মন্তব্য প্রতিবেদন
অনেক ইংরেজি শব্দের সঠিক বাংলা প্রতিশব্দ বলা কঠিন। আমি বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন বর্ণনায় ইংরেজি ক্যারিশম্যাটিক (Charismatic) শব্দটি বলতে চেয়েছিলাম। ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানে দেখলাম সেই শব্দের সঠিক প্রতিশব্দে বলা হয়েছে, সম্মোহনী শক্তিসম্পন্ন। তিন শব্দবিশিষ্ট বাংলা অর্থটির চেয়ে ভালো বিবেচনায় শিরোনামে আমি এক শব্দের ‘জননন্দিত’ বেছে নিয়েছি।
তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, একাধিকবার গণতান্ত্রিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন, জীবনে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি এবং আপসহীন রাজনীতিবিদ-এটুকু বললেই তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা শেষ হয়ে যায় না। তাকে কেন আমি অনন্য মনে করি এবার তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রেক্ষাপট না জানলে আমরা রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার সঠিক অবস্থান বুঝতে পারব না। তাই আমাকে সংক্ষেপে হলেও পাকিস্তান আমল থেকে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিহাস টানতে হচ্ছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান-এই তিনজন প্রকৃত জননন্দিত নেতার উত্থান ঘটেছিল। তাদের মধ্যে ফজলুল হকের উত্থানের সময় ছিল প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ শাসনাধীন আমলে। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি বাংলার অবহেলিত মুসলমানদের মুক্তির জন্য অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতেও নওয়াব সলিমুল্লাহর পাশাপাশি তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তুখোড় মেধাবী শেরেবাংলা ১৯৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৪০ সালে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবও জিন্নাহসহ উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম নেতাদের সামনে তিনিই উত্থাপন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের পর ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত স্বাধীন পাকিস্তানে রাজনীতির নানা সমীকরণে শেরেবাংলা পূর্বকার উচ্চ অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি।
মওলানা ভাসানী ব্রিটিশ আমলে আসামের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য লড়াই করে খ্যাতিলাভ করলেও পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে অনন্য উচ্চতা অর্জন করেছিলেন। একসময় আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৮ সালে সেই নবগঠিত রাজনৈতিক দলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী শেখ মুজিবুর রহমান দুই নম্বর জয়েন্ট সেক্রেটারির পদ পেয়েছিলেন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশÑএই তিন আমলের কোনো সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত না হয়েও মওলানা ভাসানী বাঙালি মুসলমানের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সব লড়াইয়ের একজন কালজয়ী সেনাপতি। ১৯৭৬ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকা থেকে কানসাট পর্যন্ত ফারাক্কা ‘লং মার্চে’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সাতচল্লিশ থেকে আজ দুই হাজার পঁচিশ পর্যন্ত এই দেশে কত সরকার, কত নেতা এসেছেন এবং বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু দলমত-নির্বিশেষে জনমনে মওলানা ভাসানীর শ্রদ্ধাপূর্ণ অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান ঘটেছিল ষাটের দশকের মাঝামাঝি ছয় দফা ঘোষণার মাধ্যমে। তারপর ১৯৬৮ সালের রহস্যজনক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইউব খানের পতন শেখ মুজিবুর রহমানকে জনপ্রিয়তার একেবারে হিমালয়ের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। অথচ সেই গণঅভ্যুত্থানের নেতা মুজিব ছিলেন না, সেদিন রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিরাপদ বন্দিজীবন কাটালেও, তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা শুধু অক্ষুণ্ণই থাকেনি, যুদ্ধকালে এবং অবসানে তিনি যথাক্রমে পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের আবেগপ্রবণ জনগণের কাছে একজন ডেমিগডে (Demigod) পরিণত হয়েছিলেন।
লিখতে গিয়ে আবার বিপদে পড়লাম। এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ উপদেবতা হলেও ডেমিগডের মর্মার্থ ভিন্ন। আমি শব্দটিকে ভুয়া দেবতা অর্থে ব্যবহার করেছি। যাহোক, এই অঞ্চলের রাজনীতির ইতিহাসে এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা যে, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে লড়াইয়ের ময়দানে অনুপস্থিত ব্যক্তি উভয় আন্দোলনে বিজয় লাভের পর অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তায় ধন্য এক অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। এটাও বিস্ময়কর যে, শেখ মুজিবুর রহমানের সৌভাগ্যসূর্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের স্বল্প সময়ের মধ্যেই অস্তমিত হতে শুরু করে। ইতিহাসের একজন পাঠক হিসেবে আমি মনে করি, রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থান পাকিস্তানি আমলে এবং পতন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে। ১৯৭৫ সালে একবার এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয়বার শেখ মুজিবের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, সব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমান একজন ভাগ্যবান ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন।
পাকিস্তান আমলের তিন জননন্দিত নেতার কাহিনি বর্ণনার পর এবার বাংলাদেশ আমলে প্রবেশ করছি। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে আমরা দুজন প্রকৃত ‘ক্যারিশম্যাটিক’ (Charismatic) নেতার দেখা পেয়েছি। প্রথমজনের উত্থান ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তারিখে অন্য এক মহান বিপ্লবের মহানায়ক হিসেবে। জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ আমলের সেই প্রথম জননন্দিত নেতা, যার সঙ্গে জাতির পরিচয় হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে। জেনারেল জিয়া শুধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনেই যুদ্ধ করেননি, তিনি বাংলাদেশকে ভারতের শৃঙ্খলমুক্ত করে স্বাধীনতা রক্ষা করতেও দেশপ্রেমিক জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন।
মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছরের এক ক্ষুদ্র জীবনে আপন দেশরক্ষায় শহীদ জিয়াউর রহমান যে উদাহরণ রেখে গেছেন, সেটি বাংলাদেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তিনি বিশাল দেহের অধিকারী কিংবা সুবক্তা ছিলেন না। কিন্তু অপরিসীম সাহস, নিখাদ দেশপ্রেম এবং প্রবাদতুল্য সততার সমন্বয়ে জিয়া নিজেকে একজন মানুষ, একজন মুসলমান এবং একজন নেতা হিসেবে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, তার তুলনা আমাদের জীবদ্দশায় আর মিলবে না।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দলের মধ্যেই তার আদর্শের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। জিয়াউর রহমান যে জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, অসময়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত তার সেই জনপ্রিয়তা অটুট ছিল। এর কোনো দ্বিতীয় উদাহরণ বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বাধীনতা রক্ষার ইতিহাস রচনায় জিয়াউর রহমান এক উজ্জ্বলতম ও অবিচ্ছেদ্য নাম হয়ে থাকবে।
সেনাবাহিনীর ভারতপন্থি অফিসারদের অভ্যুত্থানে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হওয়ার পর তার নিতান্তই গৃহবধূ, অসহায় বিধবা স্ত্রী যে বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসের দ্বিতীয় জননন্দিত নেতায় রূপান্তরিত হবেন, সেটি সেদিন কারো হিসাবের মধ্যে ছিল না। স্বামীর অবর্তমানে যারা তাকে রাজনীতিতে এনে নেপথ্য থেকে দল পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন, অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন খালেদা জিয়া তাদের সবার ওপরে নিজ যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছেন। অটল মানসিক দৃঢ়তা, সাহস, আপসহীনতা এবং স্বামীর মতোই দেশপ্রেমের সমন্বয় বেগম জিয়াকে রাজনীতিতে অনন্য করেছে।
তার সঙ্গে কয়েক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে একটি কথা জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি মূল্যায়ন ও পরিচালনায় তার মুনশিয়ানা তো আছেই, সেই সঙ্গে শিক্ষার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বেগম জিয়া আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি সম্পর্কে যে জ্ঞান রাখেন, যতটা বোঝেন, তার তুলনীয় বিএনপিতে দ্বিতীয় কেউ নেই। ২০১৩ সালে ভারতীয় পঞ্চম বাহিনী দ্বারা সৃষ্ট শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের জাঁকজমক ও প্রচারণার জোয়ারে বিএনপির তাবৎ নেতা ভেসে যাওয়ার উপক্রম হলে বেগম জিয়া একা অটল পাহাড়ের মতো দণ্ডায়মান থেকে সেই জোয়ারকে প্রতিহত করেছেন। তিনি সেদিন দলের শীর্ষ নেতাদের নাখোশ করে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, হাসিনার পরম বন্ধু প্রণব মুখার্জিকে উপেক্ষা করার সাহস দেখিয়েছিলেন।
তিনি জানতেন শেখ হাসিনা এবং প্রণব মুখার্জির মধ্যে বস্তুগত কোনো পার্থক্য নেই। বেগম জিয়ার সমতুল্য দেশপ্রেম ও আত্মসম্মানবোধ আজকের বিএনপির কোনো নেতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি যতটুকু তাকে চিনেছি, তাতে নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, স্নেহময়ী মা হিসেবে সন্তান ছাড়া আর কোনো বিষয়ে এই মহীয়সী নারীর কোনো দুর্বলতা নেই। দেশের স্বার্থ তার কাছে সবসময়, সবার উপরে। তার কোনো ভীতি ছিল না। কোনো অত্যাচারী শাসককে তিনি পরোয়া করেননি। স্বৈরাচারী এরশাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রায় ৯ বছর রাজপথে আপসহীন সংগ্রাম করে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। এক-এগারোর ভারতীয় দালাল, সামরিক জান্তার জুলুমকে উপেক্ষা করে অকুতোভয়ে জেলজীবন বেছে নিয়েছেন। দুই সন্তানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অবিচলভাবে জেলেই থেকেছেন। শেখ হাসিনার মতো জেনারেল মইন ও প্রণব মুখার্জির সঙ্গে চুক্তির নামে দেশের স্বাধীনতা কেনাবেচা করেননি।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে নির্জন কারাবাসে চলে গেছেন। একজন অসুস্থ, প্রবীণ নারী নাজিমউদ্দিন রোডের বিশাল কারাগারে বিনা চিকিৎসায় সব অসম্মান সহ্য করে একাকী থেকেছেন দীর্ঘদিন। বেগম খালেদা জিয়া এমন এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও সাহসের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, যার তুলনা বাংলাদেশের ইতিহাসে মিলবে না। বাংলাদেশের প্রতি অপার ভালোবাসা তিনি আজীবন প্রমাণ করেছেন। জেনারেল মইন এবং হাসিনার বিরুদ্ধে ১২ বছর লড়াইয়ের পর আমিও শেষ পর্যন্ত বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু সর্বংসহা খালেদা জিয়া সব অত্যাচারের সামনে সর্বদা অটল থেকেছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা শিশুপুত্রসহ বন্দি করেছে, ১৯৭৫ সালে খালেদ মোশাররফ সপরিবারে বন্দি করেছে, ২০০৭ সালে নরাধম মইন-মাসুদ তাকে দুই পুত্রসহ কারাগারে নিয়েছে, উভয় পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান সেনা হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আর অসহায় মা কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বারবার তাকে গৃহবন্দি করেছে এবং ২০১৮ সালে কারাগারে গেছেন, কিন্তু খালেদা জিয়ার উন্নত মস্তক কখনো নত হয়নি। জেলে যাওয়া নিশ্চিত জেনেও ২০১৮ সালে লন্ডনে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসেছেন এবং ৮ ফেব্রুয়ারি বন্দি হয়েছেন। এ এক অবিশ্বাস্য সাহসিকতাপূর্ণ, প্রেরণাদায়ী কাহিনি! বেগম খালেদা জিয়ার লড়াকু জীবন সম্পর্কে চিন্তা করলেই আমার কবি নজরুল ইসলামের কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র প্রথম দুই পঙ্ক্তির কথা মনে পড়েÑ
‘বল বীর, বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!’
প্রসঙ্গক্রমে এবার একটি ব্যক্তিগত ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান মালয়েশিয়ায় নির্বাসনে মারা যাওয়ার সময় আমি কারাগারে ছিলাম। তিনি তখন গুলশান কার্যালয়ে কার্যত গৃহবন্দি। আমার স্ত্রী ফিরোজা এবং বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার শোকাতুর মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই অসহনীয় ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্তেও বেগম খালেদা জিয়া আমি জেলে কেমন আছি জিজ্ঞাসা করে আমার স্ত্রীকে বলেছিলেন জেল থেকে মুক্তি পেলে আমাকে নিয়ে বিদেশে চলে যেতে।
তার ধারণা ছিল শেখ হাসিনা আমাকে জীবিত রাখবে না। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও প্রায় দেড় বছর আমি দেশেই ছিলাম। ম্যাডামের সঙ্গে অফিসে এবং বাসায় দেখা করতে গেছি। ২০১৮ সালের ২২ জুলাই কুষ্টিয়া আদালত প্রাঙ্গণে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্য হামলার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হই। বেগম জিয়া ততদিনে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে একা বন্দি। ম্যাডামের স্নেহ আমার জীবনের এক অপার প্রাপ্তি। তার জীবনের সঙ্গে তুলনীয় সংগ্রামের ইতিহাস সেই ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি আর কোনো বাঙালি মুসলমান অথবা হিন্দু রাজনীতিবিদের নেই।
ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে অতুলনীয় রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের শূন্যস্থান বেগম জিয়া অনেকাংশে পূরণ করতে পেরেছিলেন। সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনি এখন জীবনমৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আছেন। তার সুস্থতার জন্য সারা দেশ মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে। তার জন্য আল্লাহ যে সিদ্ধান্ত স্থির করে রেখেছেন, সেটাকে কবুল করে বলতে পারি যে, বেগম খালেদা জিয়াই বাংলাদেশের সর্বশেষ ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তার কাছাকাছি একজন নেতা পেতেও আমাদের আরো কতকাল অপেক্ষা করতে হবে, সেটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। আশা করি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অধিকতর চর্চা করবে এবং তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে।