হোম > রাজনীতি

জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে এনসিপিতে বিভক্তি

মাহফুজ সাদি

জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জোট বা আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তরুণদের গড়া দলের নেতারা। তবে এ সমঝোতা নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এনসিপিতে। নির্বাহী পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে থাকলেও আপত্তি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন ৩০ নেতা। এছাড়া ডা. তাসনিম জারা গতকাল শনিবার দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে জামায়াতের সঙ্গে জোট-সমঝোতার পক্ষে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ৯০ শতাংশ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির ৮০ শতাংশ নেতা মত দিয়েছেন। ফলে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সমঝোতার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ রোববার এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

একই কারণে নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব এককভাবে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে এজেন্ডা আকারে আনা হয় ৫৯ সদস্যের দলের নির্বাহী পরিষদের সভায়। সেখানে সবার মতামত চাওয়া হলে মাত্র চারজন বিরোধিতা করেন। এছাড়া বিরোধিতা করতে পারেন, এমন কয়েকজন সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।

কয়েকটি সূত্র জানায়, গত বুধবার এনসিপির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকা নেতাদের ৯০ শতাংশই জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোটের প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন। এরপর জামায়াত আমিরের সঙ্গে বৈঠকে করেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। সবশেষ গতকাল এর বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেন ৩০ কেন্দ্রীয় নেতা। তবে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে ২১৪ জনের মতো সদস্য আছেন। সে হিসাবে সমঝোতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ২০ শতাংশের কম নেতা।

এনসিপির আসন সমঝোতা নিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেন ছাড়া অন্যদের গণমাধ্যমে কথা বলায় নিষেধজ্ঞা আছে। সে কারণে কেউ নাম প্রকাশ না করলেও কয়েকজন নেতা আমার দেশকে জানান, সময়ের প্রয়োজন অনুধাবন করেই সমঝোতার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর আগে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করা হলেও অবমূল্যায়িত হতে হয়েছে। জুলাই বিপ্লবীদের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং সামনের সম্ভাব্য বিভিন্ন শঙ্কার বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বিরুদ্ধে নীতিগত আপত্তি জানানো ৩০ জনের মধ্যে অন্যতম এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন। তিনি আমার দেশকে বলেন, জামায়াতের জোটে যাওয়া না যাওয়া দলের একটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এক্ষেত্রে দুই শতাধিক নেতার মধ্যে মত-দ্বিমত বা ভিন্নমত থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা আমাদের আপত্তির কথা জানিয়েছি। এটা পদত্যাগ নয়।

৩০ নেতার আপত্তি

গতকাল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদের বরাবর ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতা ও দলীয় মূল্যবোধের আলোকে সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তিসংক্রান্ত স্মারকলিপি’ দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ সদস্য। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ও এক ধরনের প্রচার চালিয়ে ৩০ জন একমত হতে পেরেছেন। তবে চিঠিতে সই থাকা একাধিক নেতা বলেন, তারা চিঠির সঙ্গে একমত নন। মৌখিক কথা বলে তাদের নাম যুক্ত করা হয়েছে।

চিঠিতে নেতারা তাদের আপত্তির কারণ হিসেবে এনসিপির ঘোষিত আদর্শ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার দায়বদ্ধতা এবং গণতান্ত্রিক নৈতিকতার কথা বলেছেন। এর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের ভূমিকা, ধর্মকেন্দ্রিক সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থানের শঙ্কা এবং জামায়াতের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে জামায়াতের সঙ্গে জোট করলে এনসিপির নৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑএনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মোহাম্মদ মুরসালীন, সংগঠক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।

যে কারণে জামায়াত-এনসিপি সমঝোতা

বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হলেও জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে এগিয়েছে এনসিপি। আজ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শুরুর দিকে এনসিপির নেতারা খুব আগ্রহ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়েছেন। ফলে গত কয়েক দিনে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার আলোচনায় গতি আসে এবং দুই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে। কোন কোন আসনে দুই দলের কোন কোন প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা বেশি, সেটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আসন সংখ্যাও চূড়ান্ত হয়েছে।

তফসিল অনুযায়ী, আগামীকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দলীয় প্রার্থী হতে হলে মনোনয়ন ফরমের সঙ্গে দলের প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হয়। সেজন্য এই সময়ের মধ্যেই আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সমঝোতা হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ আছে।

গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করে এনসিপির এক যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, তারেক রহমান দেশে আসার পরও এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আসন সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় আগামী সংসদে জুলাই বিপ্লবীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়।

এনসিপি ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জারা

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দলটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পদত্যাগের কথা জানান তিনি। পরে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন ডা. জারা। এছাড়া তার স্বামী দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহও এনসিপি থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগত কারণে এনসিপি থেকে পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন।

জামায়াতের সঙ্গে দলটির নির্বাচনি জোট বা আসন সমঝোতার আলোচনার মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত এলো। কয়েকটি সূত্র জানায়, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতায় আপত্তি থাকায় পদত্যাগ করেছেন জারা। তবে ঢাকা-৯ আসনে এনসিপির প্রার্থী হতে পারেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নুর।

ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা জানান, আমার স্বপ্ন ছিল একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম থেকে সংসদে গিয়ে আমার এলাকার মানুষ ও দেশের সেবা করা। তবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে আমি কোনো নির্দিষ্ট দল বা জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর প্রয়োজন হওয়ায় আজ রোববার থেকে স্বাক্ষর অভিযানে নামার কথা জানিয়েছেন জারা। তবে একদিনে এত মানুষের স্বাক্ষর নেওয়া অসম্ভব হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্য চেয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৪৭ লাখ টাকা গণচাঁদা সংগ্রহ করেছেন ডা. জারা। এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের কারণে অনুদান ফেরত নিতে চাইলে ফেসবুকে দেওয়া একটি ফরম পূরণ করার অনুরোধ করে জারা বলেছেন, আপনাদের ট্রানজেকশন আইডি ও ডিটেইলস ভেরিফাই করার পর অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। আর যারা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলেন, তাদের শিগগির জানাব কী প্রক্রিয়ায় আপনাদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।

ফেসবুকে সমঝোতার কারণ ব্যাখ্যা

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। সেখানে লেখা হয়, ‘ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির সঙ্গেই অন্য দলগুলোর মতভিন্নতা পরিলক্ষিত হতো। সেখানে সংস্কারের পয়েন্টগুলোয় ন্যাচারালি (স্বাভাবিকভাবেই) এনসিপি, জামায়াত ও অন্য দলগুলো একমত হয়েছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘সেক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়, দেশকে নতুন করে গড়া, নতুনভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তোলার জন্য যে রাজনীতি, সে রাজনীতির প্রতি যে কমিটমেন্ট সেটাকেই নির্বাচনি রাজনীতিতে জোটের বা সমঝোতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রধানতম বিবেচ্য বিষয় হিসেবে এটাকে মূল্যায়ন করছি।’

আজ ঘোষণা দিতে পারে জামায়াত

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে আজ। এ প্রক্রিয়ায় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের পাশাপাশি এনসিপি ও নতুন কিছু দল যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল রাতে জানান, আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নেতারা কাজ করছেন। রাতেই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা। আজও এ নিয়ে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।

জামায়াতকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য এনসিপি নেত্রী সামান্তার

তারেক রহমানকে কটূক্তিকারীর মুক্তি চায় বিএনপি

জামায়াতের সঙ্গে জোটের পক্ষে নাহিদকে ১৭০ নেতার চিঠি

জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট নিয়ে যা বললেন আখতার

খালেদা জিয়া সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন: ডা. জাহিদ

বগুড়ার পাশাপাশি ঢাকাতেও লড়বেন তারেক রহমান

তারেক রহমানের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত

জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার ঘোষণা হতে পারে রোববার

মাকে দেখতে আবারো এভারকেয়ারে তারেক রহমান

ভোটাধিকার নিশ্চিত হলেই রাষ্ট্রের মালিক হবে জনগণ: হাবিব