চট্টগ্রামে আট দলের সমাবেশে ডা. শফিকুর
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নতুন কোনো ফ্যাসিবাদকে বাংলার মানুষ আর মেনে নেবে না। কেউ যদি নতুন করে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে চায়, তাহলে তারা পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাবে না।
শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি ময়দানে আট দলের বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে থাকা জামায়াত নেতৃত্বাধীন আট দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
জামায়াত ছাড়া বাকি সাত দল হলো-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
সমাবেশে জামায়াতের আমির বলেন, ফ্যাসিবাদীরা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাতো। তারা বলত বাংলাদেশ এখন সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ এখন কানাডা। অথচ বাংলাদেশ কানাডা হয়েছিল তাদের জন্য। তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল আর দেশের রাস্তাঘাট করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। একবার একটি মেয়েকে এক ডিবেটে বলতে শুনলাম, আজ যদি কবি বেঁচে থাকতেন তিনি বলতেন, ‘রাস্তাঘাটের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, চাঁদের জায়গায় চাঁদ তো আছে, বাঁশগুলো সব কই?’ এভাবেই সব বাঁশ উধাও হয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ আমলে। তারা পালিয়ে গিয়ে কানাডায় বেগমপাড়া করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো লুট করে, ডাকাতি করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে তারা ব্যবসা করেছে।
তিনি আরো বলেন, তারা শুধু রাজনৈতিক দলকে আঘাত করেনি, তারা বড় আঘাত করেছিল আলেম-ওলামার ওপর। হেফাজতে ইসলামের নেতারা সারা দেশে প্রতিবাদ করছিল, কারণ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের বিরুদ্ধে কিছু বেয়াদব স্পর্ধা দেখিয়েছিল। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে অনেক মানুষকে শাপলা চত্বরে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা বলেছিল, কোনো মানুষ মারা যায়নি। মানুষ খুন করার পর মানুষের রক্ত নিয়ে উপহাস। এটিই ছিল তাদের বৈশিষ্ট্য। এরা রক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল আর রক্ত হাতে নিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে।
জামায়াতের আমির বলেন, তারা বিডিআর হেডকোয়ার্টার্সে দেশপ্রেমিক ও চৌকস অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। জুলাইয়ে সারি সারি লাশ ফেলে তারা বলেছিল, অমুকের কন্যা দেশ ছেড়ে পালায় না।
তারা ওই খুনের কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদীরা বিদায় নিয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদ এখনো বিদায় নেয়নি। আমরা পরিষ্কার করতে চাই, ফ্যাসিবাদ কালো না লাল, আমরা তা দেখতে চাই না। কোনো ফ্যাসিবাদকে আমরা বরদাস্ত করব না।
তিনি আরো বলেন, আমরা আট দলের বা বিশেষ কোনো দলের বিজয় চাচ্ছি না। আমরা কোরআনের মাধ্যমে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় চাই। এছাড়া সুসাশন সম্ভব নয়। এ বিজয়ের বাঁশি ইসলামাবাদখ্যাত চট্টগ্রাম থেকে আপনারা বাজাবেন। এ বিজয়ের বাঁশি এখান থেকে শুরু হবে।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনের পরও আমাদের এ জাতির বৈষম্য দূর হয়নি। ১৯৭১ থেকে ’২৪ পর্যন্ত যারা শাসক ছিল, তারা মানুষের বৈষম্য দূর করতে পারেনি। মানুষকে শান্তি দিতে পারেনি। ২০২৪ সালে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আমরা ভেবেছি এবার চাঁদাবাজি, খুনখারাবি, অত্যাচার, নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ, মা-বোনদের ইজ্জতের হেফাজতের দেশ হবে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। আগামীতে আন্দোলন হবে এসব মুক্ত করার। ওই আন্দোলনে আমাদের বিজয় হবে। আমরা ইসলামি হুকুমাত কায়েম করব ইনশাল্লাহ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ আর কোনোদিন বনেদি এবং বড়লোকদের বাংলাদেশ থাকবে না। বাংলাদেশকে খেটে খাওয়া মানুষের বাংলাদেশ করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ এ আন্দোলন। আমাদের সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, নতুন বাংলাদেশ দেখা শেষ, সবুজ বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ। আগামীতে আমরা দেখব ইসলামের বাংলাদেশ, খেলাফতের বাংলাদেশ।
গতকাল দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকে নেতাকর্মীরা দলে দলে লালদীঘি ময়দানে জড়ো হন। সকাল থেকে বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলে। একই ময়দানে জুমা ও আসরের নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে নেজামে ইসলাম পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা ফজলুল করিম জিহাদীর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। লালদীঘির মাঠ ছাড়িয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় গিয়ে ঠেকে একদিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট, আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড়; অন্যদিকে সিনেমা প্যালেস, হাজারী গলি, ডিসি হিল, টেরিবাজার, কোতোয়ালি মোড়, লাভলেইন ও কাজীর দেউড়ি পর্যন্ত। নেতাকর্মীদের ভিড়ে পুরো এলাকার কোথাও তিলধারণের ঠাঁই ছিল না।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেনÑনেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, খেলাফত আন্দোলনের আমির হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চানসহ অন্যরা।
তাদের দাবি, ফ্যাসিবাদের পতনের দেড় বছর অতিবাহিত হলেও এখনো গণহত্যার নেতৃত্ব দেওয়া দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের সহযোগী জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা এখনো রাজনীতি করার স্বপ্ন দেখছেন। মিডিয়ায় ফ্যাসিবাদী শক্তি ফের সক্রিয় হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে ফ্যাসিবাদীদের দানবীয় আচরণ ভুলে গেছে। গণহত্যার শিকার শহীদদের আত্মত্যাগ অস্বীকার করতে শুরু করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি মেনে নেওয়া এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ও তাদের সহযোগীদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান বক্তারা।