হোম > মতামত

জেন-জির ভাষা

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

নেই বাংলা একাডেমির আভিজাত্যে ভরা অভিধানে, খুঁজে পাবেন না প্রচলিত গালাগাল কিংবা বাক্যালাপের জনপ্রিয় পরিসরে। তবে ক্রমেই একটি শব্দ বেশ ভালোভাবেই ঠাঁই করে নিয়েছে নেটিজেনদের মধ্যে। ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে ইউটিউব ভিডিও, চায়ের টেবিল থেকে খেলার মাঠ কোথায় নেই? সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে শব্দটি লেখা হয়েছে ধুন্ধুমার সংঘাত, এমনকি গোলাগুলিও। এতখানি কথা বলার পর যদি শব্দটি উল্লেখ নাও করা যায় সমস্যা নেই। পাঠক বিরক্ত হয়ে নিজেই বলে বসবেন ‘চুদলিং পং’ কী লিখছে এইটা?

বুলি নাকি গালি? এটা কি কোনো জনপ্রিয় গানের কলি? উত্তর হবে—না। তবু মানুষ বলে যাচ্ছে, বকে বকে যাচ্ছে, শুনে যাচ্ছে, বয়ে যাচ্ছে। অনেকেই যেন বয়েই যাচ্ছে। এদিকে অবাক বিস্ময়ে বিশ্লেষকদের চক্ষু চড়কগাছ। তারা ভাবতে বসেছেন এতদিন চুলের হিন্দি প্রতিশব্দ আমাদের বেগ ও আবেগের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল। ভালো কিংবা মন্দ, ওদিকে ভালোমন্দের দোলাচলে সব শব্দ যখন অচল কিংবা গতিশীল ভাবাবেগে অনেক অনুভূতি সচল। ঘুরে-ফিরে চুলের হিন্দি প্রতিশব্দটাই বের হয়ে আসত মুখ থেকে। খাবারের বদহজম হলে পায়ুপথে যেমন বায়ু নির্গত করে দোপেয়ে থেকে চতুষ্পদী প্রাণিকুল। ঠিক তেমনি এ যেন আবেগ-অনুভূতির বদহজম। কিছু উল্টোপাল্টা ঠেকতেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসত ঘুরে-ফিরে এই একটা শব্দই।

জুলাইয়ের পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। তাই বলে আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই দ্বন্দ্বমধুর বেদনাবিধুর হিন্দি শব্দটাও গায়েব হয়ে চুদলিং পং আসবে, এটা কেউ ভাবেনি। আমাদের অস্বীকারের সুযোগ নেই যে বাংলায় সৃষ্টি হয়েছে অনেক শব্দ, নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছেও অনেক শব্দ। তার আছে আলাদা এক্সপ্রেসন। কবি নজরুলের বিভিন্ন কবিতায় আরবি আর ফারসির ব্যবহার যেমন ঢের, তেমনি তিনি বের করে এনেছেন নানা ভাষার মিশেলে নিত্যনতুন শব্দও। মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখের কবিতাতেও এমন শব্দের দেখা মেলে, যা একেবারেই নতুন।

আমরা জানি যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাজিলের অ্যালমান্ডা (Allamanda) নামক হলুদ ফুলটির সৌন্দর্যে অপার মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি আবেগে এর একটা বাংলা নামও দিয়েছিলেন। এখন আমরা কমবেশি সেই ফুলটিকে অলকানন্দা নামে চিনি। রবিঠাকুরের হিসেবে স্বর্গের গঙ্গার তথা অলকানন্দা নদীর সঙ্গে সম্পর্কিত এই ফুল। এর উজ্জ্বল হলুদ রঙ স্বর্গের গঙ্গার মতো পবিত্র ও সুন্দর বলে মনে হয়েছে কবি রবিঠাকুরের কাছে। কিন্তু আমাদের বর্তমান জেন-জি প্রজন্ম যেখানে রবিঠাকুরের নামটাকেই চুদলিং পং করে দিয়েছে, তাকে ডাকছে র.ঠা। যেখানে তারা নতুন করে ডাকতে শিখেছে বিশ্বকবি রোদ্দুর রায়কে। নৌকাডুবি কিংবা সোনার তরীকে গোনায় না ধরে তারা বেছে নিয়েছে পরম ক্যাওড়া কাব্যগ্রন্থ কিংবা তার কবিতা ‘ক্যালানের মতো ঠ্যাং তুলে’। সেখানে ভুলেভালে এই চুদলিং পং নতুন করে আলো ছড়াক আর অন্ধকারের চাদরে মুড়ে দিক চারপাশ, এসে অস্বীকারের সাধ্য কার?

নতুন প্রজন্মের কাছে সবকিছুতে নতুনত্ব প্রয়োজন। তাই তারা আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করতে চেয়েছে নিজের মতো করে। আমাদের পাড়ার মোড়ের আড্ডা, খেলার মাঠের জটলা আর চায়ের দোকানের চৌহদ্দির জমায়েতগুলো ঘুরে-ফিরে হাজির হয়েছে ফেসবুক হোমপেজের খোলা ময়দানে। এখানে আবার চাইলেই উজবুকের মতো যা ইচ্ছা তাই বলা যায় না। কারণ মাথার উপর ঝুলছে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের খড়গ। এ যেন নিত্যনতুন বিড়ি-সিগারেট টানতে শুরু করা কিশোরের সামনে কোনো বেরসিক মুরব্বি হুট করে হাজির হলে যা করতে হয় তাই। তখন যেভাবে সেই বিড়ি কিংবা সিগারেট লুকিয়ে সালাম দিয়ে কৃত্রিমভাবে সম্মান দেখাতে হয়। ফেসবুকের এই কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের চুদলিং পং করে দিতে গেলে চাই নিজের মতো ভাষা। আর সেটাতেও জেন-জি এক কাঠি সরেস।

মন খুলে গালি দিতে ইচ্ছা করছে। কমিউনিটির জালে আটকে যাচ্ছে অনেক কথা। তবে জেন-জিকে আটকানো সাধ্যকার। সে বলে যাচ্ছে আকাশ ভরা তারা, ঔগা মারা সারা। কিংবা নায়ক মান্নার মতো ওঠবস করতে না পেরে সে সংক্ষেপে লিখে দিচ্ছে ‘গোমাসা’ কিংবা ‘হোমাসা’ কমপ্লিট। এতে করে কালপ্রিট কে বুঝে ওঠার আগেই কাহিনি শেষ। আগেকার দিনে কাউকে একঘরে করা হতো। এখন ঠিক তেমনি কাউকে সাইজ করতে জেন-জি তাকে বানিয়ে দিচ্ছে মিম এলিমেন্ট। একজন প্রতাপশালী মানুষকে যখন কার্টুন ক্যারেক্টারের বিকল্প ভাবা হয়, তখন আসলে সব থাকলেও তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বুদ্বুদের মতো উড়ে যায়।

‘চুদলিং পং’ বলতে গেলে তো স্লোগান চলে আসে। ‘তুমিও জানো, আমিও জানি’। তবে এই শব্দটি বোঝা যত সহজ, একে বিশ্লেষণ করা ততটাই কঠিন। কথিত সভ্যদের আধিপত্যবাদী? আচরণের বিরুদ্ধে এ এক দৃশ্যমান দ্রোহ। তারা যখন সবকিছুকে কঠিন নিয়মে বেঁধে ফেলে অনিয়ম করতে চাইছে। ঠিক তার বিপরীতে এই দ্রোতের সুর। তাচ্ছিল্যভরে কেউ লিখছে ‘চুদলিং পং’। কিংবা তরে সিডিআই এখানে কী বলা হচ্ছে, সবাই বুঝতে পারছে। কিন্তু করার থাকছে না কিছুই। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে, কীভাবে জন্ম নিয়েছে এই ‘চুদলিং পং’—এটা কী আগেই ছিল বাংলাতে? নাকি নতুন করে হাজির হয়েছে?

আমরা যারা অনলাইন দুনিয়ায় ঘোরাঘুরি করি, তারা চিন্তায় পড়ে যান সিডিআই নাকি চুদলিং পং, কার আমদানি আগে? তবে মূল ঘটনা হচ্ছে, সিডিআিই আগে, চুদলিং পং পরে। প্রচলিত একটি দৈনিকের নামের আদ্যক্ষরের ‘ক’ সরিয়ে ‘ব’ দিয়ে লেখা একটি ফেসবুক পেজ থেকে এর সূত্রপাত। সেখানে গত ২৬ আগস্ট ২০২৫ একটা খবর প্রকাশ করা হয়। চীন গিয়ে ভোল পাল্টালেন নাহিদ, নিজের নতুন নাম রাখলেন ‘চুদলিং পং’।

পুরান ঢাকার নব্বই দশকের অনেকের দাবি—এই কথাটা তারা গালি দিতে গিয়ে বহু আগে থেকেই ব্যবহার করতেন। মতিঝিলের বিভিন্ন কলোনির অনেক বাসিন্দাও এই দাবি করেছেন। খুলনাতেও নাকি এই শব্দ ব্যবহার হয়েছে বলে অনেকে ফেসবুকে দাবি করেছেন। তবে ‘ব’ আদ্যক্ষরের ‘কালের কণ্ঠ’ প্রকাশিত স্যাটায়ার সংবাদের বাইরেও চুদলিং পং কথাটার বহুল ব্যবহার হচ্ছে। বলা যেতে পারে, বহুল ব্যবহৃত চুলের হিন্দি প্রতিশব্দটি এখন প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে ‘চুদলিং পং’ দিয়ে।

তবে কী শুরুতেই ‘চ’ আছে বলেই এত চুলকানি এই শব্দ নিয়ে। এই অনুমান ঠিক হতে পারে, তবে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কারণ এর আগেও যেগুলো ভাইরাল থেকে ভাইরাস হয়ে ঢুকে গেছে বাংলা প্রচলিত অভিধানে, সেখানেও ‘চ’ ছিল অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বর্ণ। যেমন : ছোটন কাকুর সেই বিখ্যাত শীতের সোদনে এখনো কুয়াশা-ঢাকা শীতের ভোরের মতো ফেসবুকে হোমপেজ ঢেকে দেয়। নাইট গাউন পরা সিলেটি ভদ্রলোকের ‘শাহিন নটির পুলাকে দরে প্যাল’ তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। এর আড়ালে হারিয়ে গেছেন আবদুল হাই সাহেব তার ‘আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম’ নিয়ে।

ভয়াবহ একটা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল। শোনা যায়, একজন হুংকার দিচ্ছে ‘কেউ যদি আনার সাহেবের ছাপা মারতি চিশটা করে তার ডনে বেতা হবে, আনার সাহেবের কিছু হবে না, হবে না, হবে না’। এই কথা শুনে অনেকেই বিব্রত হয়েছে। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনি। আর বলার কিছু ছিল না। এখনকার দিনে হলে কেউ হয়তো মন্তব্যের ঘরে লিখে দিতে পারত ‘চুদলিং পং’। কিন্তু তাতেও বিপত্তি। সম্প্রতি দেশ টেলিভিশনের সংবাদ শিরোনাম ‘কমেন্টে ‘চুদলিং পং’ লেখায় সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫’।

খবরে প্রকাশ—‘নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাত ২টায় উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।’

খবরের বর্ণনা অনুযায়ী আহতদের মধ্যে তারাব পৌরসভার বরাব ছাপরা মসজিদ এলাকার আল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় তিন রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলার তারাব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলপুর এলাকার মৃত সুজাত আলীর ছেলে সাকিবুল হাসান রূপগঞ্জ মানবাধিকার সংস্থার সদস্য হয়। এ নিয়ে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করেন। সেই পোস্টে একই এলাকার আবু দায়েন প্রধানের ছেলে মাহিম চুদলিং পং লিখে কমেন্ট করেন। এরই জের ধরে রাত ১১টার দিকে সাকিবুল হাসান ও মাহিমের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে রাত ২টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় উভয় লোকজনের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়। এতে শহিদুল ইসলাম নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আরো চারজন আহত হয়। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

তাই ইতিহাস যাই হোক বাস্তবতায় বহুল ব্যবহৃত এই চুদলিং পং নিয়ে আরো কত কী হয়, সেটাই দেখার পালা। যাই হোক, আমার অনেক প্রিয় লেখক জর্জ অরওয়েল তার প্রভাবশালী ১৯৪৬ সালের প্রবন্ধ ‘Politics and the English Language.’ এই বিষয়গুলো নিয়ে যে তত্ত্বটি উপস্থাপন করেছেন, তার ভাবার্থ হলো—‘রাজনৈতিক ভাষায় অস্পষ্টতা, সুচিন্তিত ভাষার ব্যবহার অর্থ লুকিয়ে রাখে এবং খারাপ শাসনের সুযোগ তৈরি করে এবং স্পষ্ট চিন্তা করার জন্য স্পষ্ট ভাষার প্রয়োজন।’ তার মতে, ভাষার অবনতি শুধু রাজনৈতিক দুর্নীতির লক্ষণ নয়, বরং তার একটি কারণও। এটি একটি পিছু ফিরে আসা চক্র সৃষ্টি করে, যেখানে অস্পষ্ট ভাষা অস্পষ্ট চিন্তার জন্ম দেয় এবং অস্পষ্ট চিন্তা ভাষাকে আরো অস্পষ্ট করে তোলে।

অরওয়েলের হিসেবে রাজনৈতিক ভাষা মিথ্যার শ্রীবৃদ্ধি করে, রাজনীতিবিদরা অস্পষ্ট, ‘বড় শব্দ’ ব্যবহার করে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য আড়াল করেন এবং তাদের অসহনীয় কর্মের জন্য জনসম্মুখে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়, একদিকে অস্পষ্ট ভাষার ব্যবহার, অন্যদিকে মূর্খ চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করে, যা আবার ভাষার আরো অবনতির কারণ হয়। যেহেতু স্পষ্ট ভাষা এবং চিন্তার মধ্যেই রাজনৈতিক সততা ও গণতন্ত্রের প্রকৃত শক্তি নিহিত, তাই ভাষাকে তার মতো বয়ে যেতে দিতে হবে। তাহলেই মুক্তমত এগিয়ে যাবে স্রোতস্বিনীর মতো। আর ভাষার গতিরোধ করতে গেলে সংস্কৃতির ‘চুদলিং পং’ হয়ে গিয়ে ভাষার অবস্থা হবে এঁদো ডোবার মতো। যেখানে আচারানুষ্ঠান আর বাগাড়ম্বরের ঘেরাটোপে হারিয়ে আমাদের খাবি খেতে হবে ‘চুলের হিন্দি প্রতিশব্দ’ আর ‘জঙ্গে চুদলিং পং’-এ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে।

লেখক : গবেষক ও সহযোগী অধ্যাপক

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

দ্বিমুখী নীতির বেড়াজালে বঙ্গোপসাগর

পিলখানা হত্যাকাণ্ড : এক গোয়েন্দা কৌশলের পাঠোদ্ধার

তরুণদের রাজনৈতিক মোর্চা স্বাগতম

শরিয়াহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিভাজন বনাম ঐক্য

তুরস্ক-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্ব

‘আগডুম বাগডুম’ এবং আমাদের জাতীয় ইতিহাস

আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের চিত্র

ক্ষমতা, ভারত ও বাংলাদেশের দায়বদ্ধতা

আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া ও দুটি ঘটনা