হোম > মতামত

শিরস্ত্রাণবিহীন, উন্নত শিরঃ বীরোচিত গণমাধ্যম

ড. আহমদ আনিসুর রহমান

প্রতীকী ছবি

শাসক সরকার আর শাসিত জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সুশাসনের জন্য অপরিহার্য।

শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ করে যেজন।

শাসিতের সস্নেহ কল্যাণে নিবিষ্ট সরকারে, সাধারণত থেকে থাকে সরকারের তিন “স্তম্ভ”, বা শাখা । কার্যনির্বাহী বা প্রশাসনিক, আইনপ্রণয়ন ও নীতিনির্ধারক আর আইনগত বিচার বিভাগ। তার সঙ্গে, সরকারের বাইরের আরেক প্রধান “স্তম্ভ”, গণযোগাযোগমাধ্যম, এই চারে মিলে হয় সুশাসনমূলক শাসনব্যবস্থা।

সরকারের স্থায়িত্ব ও সফলতা আর নিরাপত্তাসহ জনগণের সব ধরনের কল্যাণের জনস্বার্থ, উভয়ের জন্যই দরকার দক্ষ ও জনগণস্বার্থমুখী গণমাধ্যমের দরকার। এর জন্য সরকার, জনগণ আর গণমাধ্যমকর্মীদের আন্তরিক জনস্বার্থমুখী পারস্পরিক সহযোগিতা। তার জন্য গণমাধ্যমের মৌলিক অভিপ্রেত চরিত্র ধরে রাখা ও তা নিশ্চিত করে তার সর্বোচ্চ সত এবং সঠিক সদ্ব্যবহার।

মাধ্যম

গণমাধ্যমের মৌলিক অভিপ্রেত চরিত্র কী? তদ্বারা নির্ধারিত তার সত ও সঠিক সদ্ব্যবহারই বা কী? “গণমাধ্যম” নামটির মূলার্থে দেখলেই তা বোঝার সূচনা হবে।

“গণমাধ্যম” শব্দটি আসলে, “জনগণ যোগাযোগমাধ্যম” কথাটির সংক্ষেপ। এর মূল অংশ হলো “মাধ্যম”, যা খুব সম্ভব মানবকুলের মূল ভাষা, সেমেটিক বা প্রাচীন আরবির “মোদ্বয়” যা “মদ্বিয়” বা “মুজ্বিয়া” রূপে উচ্চারিত হয়, তা থেকে বিবর্তিত হয়ে উদ্ভূত। এই শব্দের আরো গভীর মূল “দ্ব” বা “দ্যু” যা কোথাও “জ্ব”, “জ্ব্যু” বা “জ্যু” বলেও উচ্চারিত। এই শব্দমূলের অর্থ “আলো”Ñএই অর্থ নিয়েই ওই শব্দমূল থেকে আসে বাংলা বা সংস্কৃতের “দেব”, যা থেকে আবার ফারসি, উর্দু আর গ্রামবাংলার “দেও” ও “দেও”-দানব, বা “দেওবন্দ” ও “দ্যুতি”; গ্রিকের “জ্বয়ু”, “জয়ুস” বা “জিউস” (Zeus), আর, আরবি, ফারসি, বাংলার “অজ্বু”। তাই, এইরূপ শব্দ মূলার্থ নিয়ে উদ্ভূত “মধ্য”-এর মৌলিক অর্থে “আলো”-এর একটি ধারণা নিহিত। “মধ্য”-এর মূলার্থ, “আলো” করা বা “আলোকিত”, যেমন : ওই শব্দমূল থেকেই উদ্ভূত “অজ্বু”-এরও একই অর্থ, যদিও ভিন্ন প্রেক্ষিতে।

শব্দ মূলার্থ বিচারে তাই “মধ্য” গভীরতম মূল অর্থ হলো, কোনো কিছুর দুপাশের বা দুপ্রান্তের মাঝখানের আলোকিত, তথা প্রকাশ্য অংশ যা পরিষ্কার দেখা বা বোঝা যায়। মধ্যের এই অংশ থেকে দুপাশে যত দূরে যা কিছু, তা-ততই অপরিষ্কার, অপ্রকাশ্য, অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই “মধ্য” থেকে উদ্ভূত “মাধ্যম”-এর ক্ষেত্রেও তাই। সে অর্থে, “মাধ্যম” হলো তা’, যা কোনো কিছুকে আলোকিত করে, প্রকাশ করে, পরিষ্কার করে, সর্বোচ্চ সম্ভব জানার ও বোঝার উপায় বা ব্যবস্থা করে।

যোগাযোগ

“যোগ” থেকে “যোগাযোগ। সম্ভত প্রাচীনতম মনুষ্য ভাষা, “সেমিটিক-নাবাতীয়” (“Semitic- Nabatean”), যাকে প্রাচীন “আরব্য” (“Old Arabian )-ও বলা যায়Ñতার একটি শব্দ, “য়ুক্ব”, “য়ূক্ব” থেকে উদ্ভূত। বহু জাতি ও এলাকায়ই “য়” আর “য” একে অন্যের জায়গায় ব্যবহৃত হয়, আর সেভাবে উচ্চারিতও হয়। এভাবেই “য়ূক্ব”, “যুক্ব”-এ পরিণত হয়।

একইভাবে, “আরব্য”-এর “উ” বা “উ”-কার কখনো কখনো “ও” বা “ও” হিসেবে উচ্চারিত হয়। ফলে, “য়ূক্ব” থেকে “যূক্ব” হওয়া মূলত “আরব্য” শব্দটি বাংলায় এসে “যোক্ব” হয়ে পড়ে।

এখানে শব্দের শেষের “ক্বাফ” আর “আইন”, যা মিলে “ক্ব” হয়েছে, তার দুটোই গলার গভীর থেকে (glutorally) এমনভাবে উচ্চারিত হয়, যে তা প্রায়ই গলার গভীর থেকে উচ্চারিত “গ” (“গ্বাইন”)-এর মতো শোনায়। ফলে “আরব্য” ভাষার মূল “ইয়ূক্ব” অবশেষে বাংলায় এসে “যোগ” রূপে উচ্চারিত ও প্রচলিত হয়।

এর বিবিধ অর্থে অন্তর্ভুক্ত, “পতন” বা “ঘটন” বা কোনো ঘটনায় কোনো কিছু পতনে যা ওপরে এসে পড়ল আর যার ওপরে পড়ল, তার মিলন বা এক জায়গায় হওয়া। কারো ওপর কোনো একটি খবর এসে পড়লে, যার ওপর এসে পড়ল আর যে খবর এসে পড়লÑদুয়ে যে সম্পর্ক হয়, তা’ই “যোগ”।

এই “যোগ”-এর সঙ্গের “আয়োগ” যুক্ত হয়ে হয়, “যোগ-আয়োগ”, যার “আয়োগ”-এর “য়”, ওপরে বর্ণিত বিবর্তন প্রক্রিয়ায় “য”-তে রূপান্তরিত হয়ে “যোগ-আয়োগ” বাংলায় “যোগ-আযোগ”-রূপে উচ্চারিত হয়। “যোগ-আযোগ” সংক্ষেপিত হয়ে হয়, “যোগাযোগ”। এর অর্থ বুঝতে “আয়োগ” তথা “আযোগ”-এর অর্থটিও বোঝা দরকার।

মূল “আরব্য”-এর “আয়ূক্ব”, বা “আয়োক্ব”, যার অর্থ, “তা কি ঘটেছে? বা “তা কি আপতিত হয়েছে”Ñওপরে বর্ণিত বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ভারতবর্ষে এসে “আয়োগ” হয়ে পড়ে, সংস্কৃতে যার অর্থ হয়ে দাঁড়ায়, “তদন্তে নিয়োজিত”, তথা “তদন্তগত” বা “তদন্তে”। ওপরে বর্ণিত প্রক্রিয়ায়ই, এই “আয়োগ”, বাংলায় এসে তা “আযোগ”-এ পরিণত হয়ে “তদন্ত”Ñগত অর্থ বহন করে।

এভাবে “যোগ” আর “আযোগ” যোগ হয়ে যে “যোগাযোগ”-এর অর্থ দাঁড়ায় মোটামুটিÑ“আপতিত তদন্তমূলক বা তদন্তসাপেক্ষ খবর, তা যার ওপর এসে আপতিত হয়, আর যার থেকে এসে আপতিত হয়, এ তিনের ভেতরকার সম্পর্ক করে দেওয়া।”

তাহলে “যোগাযোগমাধ্যম”-এর মৌলিক অর্থ দাঁড়ায়, “তা’ যা আপতিত তদন্তমূলক বা তদন্তসাপেক্ষ খবর, তা যার ওপর এসে আপতিত হয়, আর যার থেকে এসে আপতিত হয়, এ তিনের ভেতরকার সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিষ্কার বা স্বচ্ছ।”

গণমাধ্যম

“গণমাধ্যম” আসলে “গণযোগাযোগমাধ্যম”-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ওপরে যা দেখলাম, তার আলোকে বুঝলে বোঝা যায়, “গণযোগাযোগ মাধ্যম”-এর অর্থ হবে “গণ”-এর ওপর এসে পতিত তদন্তমূলক বা তদন্তসাপেক্ষ খবর, যে “গণ”-এর ওপর এসে তা পতিত আর যেখান থেকে তা এসে পতিত হয়Ñএই তিনের ভেতরকার সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পরিষ্কার বা স্বচ্ছ করে দেয়, যা, তা’। এমন মাধ্যম যা তদন্তপূর্বক, “গণ”-এর ওপর এসে পতিত খবর বা তথ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্বচ্ছ করে দেয়।

সে যে কী, তা বুঝতে “গণ” কথাটির অর্থ বোঝা দরকার।

এই “গণ”-ও প্রাচীনতম মনুষ্য ভাষা, “আরব্য” থেকে সম্ভবত। “আরব্য” ভাষায়, “জনস” বা “জেনস”Ñঅর্থ, “প্রজাতি” বা একই ধরনের বস্তু বা প্রাণীর “সমষ্টি”। এই আরব্য “জনস” বা “জেনস” থেকেই ইংরেজি “Genus“ শব্দটির উৎপত্তি। এই “জনস” ভারতবর্ষে সংক্ষিপ্ত হয়ে, “জন”-রূপে প্রচলিত হয়।

সেই প্রাচীন “আরব্য” ভাষার “জ”, প্রায়ই “গ” বলে উচ্চারিত হয়। সেই প্রাচীন “আরব্য” থেকে হাজার হাজার বছরে বিবর্তিত হয়ে এসে পরিণত হয়ে যে বর্তমান, আধুনিক “আরবি” হয়েছে, তাতে আজও বহু জায়গায়Ñযেমন মিসরেÑ“জ”, “গ” হিসেবে উচ্চারিত হয়। সেই প্রাচীন “সেমিটিক” তথা “আরব্য” থেকে উদ্ভূত হিব্রুতে আজও “জ” সাধারণত “গ” রূপে উচ্চারিত হয়। এসবের প্রভাবে, প্রাচীন “আরব্য”-এর “জেনস” বা “জনস” ভারত বর্ষে এসে সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে যে “জন”, তা কখনো কখনো “গণ”-রূপেও উচ্চারিত হয়।

এভাবে, বাংলায় “গণ” শব্দটি ব্যবহৃত হতে শুরু করে মানুষের সমষ্টি। “জন” থেকে “গণ”রূপে উচ্চারিত এই “মানব-সমষ্টি”কে “জন”-“গণ”, “জনগণ”, বা সংক্ষেপে আবার “গণ”-ই বলা হয়।

এসবের ভিত্তিতে “গণযোগাযোগ মাধ্যম”Ñসংক্ষেপে “গণমাধ্যম”Ñএর অর্থ দাঁড়ায় মানবসমষ্টি রূপ “জনগণ”-এর ওপর আপতিত খবর বা তথ্য তদন্তসাপেক্ষে স্বচ্ছ করে যা, তা’। অর্থাৎ, “গণমাধ্যম” তথা “জনগণ যোগাযোগমাধ্যম”, তাই, মূলত হলো সেই উপায় বা ব্যবস্থা, যা জনগণের জন্য বা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাঁদের জন্য, তাঁদের সংক্রান্ত, বা তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় আলোকিত করে, প্রকাশ করে, পরিষ্কার করে, সর্বোচ্চ সম্ভব জানার ও বোঝার রাস্তা করে দেয়।

এটাই গণমাধ্যমের ভূমিকা

গণমাধ্যমের এই ভূমিকায় নিয়োজিত করে, তাতেই তার ব্যবহারই তার যথার্থ সদ্ব্যবহার।

বিবিধ “গণমাধ্যম”

ঐতিহাসিকভাবে জনগণের স্বার্থে শাসক সরকারের যোগাযোগ হতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে, শাসকদের অধীন সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে। তা হয় ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির মুখোমুখি কথোপকথনে। না হয় চিঠির মাধ্যমে।

জনগণের যোগাযোগ হতে হয় ব্যক্তিগত পর্যায়েÑমুখোমুখি কথোপকথনে বা চিঠি দিয়ে। নয় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ‘পার্লামেন্ট’, ‘দেওয়ানে আম’, ‘সংসদ’-এ পাঠিয়ে। আর এসবে কাজ না দিলে মিছিলে বা জনসভায় স্লোগান দিয়ে বা বক্তৃতার মাধ্যমেÑএই আশায় যে হয়তো তা’ শাসকদের নিজেদের বা তাদের কর্মচারী বা চরদের কর্ণগোচর হয়ে পরিশেষে শাসকদের জানান হবে।

তবে গণমাধ্যম হিসেবে দুটোই অপ্রতুল হলো।

শাসক সরকারের অধীন সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে মুখোমুখি কথোপকথনে বা চিঠির মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগাযোগ জনগণের স্বার্থে হলেও, তা জনগণের সঙ্গে তা হতো না । আর সাধারণত তা জনগণের স্বার্থেও হয় না, হয় শাসকদের স্বার্থে। এসব যোগাযোগমাধ্যমে সরকার জনগণকে কিছু বলতে চাইলেও, তার আর পরিষ্কার বা স্বচ্ছ হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না।

আর ‘পার্লামেন্ট’, ‘দেওয়ানে আম’, ‘সংসদ’-এ জনগণের প্রতিনিধিরা গিয়ে কথা বললেও, তা’তে জনগণের সরাসরি সরকারকে বলার মাধ্যম হবে না। আর সাধারণত জনপ্রতিনিধিরা সংসদে বা দেওয়ানে বা পার্লামেন্টে গিয়ে আর সেখানে যে জনগণের প্রতিনিধি তারা, তাদের কথা আর তারা বলে না। ফলে, এভাবে জনগণ সরকারকে যা বলতে চায়, তা সরকারের কাছে পরিষ্কার বা স্বচ্ছ হওয়ার কোনো উপায় নেই।

সরকার আর জনগণের দুই তরফা যোগাযোগ এ দুই ধরনের যোগাযোগমাধ্যমে পরিষ্কার আর স্বচ্ছ হওয়ার উপায় নেই বলে এগুলো ঠিক গণমাধ্যম হতে পারে না।

এমতাবস্থায়, সম্ভবত ১৬০৫ সনে প্রথম গণমাধ্যম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় এমন একটি “খোলা চিঠি” হিসেবে, যা একদিকে সরকার আর অন্যদিকে জনগণ, উভয়ের জন্যই উভয়ের অবস্থা ও অবস্থান পরিষ্কার, স্বচ্ছ করে তুলে ধরার দায়িত্ব নিয়ে। সেই সম্ভবত প্রথম গণমাধ্যমরূপ সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়, জার্মান ভাষায়, স্ট্রাসবুর্গ থেকে জহান ক্যারলাস কর্তৃক, Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien, নামে। একশ ৭৫ বছর পর ১৭৮০ সনে এশিয়ার সম্ভবত প্রথম গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশে, Hicky’s Bengal Gazette, ইংরেজিতে জেমস অগাস্টাস হিকি নামে এক আইরিশ ব্যক্তি দ্বারা। তৃতীয় বিশ্বের জাতিগুলোর নিজস্ব ভাষায় প্রথম গণমাধ্যমিক সংবাদপত্র রূপে প্রকাশিত হয়, ১৮২৮ সনে, মিসর থেকে “আল-ওক্বায়ী আল-মিস্রীয়্যা” (মিসরীয় ঘটনাবলি) নামে, মিসরে মুসলিম বিশ্বের খলিফার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বশীল “খুতিব”, মুহম্মদ ‘আলী কর্তৃক, যিনি ওই ভূমিকায় মিসরের শাসক ছিলেন। এর সবগুলোরই অন্যান্য সম্ভাব্য ভূমিকার ভেতর একটি ছিল শাসক সরকার আর শাসিত জনগণের দুই তরফা যোগাযোগকে সরকারি চিঠিপত্র বা সংসদের চেয়ে বেশি পরিষ্কার করে উপস্থাপনের চেষ্টা। এ কোনো সহজ বিষয় ছিল না। আর দুই তরফা যোগাযোগে, উভয় পক্ষেরই বলার বিষয়কে সাংবাদিকের মাধ্যমে পরিষ্কার করে উপস্থাপনটা বাস্তবে পূর্ণাঙ্গও হতো না। এখনো, নানা বাস্তব কারণে, গণমাধ্যমে শাসক সরকার আর শাসিত জনগণের দুই তরফা যোগাযোগে উভয় পক্ষেরই বলার বিষয়কে সাংবাদিকের মাধ্যমে পরিষ্কার করে উপস্থাপনটা বাস্তবে পূর্ণাঙ্গও হয় না।

তা সত্ত্বেও, গণমাধ্যম অত্যন্ত আবশ্যক । তা না থাকলে বা ব্যর্থ হলে সরকারি যোগাযোগমাধ্যম হয়ে পড়বে স্বৈরাচারের ইশতেহার বা নির্দেশনা। যেমন : ছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রায় সব সরকারি যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রেÑউদাহরণস্বরূপ প্রাচীন রোমক সাম্রাজ্যের হাট-বাজারে দাঁড় করানো ‘একটা দুইমা’ বলে কথিত, পাথরে খোদাই নির্দেশনা বা আধুনিক যুগের একদলীয় শাসনব্যবস্থার “গেজেট”, সরকারি সংবাদপত্র বা রেডিও-টেলিভিশনও। আর গণমাধ্যম না থাকলে বা ব্যর্থ হলেÑপার্লামেন্ট বা সংসদ একটি স্বৈরাচারী সরকারের “রাবার স্ট্যাম্প”-ই শুধু নয়, কখনো কখনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে এমন স্বৈরাচারী সরকারের প্রতিষ্ঠার ভয়ংকর এক অস্ত্রে পরিণত হয়। যেমন : হয় ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর, মুসোলিনীর ইতালি আর হিটলারের নাতসি জার্মানি ও তাদের মতো আরো কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল ।

আর এই দুঃসহনীয় অবস্থার প্রতিকারের আশায় জনগণ প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় গোপন বা সাংকেতিক খবর বা আধুনিক নানা যান্ত্রিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো নিয়ন্ত্রণহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বৈরাচার প্রতিরোধে আগালে প্রায়ই ‘মব’-তন্ত্রের মাধ্যমে সমাজকে সমাজবিধ্বংসী নৈরাজ্য ঠেলে দেয়।

গণমাধ্যমের মধ্যস্থতায় জনগণ আর সরকারের মধ্যে যোগাযোগে উভয় পক্ষের বলার বিষয় পরিষ্কার, স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন যোগাযোগ যতখানি দরকার, ততখানি পূর্ণাঙ্গ না হলেওÑতা সরকারি চিঠি বা বিবৃতি-বক্তৃতা আর সংসদে গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যেভাবে যতটুকু সম্ভব, গণমাধ্যমে তার চেয়ে অনেক বেশি সম্ভব। যদি গণমাধ্যমকর্মী গণ-অসম সাহসিকতা এবং অনমনীয় সততার সঙ্গে, নির্মোহভাবে, সরকার ও জনগণের অবস্থা এবং অবস্থান সর্বোচ্চ সম্ভব স্বচ্ছতায় উপস্থাপন করতে পারেন। সরকারি মালিকানা বা সেন্সরশিপ, মাধ্যম মালিকের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ, ‘মব’ সহিংসতা, ব্যক্তগত উষ্মাজাত শত্রুতা, দারিদ্র্য ও তজ্জাত সম্ভাব্য পারিবারিক অশান্তি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অভাব, গুন্ডা বদ্মাশ ‘মাস্তান’দের উৎপাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দাঙ্গা, ধনাঢ্যের অন্যায্য চাপ ও দাবিÑনানা প্রতিকূলতার মুখ তা খুবই কঠিন।

এ যেন বর্ম ও শিরস্ত্রাণবিহীন বীরযোদ্ধার বিপৎসংকুল রণক্ষেত্রে সমরসম। তাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন!

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত

গণমাধ্যমের বয়ান নির্মাণ এবং কর্তৃত্ববাদের উত্থান

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বৈশ্বিক বয়ান ও হাসিনার ‘ডার্ক ডকট্রিন’

গণমাধ্যম কমিশনের রিপোর্টে আমার দেশ

‘কাকুতি মিনতি’ যুগের অপসাংবাদিকতার ছাপ

জাতিসংঘ অধিবেশন : হাসিনার কাগুজে হুংকার

টেলিভিশনের টকশো : সাংবাদিকতার মৃত্যু-পর্ব

ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি

গণমাধ্যম কর্মীদের যে পাঁচটি জিনিস জানা জরুরি

নতুন বিপ্লব, পুরোনো অভ্যাস : গণমাধ্যম কি বদলাতে পারবে?

যেভাবে জনতার সংবাদপত্র হয়ে উঠল আমার দেশ