হোম > মতামত

চুক্তি, আধিপত্যবাদ না অংশীদারত্ব

লালদিয়া ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল

ড. মো. মিজানুর রহমান

বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে এবং তার লজিস্টিক সক্ষমতাকে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ হলো বন্দর ও কনটেইনার টার্মিনালগুলোর আধুনিকায়ন। সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত দুটি চুক্তি—চট্টগ্রামের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ও ঢাকার পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল (পিআইসিটি)—দেশের লজিস্টিক নকশায় একটি কৌশলগত মোড় ঘোরিয়েছে। একটি গোষ্ঠী এই সিদ্ধান্তকে ‘দেশীয় সম্পদ বিদেশি আধিপত্যবাদে তুলে দেওয়া’ হিসেবে সমালোচনা করলেও, অন্য গোষ্ঠী এটিকে এক যুগোপযোগী অংশীদারত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেছে।

বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। চট্টগ্রাম বন্দর, দেশের সব থেকে ব্যস্ত বন্দর হিসেবে, বহু বছর ধরেই যান্ত্রিক ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জের মুখে এসেছে। পুরোনো টার্মিনালগুলোর সঙ্গে কর্মক্ষমতা সীমিত, অপর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি, উচ্চ অপারেশনাল খরচ এবং দেরিতে কনটেইনার খালাস এমন বাধা তৈরি করেছিল, যা বাজার প্রতিযোগিতায় দেশকে অবনমূলিত করছিল। আমদানি-রপ্তানিকারকরা প্রায়ই বিলম্ব অনুভব করতেন; জাহাজ অপেক্ষায় থাকতে হতো এবং প্রতিক্রিয়ার সময় দীর্ঘ হওয়ায় খরচ বাড়ত। একদিকে, এসব সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছিল, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনগুলো বাংলাদেশের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার কমিয়ে দিচ্ছিল।

ঢাকার নিকটবর্তী পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল (পিআইসিটি) প্রকল্পটি মূলত এই সমাধানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছিল। অনুমান করা হয়েছিল যে একটি ইনল্যান্ড টার্মিনাল নদীপথ ও রাস্তাপথের সমন্বয় করে ঢাকার শিল্প অঞ্চল এবং রপ্তানিকারীদের জন্য একটি কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পথ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বাস্তবায়নে দেখা যায়, পর্যাপ্ত ইনভেস্টমেন্ট, প্রযুক্তি ও পরিচালন দক্ষতার অভাব, গুদাম ও স্টোরেজ সীমাবদ্ধতা এবং কার্যকর মাল্টি-মোডাল সংযোগ না থাকার কারণে পিআইসিটি তার পুরো সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারেনি। ট্র্যাকিং বোঝার চাপ অব্যাহত ছিল এবং নদীপথ সংযোগ ও বার্জ অপারেশন পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন সর্বদা জটিলতার মুখোমুখি হয়।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশ সরকার—গ্লোবাল অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি আনার জন্য বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গঠন করার স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত নেয়। সেই আলোকেই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ/কনসেশন মডেল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যেখানে বিদেশি কোম্পানিগুলো অপারেশনাল দায়িত্ব নেবে; কিন্তু মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের কন্ট্রোলে থাকবে। এর ফলে বাংলাদেশের বন্দরব্যবস্থা দ্রুত গতিতে আধুনিক হতে পারে এবং লজিস্টিক গতি, দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধি পায়।

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের ক্ষেত্রে এপিএম টার্মিনালজ বি. ভি (APM Terminals B.V.) (Maersk গ্রুপ)-কে ৩০ বছরের কনসেশন দেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি শুধু অপারেশনাল দায়িত্বই নয়; বরং এটি একটি বিশাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা। এপিএম প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা টার্মিনাল নির্মাণ থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রকল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিপূর্ণভাবে পারিপার্শ্বিক এবং সাসটেইনেবল পোর্ট গঠন করা হবে, যেখানে নতুন কনটেইনার ক্রেন এবং বড় জাহাজ (প্রায় ৬,০০০ টিইইউ পর্যন্ত) অবতরণ করতে পারবে। নতুন অপারেশন ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে, রাত্রিকালীন ন্যাভিগেশন সুবিধা থাকবে এবং পরিবেশসচেতন প্রযুক্তি যেমন সোলার প্যানেল, শোর‑পাওয়ার সিস্টেম ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, এপিএম প্রথম ধাপে বার্ষিক প্রায় ৮০০,০০০ টিইইউ হ্যান্ডলিং সক্ষমতা আনবে এবং ভবিষ্যতে সক্ষমতা বাড়িয়ে ১০ লাখ টিইইউ-এ শীর্ষে নিয়ে যেতে পারবে। এটি স্পষ্টভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও পরিসরের গতি পরিবর্তন করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

এই চুক্তির আরেকটি সুগভীর দিক রাজস্ব ভাগাভাগি। এপিএম এবং সিপিএর মধ্যে একটি মডেল নির্ধারিত হয়েছে, যেখানে এপিএম টিইইউভিত্তিক ফি দেবে। যেমন : প্রথম ধাপের পর টিইইউর জন্য ২১ ডলার / টিইইউ প্রদান করার চুক্তি হয়েছে এবং ভলিউম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফি গঠন সমন্বয়যোগ্য। এ ছাড়া পারফরম্যান্সভিত্তিক গ্যারান্টি আছে—এপিএম যদি নির্ধারিত ভলিউম অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মিনিমাম ভলিউম পেমেন্ট করতে হবে, যা সরকারের জন্য এক ধরনের নিরাপত্তা সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চুক্তি শেষে পুরো অবকাঠামো ফেরত দেওয়া হবে; অর্থাৎ মালিকানা পুরোপুরি সিপিএর হাতে ফিরে আসবে।

পানগাঁও ইনল্যান্ড টার্মিনালের ক্ষেত্রে, মেডলগ এসএ (Medlog SA) (এমএসসি গ্রুপ)-কে ২২ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। এই লিজ শুধু পরিচালন দায়িত্ব নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত লজিস্টিক চেইন গঠনের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করে। মেডলগ (Medlog) ১৬০,০০০ টিইইউ বার্ষিক সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা বর্তমান রিপোর্ট করা সক্ষমতা (প্রায় ১১৬,০০০ টিইইউ) থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায় রয়েছে নতুন মোবাইল হার্বার ক্রেন, ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ, রিফার সংযুক্তি, খালি কনটেইনার স্টোরেজ, মেরামত ইয়ার্ড এবং প্রায় ১০ হাজার বর্গমিটার আকারের কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস)। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো তাদের বার্জ অপারেশন পরিকল্পনা—মেডলগ (Medlog) নদীপথ ব্যবহার করবে বার্জ ধরনের রিভার ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, যা টার্মিনাল থেকে সমুদ্রবন্দর বা অন্য নদীতীরবর্তী লজিস্টিক কেন্দ্রে পণ্য পরিবহন করবে। এটি ইনল্যান্ড ও সমুদ্রপথকে একত্র করে একটি কার্যকর ‘মাল্টি-মোডাল’ লজিস্টিক শৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ দেয়, যা ট্রানজিট সময় কমাতে এবং পরিবহন ব্যয় হ্রাস করতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশের অনেকে এই চুক্তিকে ‘বিদেশি আধিপত্যবাদ’ হিসেবে দেখছেন, যেখানে তারা মনে করেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত সম্পদ বিদেশিদের হাতেও চলে যাচ্ছে। তাদের যুক্তি হলো, দীর্ঘমেয়াদি অপারেশনাল দায়িত্ব দেশকে বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল করে দেবে এবং একদিন এই স্বার্থপর অংশীদাররা দেশের স্বতন্ত্র নীতিনির্ধারণ বা জাতীয় স্বার্থকে কার্যকরভাবে প্রভাবিত করতে পারবে। এমন চিন্তা রাজনৈতিকভাবে চিন্তাস্বরূপ উঠে আসে—বিশেষ করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে।

তবে এই সমালোচনার বহু অংশ একদৃষ্টিকোণমূলক। প্রথমত, মালিকানা পুরোপুরি হস্তান্তর করা হচ্ছে না; বরং সরকারের (সিপিএ) হাতে স্বত্ব রয়ে গেছে এবং চুক্তি শেষে অবকাঠামো সরাসরি সরকারের হাতে ফিরে আসবে। এটি এক ‘দায়িত্ব ভাগ করা কিন্তু সম্পদ রক্ষা করা’ মডেল। দ্বিতীয়ত, গ্যারান্টি এবং পারফরম্যান্স শর্তাবলি চুক্তিতে স্পষ্টভাবে যুক্ত করা আছে—মিনিমাম ভলিউম গ্যারান্টি, রাজস্ব ভাগাভাগি এবং পুনর্বিবেচনা/নবায়ন ধারা দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করে। এ ধরনের কাঠামো প্রমাণ করে যে অংশীদারত্ব একরূপ নয়, বরং পারস্পরিক দায়িত্ব ও স্বার্থে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

তৃতীয়ত, প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দক্ষতা গড়ার প্রতিশ্রুতি চুক্তিতে একটি কেন্দ্রীয় উপাদান। এপিএম এবং মেডলগ—উভয়েই স্থানীয় লজিস্টিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবে, ডিজিটাল অপারেশন এবং মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করবে এবং স্থানীয় পরিচালন ক্ষমতা গড়ার জন্য কাজ করবে। এটি একটি একদিকের অভ্যন্তরীণ ‘দাসত্ব’ নয়, বরং সক্ষমতা গড়ার একটি প্রগতিশীল উৎস।

এটি ঠিক যে, দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গঠনের সময় জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অংশগ্রহণ এবং আরো প্রকাশ্য আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত মানেই নেতিবাচকতা নয়, যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পারফরম্যান্স, পালাবদলি ও মনিটরিং মেকানিজম সুনির্দিষ্ট হয় এবং নিয়মিত মূল্যায়ন সুনিশ্চিত করা হয়। সুতরাং যুক্তিসম্মত পথ হলো স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধির দিকে সরকার ও অপারেটরদের আরো মনোনিবেশ করা। সরকারকে পারফরম্যান্স মাপক (KPIs) নির্ধারণ করতে হবে, নিয়মিত অডিট এবং মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে এবং স্থানীয় অংশীদারদের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা উন্নয়নের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। এভাবে, অংশীদারত্ব এক‑চাপের সম্পর্কের পরিবর্তে একটি গতিশীল এবং দ্বিমুখী সংলাপ ও সহ-উন্নয়ন মডেলে পরিণত হবে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, লালদিয়া টার্মিনাল যদি তার পরিকল্পিত পূর্ণ সক্ষমতায় কার্যক্রম শুরু করতে পারে, তবে এটি বার্ষিক প্রায় ৮ লাখ টিইইউ অতিরিক্ত হ্যান্ডলিং সুবিধা যোগ করবে। এটি বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল চাপ হ্রাস করবে এবং বড় জাহাজগুলোর জন্য উন্মুক্ত নতুন পথ তৈরি করবে। বড় জাহাজ ব্যবহার করতে পারলে প্রতিটি কনটেইনারের জন্য ব্যয় কমে আসতে পারে। কারণ জাহাজকে লম্বা সময়ে অপেক্ষা করতে হবে না এবং প্রতিলিপি ও খালাস প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য প্রবাহ খরচ কমতে পারে, যা দেশের পুরো সরবরাহ চেইনকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করবে।

নতুন অবকাঠামোর কারণে কর্মসংস্থানে বড় সুযোগ তৈরি হবে। নির্মাণপর্যায়ে হাজারো কর্মের সম্ভাবনা থাকবে, পাশাপাশি অপারেশন পর্বে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। অর্থোপার্জন বাড়ার পাশাপাশি এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতি লাগিয়ে দেবে, বিশেষ করে বন্দরের আশপাশের এলাকায় বাসিন্দাদের জন্য। এপিএম-সিপিএ অংশীদারত্ব মডেলে টিইইউভিত্তিক ফি এবং পারফরম্যান্সভিত্তিক গ্যারান্টি সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি আয়ের উৎস দেবে। এই আয়কে দেশের অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে আবার বিনিয়োগ করা যেতে পারবে।

পানগাঁও ক্ষেত্রে, মেডলগের পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধি (প্রায় ১৬০,০০০ টিইইউ) এবং বার্জ অপারেশন মডেল একটি কাঠামোগত পরিবর্তন আনে। নদীপথ এবং ইনল্যান্ড লজিস্টিকের আরো কার্যকর ব্যবহার, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য নতুন গতি এনে দেবে। ট্র্যাকিং চাপ কমে আসার ফলে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে এবং সময় সংকুচিত হবে, যা দেশের শিল্প ও রপ্তানিক কেন্দ্রগুলোর জন্য বিশেষ সুবিধা দেবে। এই ধরনের মাল্টি-মোডাল লজিস্টিকেশন শুধু ব্যয় সাশ্রয়ী নয়, লজিস্টিক স্থিতিশীলতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে পারে।

তুলনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, যদি এই দুটি টার্মিনাল পুরোপুরি দেশীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হতো, তাহলে টার্মিনালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থানে দেশীয় সব অংশগ্রহণ ও রাজস্ব পুরোপুরি স্থানীয় হতো। তবে, স্থানীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এ ধরনের বিশাল বিনিয়োগ উত্তোলন একসঙ্গে করা কঠিন হতে পারত, বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি ও প্রযুক্তিগত অস্পষ্টতার কারণে। অপারেটিং দক্ষতা, পরিচালন মাপদণ্ড, অটোমেশন এবং বড় জাহাজ পরিচালনায় অভিজ্ঞতার অভাব স্থানীয় অপারেটরদের জন্য একটি বড় বাধা হতে পারত। এছাড়া, দীর্ঘ মেয়াদে পারফরম্যান্স এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দেরি হলে, রাজস্বপ্রবাহ ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বিদেশি অপারেটরের তুলনায় অনেক ধীর গতি পেত।

সুতরাং, বর্তমান চুক্তি কাঠামো—যেখানে বিদেশি অপারেটর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তি এবং গ্লোবাল নেটওয়ার্ক নিয়ে আসে এবং সরকার মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব ভাগ রক্ষা করে—একটি যৌক্তিক ও প্রগতিশীল সমাধান হিসেবে দাঁড়ায়। যদিও সমালোচকরা তাঁবেদারি বা আধিপত্যবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্বিগ্ন, কিন্তু বাস্তবতা হলো, পারস্পরিক দায়িত্ব, স্বচ্ছতা ও পরিবর্ধন‑শর্তাবলি এই অংশীদারত্বকে দেশের স্বার্থে রূপান্তর করার সুড়ঙ্গ তৈরি করে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটে একটি বাস্তব রোডম্যাপ অপরিহার্য। সরকারের পাশাপাশি অপারেটরদের উচিত স্থানীয় এবং জাতীয় লজিস্টিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, মানবসম্পদ ও ব্যবস্থাপনার সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পরিকল্পনা তৈরি করা। অংশীদারি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে, যেখানে স্থানীয় অংশীদার, নীতিনির্ধারক, শ্রমশক্তি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়মিত অংশগ্রহণ করে পারফরম্যান্স, উন্নয়ন এবং শর্তাবলি পর্যালোচনা করতে পারে। এমন একটি পথ গঠন করা উচিত, যেখানে দেশীয় অংশীদাররা ধাপে ধাপে সক্ষমতা অর্জন করে, যাতে ভবিষ্যতে তারা সর্বোচ্চ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে এবং দেশের স্বনির্ভরতা বাড়ে।

লালদিয়া ও পানগাঁও টার্মিনাল চুক্তি শুধু অবকাঠামোগত বিনিয়োগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের লজিস্টিক ভবিষ্যতের জন্য এক কৌশলগত পদক্ষেপ। এটি অংশীদারত্ব, দক্ষতা, গতি এবং স্থায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি প্রমাণ। যদিও সমালোচনা এবং উদ্বেগ স্বাভাবিক ও যুক্তিসম্মত, তবে চুক্তির কাঠামো, শর্তাবলি এবং অংশীদারি দৃষ্টিকোণ যেভাবে গঠন করা হয়েছে, তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে নিরাপদ রাখে এবং গ্লোবাল লজিস্টিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ায়। এই চুক্তিগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, নিয়মিত মনিটরিং এবং স্থানীয় সক্ষমতা গড়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী, গতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বন্দর ও লজিস্টিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারে, যা শুধু আজকের দিনের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মগুলোর জন্যও এক স্থায়ী গুণগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট

mizan12bd@yahoo.com

প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি সত্ত্বেও প্রজ্ঞাপনে কালক্ষেপণ

গাজা প্রশ্নে ইসরাইলের পক্ষ নেওয়াই আসল কেলেঙ্কারি

হাসিনার বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভূমিকম্প প্রস্তুতি

রাজনীতিতে নির্বাচনি হাওয়া

‘তাজ স্টোরি’ সিনেমা এবং হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কেন মাধবদী

স্বৈরশাসকদের প্রতি নয়াদিল্লির সমর্থন

যুদ্ধের নীরব অস্ত্র যৌন নিপীড়ন

ভূমিকম্পে সতর্কতা ও করণীয়