সাংবাদিকদের প্রতি মির্জা ফখরুল
রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে সাংবাদিকদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এখানে মিয়া গোলাম পরওয়ার (জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল) সাহেব সঠিকভাবে বলেছেন যে, সাংবাদিকদের তাদের নিজস্ব যে দাবি দেওয়া, তাদের নিজস্ব যে কাজ এবং ইউনিয়নের মূল যে কাজটা তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে মালিক পক্ষ অথবা সরকারের সঙ্গে কাজ করা সেটাই বোধয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করলে সমস্যার সমাধান হয় না। আপনারা যদি কেউ বিরোধী দল বলেন বা সরকারি দল বলেন তাহলে সেটা কোনদিন হয় না। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ অর্থাৎ শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের এই জায়গাটাকে একদম ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি অনুরোধ করব আপনাদের নেতৃবৃন্দকে সেই জায়গা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের দ্বি-বার্ষিকী সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সারাদেশের ১৮ অঙ্গ ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বিকালে রয়েছে কর্ম অধিবেশন যেখানে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
নির্বাচনের জন্য জাতি উন্মুখ
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন যে এমন একটা সময় যে সময়টার জন্য গোটা জাতি অপেক্ষা করে আছে যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা ফিরে যেতে সক্ষম। আমরা সবাই এটা (নির্বাচন) চাই।
একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাইলে অপরের যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেটাকে আমাদের একই সঙ্গে মূল্য দিতে হবে। ঐক্য থাকবে মূল জায়গায় ঐক্য থাকবে কিন্তু ভিন্নতা তো থাকবে। গণতান্ত্রের মূল কথা এই জায়গায় যে আমি আপনার সঙ্গে একমত হবো না কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি অবশ্যই সেটাকে রক্ষা করব।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়। তার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম আপনার যত রকমের আপনার মিথ্যা অপপ্রচার প্রচার চালানো হয় এই বিষয়গুলো থেকে আমার মনে হয় আমাদের সকলেরই একটু বিরত থাকা উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা নৈরাজ্য
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তো সবচেয়ে বড় যে ক্রাইসিসটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে এই যে আপনার সামাজিক সোশ্যাল মিডিয়া। এই সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু সেখানে কোন দায়বদ্ধতা নেই যা খুশি তাই বলা যায়। এমনভাবে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীদের সকলের সম্পর্কে যে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো হয় তাতে করে কিন্তু গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে তারা এমনভাবে একটা প্রচারণা চালান যে বাংলাদেশে আজকে একটা সমস্যায় দাঁড়িয়েছে। যেটা আমার কাছে মনে হয় যে একটা এক ধরনের এনার্কি, এক ধরনের একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবার চেষ্টা করেছে। মব ভায়োলেন্স তৈরি করা হচ্ছে, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণ করা হচ্ছে। একজন মানুষকে ভিন্নভাবে প্রচারিত প্রচার করা হচ্ছে যা নিঃসন্দেহে আমাদের গণতান্ত্রিক যে যাত্রা সেই যাত্রাতে কিন্তু আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।
তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন যে বিএনপি প্রমাণিত একটি রাজনৈতিক দল যে দলটি ১৯৭৫ সালে হয়েছে যার প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছিলেন এবং বন্ধ করে দেওয়া সমস্ত পত্রিকাগুলোকে খুলে দিয়েছিলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করেছিলেন।
ঠিক একইভাবে পরবর্তীকালে আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য যা কিছু করা দরকার তিনি চেষ্টা করেছেন। আমরা আমাদের ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা নিশ্চিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থাৎ পুরোপুরি ইন্ডিপেন্ডেন্ট থাকবে, স্বাধীন থাকবে সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করব। এ ব্যাপারে আমাদের কমিটমেন্ট পরীক্ষিত।
অধিকার প্রতিষ্ঠান করতে হলে ইউনিয়ন শক্তিশালী করুন
মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে এক ভাই বলেছেন চ্যালেন ওয়ানের কথা। চ্যানেল ওয়ানকে আপনার বিএনপির সঙ্গে জড়াচ্ছেন কেন ? এটা প্রাইভেট অর্গানাইজেশন, ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি আপনার হাউজ কিন্তু ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হয় এখানে কোন রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করাটা আমার মনে হয় সঠিক হবে না, এই জায়গাগুলো আপনাদের বিবেচনা করা দরকার।
আপনি যদি আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চান, চাকরির ক্ষেত্রে বা অন্য ক্ষেত্রে আপনার ইউনিয়নকে আরো শক্তিশালী হতে হবে। আপনাদেরকে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে হবে, কোন দলের লেজুড়বত্তি না করে আপনাদেরকে দাঁড়াতে হবে তাহলেই আপনি আপনার আদায় করতে পারবেন। অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে ইউনিয়নের দায়িত্বটা আপনাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে হবে।
ফ্যাসিবাদ আন্দোলনের ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
ঐক্য অটুট রাখুন
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাংবাদিকদের আজকে দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়াবার বড় শক্তি হচ্ছে আপনাদের ঐক্য । সাংবাদিকদের ঐক্যকে অটুট রাখা। আমরা দেখতে পারছি, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শাখায় আপনাদের ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যে সমস্ত এফিলেটেড ইউনিয়নগুলো আছে সেখানে এবং ঢাকায় নিজেদেরই একটা বিভক্তি আছে সারা দেশে তারপরে আমাদের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়ে গেছে।
ফলে রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকুক, সাংবাদিকদের ঐক্য যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে আমরা জাতি গঠনে গোটাকে জাতিকে ঐক্যের ক্ষেত্রে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারব।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিত্বে ওবায়দুর রহমান শাহিনের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল ও প্রচার সম্পাদক শাহজাহান সাজুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, হাসান হাফিজ, এলাহী নেওয়া খান সাজু, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, খুরশীদ আলম, মুন্সি আবদুল মান্নান, বারেক হোসাইন, বিএফইউজের এরফানুল হক নাহিদ, ১৮টি অঙ্গ ইউনিয়নের সভাপতির মধ্যে চট্টগ্রামে মো. শাহ নওয়াজ, রাজশাহীর আবদুল আউয়াল, খুলনার রাশিদুল ইসলাম, বরিশালের আজাদ আলাউদ্দিন, যশোরের আকরামুজ্জামান, বগুড়ার গণেশ দাশ, কক্সাবাজারের নুরুল ইসলাম হেলালী, কুমিল্লার শাহিন মির্জা, দিনাজপুরের সাদাকাত আলী, কুষ্টিয়ার আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু, ময়মনসিংহের আইয়ুব আলী, গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেন, সিলেটের বদরুজ্জামান বদর, ফেনীর সিদ্দিক আল মামুন, রংপুরের সালেকুজ্জামান সালেক,নারায়নগঞ্জের আবু সাউদ মাসুদ, মুন্সিগঞ্জের কাজী বিপ্লব হাসান বক্তব্য রাখেন।