিচারব্যবস্থা। চ্যালেঞ্জ বিচারকের নিয়োগ প্রক্রিয়া দলীয়করণ; রায়ের ওপর পরোক্ষ চাপ; নিম্নআদালতের ওপর নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ; মামলার জট। এখানে একটি আশার আলো দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার, অতি সম্প্রতি বিচারবিভাগকে পৃথক করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় গঠন করেছে।

নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্গঠন: প্রধান প্রয়োজন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা; ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। এ পর্যায়ে যা করতে হবে তা হলো: ১. নিয়োগ আইনের গভীর সংস্কার; ২. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ; ৩. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গ্রহণ; ৪. ভোটার–ডাটাবেস পরিশুদ্ধ করা; ৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর depoliticization: এখানে চ্যালেঞ্জ হলো—কর্তৃত্ববাদী আচরণ; মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ; accountability-এর অভাব। এ সবের অবসানকল্পে আমার প্রস্তাব হলোÑঅভ্যন্তরীণ তদন্ত ইউনিট; মানবাধিকার প্রশিক্ষণ; গ্রেপ্তারের ডিজিটাল নথি; কমিউনিটি পুলিশিং; অপব্যবহারের জন্য কড়া শাস্তি, ইত্যাদির যথাযথ প্রয়োগ।

প্রশাসনের depoliticization: বাংলাদেশের প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে দলীয় আনুগত্যের ওপর দাঁড়িয়েছিল। এখন প্রয়োজন— ১. স্বচ্ছ বদলি ও পদোন্নতি; ২. Performance-based মূল্যায়ন; ৩. দায়িত্ব পালনকালে নিরাপত্তা; ৪. দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ আদালত।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া রাষ্ট্র জবাবদিহিমূলক হতে পারে না। তাই প্রয়োজন—মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা; সাংবাদিক সুরক্ষা আইন; স্বাধীন পাবলিক মিডিয়া; ও রাজনৈতিক চাপমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা।

মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা: চ্যালেঞ্জ—নিখোঁজের অভিযোগ; বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড; রাজনৈতিক নির্যাতন। সমাধান—সত্য অনুসন্ধান কমিশন; ক্ষতিপূরণ; স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন; ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত প্রতিরোধ কাঠামো গঠন করা।

৬. রূপান্তরকালীন সময়ের রাজনৈতিক অর্থনীতি

একটি রাজনৈতিক রূপান্তর অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল করা; অনিয়ন্ত্রিত বৈদেশিক ঋণের সুব্যবস্থাপনা; কর্মসংস্থান সৃষ্টি; বিনিয়োগে আস্থা ফিরিয়ে আনা, ইত্যাদি কারণে, অর্থনীতি দুর্বল হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই পারে।

৭. নিরাপদ ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রে রূপান্তরের কৌশল

রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও সংলাপ: দল-নিরপেক্ষ গণতন্ত্র অসম্ভব। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের কীভাবে পরিশুদ্ধ করা যায় তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং একটি বাস্তবসম্মত পথ খুঁজে বের করতে হবে। প্রতিশোধমূলক রাজনীতি পরিহার করা একান্তই আবশ্যক; সাংবিধানিক সংস্কার সর্বদলীয় আলোচনা ছাড়া অসম্ভব; বিভাজনের রাজনীতি বন্ধ করাও দরকার।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা: দক্ষিণ আফ্রিকা, তিউনিসিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি— ট্রানজিশনাল জাস্টিসের স্তর চারটি। ১. Truth-seeking; ২. Accountability (সীমিত মাত্রায়); ৩. Reparations; ৪. Institutional reforms; বাংলাদেশে কঠোর প্রতিশোধমূলক বিচার রাজনৈতিক পরিবেশকে আরো বিপজ্জনক করতে পারে—তাই রাজনীতিতে ন্যায়নীতির ভিত্তিতে ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা দরকার।

মাজিক চুক্তির (Social Contract) পুনর্গঠন : বাংলাদেশে রাষ্ট্রের নাগরিক সম্পর্ক নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়া প্রয়োজন। রাষ্ট্র হবে সেবাদাতা; নাগরিক হবে দায়িত্বশীল; ন্যায়বিচার হবে নিরপেক্ষ; রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকবে জবাবদিহির আওতায়।

স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা: ঢাকাকেন্দ্রিক কাঠামো অকার্যকর করা প্রয়োজন—স্থানীয় সরকারের আর্থিক ক্ষমতা; স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব; স্থানীয় উদ্ভাবনকে সহায়তা দেওয়া খুবই জরুরি।

৮. গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

তরুণ প্রজন্মের উত্থান: তরুণরাই ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের স্থপতি। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পষ্ট; প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ; সামাজিক পরিবর্তনে সক্রিয়;

জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি: গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের বিশ্বাস আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। মানুষ রাজনীতিকে ভয় নয়—অধিকার হিসেবে দেখে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন: গণতন্ত্র রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া সহজ হবে।

অর্থনৈতিক সংস্কার ও মানবাধিকার উন্নয়ন; এগুলো বিশ্বসমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি—বাজার; ভৌগোলিক অবস্থান; মানবসম্পদ গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে পারে।

৯. উপসংহার

বাংলাদেশ বর্তমানে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর রাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মানুষের প্রত্যাশা ও আগ্রহ আবার নবজাগরণের মতো উত্থান ঘটিয়েছে। গণতন্ত্র পুনর্গঠনের পথ সহজ নয়; সামনে রয়েছে বহুবিধ চ্যালেঞ্জ—প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, আস্থাহীনতা, রাজনৈতিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ, নিরাপত্তা উদ্বেগ ইত্যাদি। কিন্তু সঠিক নীতি, সমন্বিত নেতৃত্ব, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি, এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হতে পারে।

গণতন্ত্র কখনোই শুধুমাত্র একটি ব্যবস্থা নয়—এটি একটি চর্চার ব্যাপারও বটে, একটি অভ্যাস এবং একটি প্রতিশ্রুতি। বাংলাদেশ সেই প্রতিশ্রুতির সামনে নতুন করে দাঁড়িয়েছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই রূপান্তর স্থায়ী ও সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। একদিকে অতীতের দায়ভার, অন্যদিকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে গণতন্ত্র পুনর্গঠন প্রক্রিয়া একটি দীর্ঘমেয়াদি, কঠিন এবং জটিল প্রক্রিয়া হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কাজে একতা ও আন্তরিকতা থাকলে লক্ষ্য অর্জন কোনোভাবেই অসম্ভব নয়।

শর্ত হলো—সংলাপ; সহনশীলতা; ন্যায়বিচার; অন্তর্ভুক্তি; প্রতিষ্ঠান–নির্ভর রাজনীতি; জনগণের অংশগ্রহণ এই ছয়টি স্তম্ভ যদি সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয়—তবে বাংলাদেশ শুধু গণতন্ত্রে ফিরে যাবে না, বরং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কার্যকরী ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রে পরিণত হতে পারবে। এই রূপান্তর শুধু রাজনৈতিক নয়—বাংলাদেশের জন্য এটি হবে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং নৈতিক পুনর্জন্ম।

লেখক : অর্থনীতির অধ্যাপক, টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি,

ন্যাশভিল, ইউএসএ; Email: wahid2569@gmail.com

নির্বাচনি ইশতেহারে শিক্ষা কতটা গুরুত্ব পাবে?

চট্টগ্রাম বন্দর : লাভ না ক্ষতি

খৃস্টের সম্মান

মাতুয়া অভিবাসন : হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের মিথ্যা বয়ান

শেষ হয়নি আরব বসন্ত

চিরকালের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে গেলেন ওসমান হাদি

আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার লড়াই

মিডিয়ার ভালোবাসায় দিশাহারা বিএনপি

গণমাধ্যমের বয়ান নির্মাণ এবং কর্তৃত্ববাদের উত্থান

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বৈশ্বিক বয়ান ও হাসিনার ‘ডার্ক ডকট্রিন’