আজ থেকে ঠিক ২০ বছর আগে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে তখনকার তুমুল জনপ্রিয় সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এ একটি লেখার শিরোনাম দিয়েছিলাম ‘মিডিয়ার আক্রমণে দিশাহারা বিএনপি’। লেখাটি তখন পাঠক মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। আজ ২০ বছর পর একই ছন্দে উপরোক্ত শিরোনামে লিখতে হচ্ছে।
বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে সম্পাদক, বার্তাপ্রধান ও গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২১ ডিসেম্বর রোববার রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে আয়োজিত এই সভায় গণমাধ্যমের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তবে দুটি পত্রিকার দুজন সম্পাদকের ঔজ্জ্বল্য ও সপ্রতিভ উপস্থিতি বাকি সবাইকে ছাপিয়ে গেছে।
সভায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বিএনপি সম্পর্কে মজাদার ও আশাজাগানিয়া বক্তব্য দেন! বিশেষ করে অতীতের বাস্তবতা এবং তাদের নিজ নিজ ভূমিকার প্রেক্ষাপটে এসব বক্তব্য নতুন করে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মোটামুটি সবার বক্তব্যে একটা ঐকতান পাওয়া গেছে, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন বর্ষীয়ান সম্পাদক শফিক রেহমান। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্মরণ করিয়ে দেন—‘এক-এগারোর পটভূমি তৈরিতে যাদের ভূমিকা ছিল এবং যারা জাতির গণতান্ত্রিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে, তাদেরও নৈতিক দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের পথে এগোতে হলে শুধু ভবিষ্যতের আশাবাদী কথাই নয়, অতীতের ভুল ও দায় স্বীকারের সাহসও থাকতে হবে।’ এই বার্তাই তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে আসে।
এক–এগারো থেকে শুরু করে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত জিয়া পরিবারের ওপর যে নির্মম কারবালা নেমে এসেছিল, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। বেগম জিয়ার দুই ছেলের একজনকে পরিকল্পিতভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, আর অন্য সন্তানকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। বেগম জিয়াকেও বন্দিত্বের ভেতর রেখে চিকিৎসা ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আজকের এই মৃত্যুঝুঁকির অবস্থায় এনে দাঁড় করানো হয়েছে।
এই দীর্ঘ সময়জুড়ে সংঘটিত অন্যায়ের পেছনে কিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যমের দায়ও অস্বীকার করা যাবে না। জিয়া পরিবার ও তারেক রহমানকে ঘিরে আলো–স্টার গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অন্যায় ভূমিকার জন্য কি এই দুটি পত্রিকা কখনো বিএনপি কিংবা জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছে? এক-এগারোকে নিজেদের ‘ব্রেইন চাইল্ড’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তারা যে দেশের গণতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করেছে, জাতির ওপর ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ক্ষতি ডেকে এনেছে—তার দায় কি কখনো স্বীকার করেছে? কিংবা নিরীহ আলেম সমাজকে পরিকল্পিতভাবে ‘জঙ্গি’ হিসেবে উপস্থাপন করে যে মহাপাপ তারা করেছে, সে অপরাধের জন্য কি একবারও অনুশোচনা প্রকাশ করেছে?
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই একই গোষ্ঠী তিনবার ক্ষমা চাওয়ার পরও পাকিস্তানকে আবারও ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাতে ক্লান্ত হয় না। অথচ নিজেদের কলম ও প্রচারণার মাধ্যমে এ দেশের মানুষের ওপর যেসব ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেজন্য একবারও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন তারা অনুভব করেনি।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো মিডিয়া হাউসে আগুন দেওয়া হয়নি, সর্বপ্রথম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে আগুন দেওয়া হলো। কেন? আমাদের অপরাধ কী?
মাহফুজ আনামদের নিয়ে মুশকিলটি হলো—তার এই প্রশ্নের জবাব দিতে গেলেই তাদের প্রস্তুতকৃত ‘রেডিমেড ফ্রেমে’ ঢুকে পড়তে হবে, তাদের অফিসে আগুন দেওয়ার সব দায় এই জবাবদাতাকে বহন করতে হবে। আরো একজন নিষ্পাপ আদমি একই ভঙ্গিতে ‘আমার অপরাধ কী’ তা জানতে চেয়েছেন! আসলেই শেখ হাসিনা ও মাহফুজ আনামরা কখনোই অপরাধ করেন না! সব অপরাধ, সাকুল্য দোষ আমাদের কপালের!
কাজেই যারা আগুন দিয়েছেন তারা জানেন না, কতবড় উপকার তারা এই দুটি পত্রিকাকে করে দিয়েছেন? এভাবে কোনো সংবাদপত্রের অফিসে আগুন দেওয়া কৌশলগতভাবে যেমন ভুল এবং নৈতিকভাবে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি রাজনৈতিকভাবেও আত্মঘাতী। কলমের বিরুদ্ধে কলমই অস্ত্র; তবে সেই কলম হতে হবে আরো শক্তিশালী, আরো তথ্যনির্ভর, আরো সাহসী। এর ব্যতিক্রম করতে গেলেই বিপদ বাড়ে—শুধু আন্দোলনের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য।
দুঃখজনক হলো, আমাদের জাতিগত স্মৃতিশক্তি এতটাই দুর্বল যে সুশীল মিডিয়া গোষ্ঠী এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে নির্লজ্জভাবে ইতিহাসবিকৃতি চালিয়ে যাচ্ছে। মাহফুজ আনাম যখন দাবি করেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবার সংবাদপত্রের অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে, তখন সেটা শুধু মিথ্যা নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতারণা। ২০১৩ সালে দৈনিক নয়া দিগন্তের অফিসে আগুন দেওয়ার ঘটনা কি ইতিহাসের বাইরে পড়ে? নাকি মতি–মাহফুজদের অভিধানে নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, কিংবা দৈনিক সংগ্রাম আদৌ ‘সংবাদপত্র’ হিসেবে গণ্য হয় না?
যতদূর মনে পড়ে, আগুন দেওয়া হয়েছিল তখন নয়া দিগন্তের প্রধান কার্যালয়ের নিচে প্রেস ও গাড়িতে! আগুনে পুড়ে যায় প্রেসে রাখা কাগজ। ইটপাটকেল ছোড়া হয় চারতলার বার্তাকক্ষেও। এর কিছুক্ষণ পর জুরাইনে পত্রিকাটির প্রেসেও আগুন দেওয়া হয়েছিল। এরপর পুলিশ ঢুকে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নাজেহাল করে। উল্টো পুলিশ প্রেস কর্মচারীদের আটক করে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমার দেশ, নয়া দিগন্ত ও সংগ্রাম পত্রিকা বর্জনের ঘোষণা এবং উসকানি দেওয়ার তিন দিনের মাথায় পত্রিকা অফিসে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। আজকে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের প্রতি যে সহানুভূতি বর্ষিত হচ্ছে, তা দেখাতে তখন কেউ সাহস করেনি। এলিট ব্রাহ্মণদের চোখে এসব ছিল নমঃশূদ্রদের পত্রিকা। শুনতে খারাপ লাগবে, তবে সেদিন যায়যায়দিন হাইজ্যাক হওয়ার পর আমার দেশ, নয়া দিগন্ত প্রভৃতি কাগজই বিএনপি ও জিয়া পরিবারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল!
এই দ্বিচারিতার ধারাবাহিকতাই আমরা দেখেছি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের ওপর প্রকাশ্য অপমানের ঘটনায়। দাঁড়ি ধরে টেনে নামানো হয়েছিল একজন সম্পাদককে, কিন্তু তখন সম্পাদক পরিষদের কোনো বিবৃতি আসেনি। আমার দেশ ও তার সম্পাদকের ওপর যে নির্মম দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল, তা নিয়েও তথাকথিত বিবেকবানদের কণ্ঠ ছিল রহস্যজনকভাবে স্তব্ধ। অথচ সে সময়ও সম্পাদক পরিষদ ছিল, নুরুল কবিরদের মতো নীতিবাগীশরা ছিলেন, শীর্ষ রাজনীতিবিদরাও এই দেশেই অবস্থান করছিলেন; কিন্তু তখন কোনো মানববন্ধন হয়নি, কোনো শোকবিবৃতি আসেনি। কারণ নির্যাতনের শিকার ছিল ‘ভুল পক্ষের’ গণমাধ্যম, যাদের নিয়ে কান্নাকাটি করলে নুরুল কবিরদের সুশীলত্বে কোনো পয়েন্ট যোগ হতো না, বরং অনেক পয়েন্ট কাটা পড়ত!
সুশীলত্বের পয়েন্ট বাড়ানোর জন্যে নয় বরং বিবেকের তাগিদ থেকেই নুরুল কবিরকে নাজেহাল করার জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যারা এসব করে আমাদের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করছেন, তাদের কাছে করজোড়ে মিনতি জানাচ্ছি—‘এসব বন্ধ করুন!’
আগুন দিয়ে অফিস পোড়ানো যেমন অন্যায়, তেমনি সেই আগুনকে পুঁজি করে নিজেদের অতীত পাপ ঢাকার চেষ্টাও সমানভাবে নিন্দনীয়। মতি-মাহফুজরা আমাদের বাপ-দাদার বোধ-বিশ্বাস বর্গা দিয়ে শর্তহীন আন্তর্জাতিক অনুমোদন (International approval) নিজেদের বাগে নিয়ে ফেলেছেন। বাছাইকৃত নৈতিকতা (Selective Morality) এবং ফ্রেমিং ও ট্যাগিংয়ের রাজনীতি দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। এক-এগারোয় যারা, ফ্যাসিবাদেও তারা; আবার ফ্যাসিবাদ তাড়িয়ে ইন্টারিমেও একই আংকেলরা। ওই আংকেলরা আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, দাম্পত্যনীতিসহ সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গেছেন, হারিয়েছেন শুধু জনআস্থা বা পাবলিক ট্রাস্ট! এটার জন্যই তারা শরণাপন্ন হয়েছেন বিএনপির মতো একটি দলের কাছে। এরকম জনআস্থায় দেউলিয়া গোষ্ঠীকে টেনে তোলার সম্ভাব্য রাজনৈতিক ঝুঁকিটুকু ঠিকভাবে (Proper Risk Assessment) গণনায় নেওয়া উচিত।
আলো-স্টার কলাকুশলীদের অন্যতম একটা মিশন হলো জাতীয়তাবাদী বলয়ের রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিবৃত্তিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব সৃষ্টি করা। দেখুন, একটা নমুনা।
গত শুক্রবার প্রথম আলোর একজন পাঠিকার বাসায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকা সরবরাহ করা হয়। ওই পাঠিকা ঘটনাটি সেদিনকার ‘আমার দেশ’-এর ফ্রন্টপেজ ছবিসহ নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারুফ মল্লিক একটি পোস্ট দিয়েছেন। তার মূল বক্তব্য—বৃহস্পতিবার রাতে হামলার কারণে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ছাপা না হওয়ায় সারা দেশে অনেক গ্রাহকের কাছে প্রথম আলোর বদলে আমার দেশ পত্রিকা পৌঁছেছে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম আলোর বড় সার্কুলেশনের জায়গায় কম সার্কুলেশনের আমার দেশ এত কপি কীভাবে ও এত দ্রুত সরবরাহ করল। সময়সূচি অনুযায়ী হামলার আগেই প্রথম সংস্করণ প্রেসে যাওয়ার কথা, তাই অতিরিক্ত কপি ছাপানোর সময় পাওয়া কীভাবে সম্ভব? আমার দেশ কি আগে থেকেই বিষয়টি জানত বা হামলার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত ছিল?
তার এই প্রশ্নে অনেকেই ভীষণভাবে আন্দোলিত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই পোস্টটি শেয়ার করে মন্তব্য করেছেন—‘যৌক্তিক প্রশ্ন।’
এখানে কয়েকটি পাল্টা প্রশ্ন—মাত্র একজন পাঠিকার কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ এবং আরো কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করেই আমাদের প্রিয় মারুফ ভাই জেনে গেলেন যে, বিরাটসংখ্যক প্রথম আলোর পাঠকদেরই আমার দেশ সরবরাহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পত্রিকা পাঠকদের মনস্তাত্ত্বিক গঠন কি এটাই বলে যে, প্রথম আলো না পেলে তারা আমার দেশ বাসায় রাখবেন? প্রথম আলো না পেলে সমকাল, যুগান্তর, কালবেলা, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, ইনকিলাবসহ সমগোত্রীয় অনেক চয়েজ আছে। কিন্তু প্রথম আলো না পেলে কস্মিনকালেও কেউ আমার দেশ রাখবেন না। এরকম একটা সুখস্বপ্ন নিয়ে গবেট (?) আমার দেশ কর্তৃপক্ষ সেই রাতেই তাদের পত্রিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দিলেন? আর গ্রাহকরা তাদের হকারের ঠেলে দেওয়া কাগজটিই সুবোধ বালকের মতো রেখে দিলেন? আর এটা থেকেই ফারজানা রূপার স্টাইলে মারুফ মল্লিক গণনা করে ফেললেন যে, আমার দেশই মবতন্ত্র সৃষ্টি করে আলো-স্টার অফিসে আগুন দিয়েছে?
এরকম খাপে খাপ মিলিয়ে এই প্রথম আলো দেশের নিরীহ আলেম বা তালেবে এলেমদের ভয়ানক জঙ্গি বানিয়েছে। তারেক রহমানকে গাল-ফোলা মাস্তান বানিয়েছে, জজ মিয়া নাটক দেখিয়ে পেছনের মহানাটককে দৃশ্যপট থেকে গায়েব করেছে। আজ বিএনপির একশ্রেণির নেতা ও কর্মীরা এসব অনেক ইতরামি ভুলে গেছেন।
আজকে বিএনপির চারপাশে অনেক বসন্তের কোকিলের সমাবেশ ঘটছে। এক-এগারোর প্রাক্কালে তাদের অনেকেরই দেখাই মেলেনি। অনেকেই তখন আবার আলো-স্টার প্রযোজিত মাইনাস টু ফরমুলাকে শানিত করতে নিজের পুরো মগজ ঢেলে দিয়েছিলেন! সেই মাইনাস টুতে সার্বজনীনতার ফ্লেভার টানতে বাহ্যত ‘হাসিনা-খালেদা’ বলা হলেও তা ছিল মূলত ‘খালেদা-তারেক’।
সে সময় বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব, মারুফ কামাল খান শফিক রেহমানের বাসার এক আড্ডায় বলেছিলেন, এক-এগারোর ঝড়ের সময় মনে হয়েছিল যে, শুধু আপনারা কয়েকজনই বিএনপি করেন! সে সময় বিবিসির স্বনামধন্য সাংবাদিক সিরাজুর রহমানও আমাদের সঙ্গে যায়যায়দিন-এ লিখতেন এবং ড. মাহমুদুর রহমান এবং ফরহাদ মজহার প্রমুখ দৈনিক নয়া দিগন্তে লিখতেন। জরুরি সরকার এসেই কিন্তু গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করেনি! তবে আমাদের কথিত জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা কেন আপনা-আপনি মুখ বা কলম বন্ধ করে ফেলেছিলেন, সেটিও এক গবেষণার বিষয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ যারা অলংকৃত করেছিলেন, যাদের সংখ্যা কমপক্ষে কয়েকশ হবে, তাদের সবাই সেদিন চুপ মেরে গিয়েছিলেন!
এরা আবার এখন সরব হয়েছেন। বসন্তের এই কোকিলদের সম্মুখে জেন-জি প্রজন্ম মারাত্মক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে! হাদির মতো এক ছোকরা এই আংকেলদের আত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে! এই প্রজন্মের সঙ্গে যদি সাচ্চা জাতীয়তাবাদের সাক্ষাৎ ঘটে যায়, তবে তো সমূহ বিপদ! এ কারণেই শহীদ হাদির মতো অনেককে গুপ্ত শিবির আখ্যা দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তাতেও থামানো না গেলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তাতে শয়তান নিজে আরো বড় গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে। আগে হয়তো শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ মানুষ শহীদ হাদিকে চিনতেন, তার কথা শুনতেন। এখন প্রায় শতভাগ মানুষের কাছে শহীদ হাদির ম্যাসেজ পৌঁছে গেছে! এভাবেই শয়তানের কারসাজি স্রষ্টার মহাপরিকল্পনার কাছে হার মানে।
এখন হাদির মুখ থেকে জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার প্রশংসার ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে! এই চাচাদের কথা ১০ জন মানুষও শোনে না। কিন্তু শহীদ হাদির সেসব কথা লাখ লাখ যুবক শুনছে, দেখছে।
বিএনপির সামনে এখন মূলত দুটি পথ খোলা। একটি হলো, ক্ষমতার বসন্তে হাজির হওয়া সুবিধাবাদী ‘বসন্তের কোকিলদের’ কৃত্রিম ভালোবাসা। অন্যটি হলো শহীদ হাদিদের মতো অসংখ্য তরুণের রক্ত, ত্যাগ ও অটল প্রতিজ্ঞার ওপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি গড়ে তোলা। কোন পথটি বিএনপি বেছে নেবে, সেটাই নির্ধারণ করবে দলের ভবিষ্যৎ ও জনগণের আস্থার ভিত্তি।
এখনো সময় পুরোপুরি ফুরিয়ে যায়নি, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্তটি দ্রুত এগিয়ে আসছে।