আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের (ডিসি-এসপি) লটারির মাধ্যমে বদলি চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, বদলির ক্ষেত্রে এটিই সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও আস্থা রাখার পদ্ধতি।
বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে জামায়াতের পক্ষে এ কথা বলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘এক মাসও হয়নি, ২০ দিনও হয়নি, একজন ডিসি সেখানে চলে গিয়েছেন (বদলি)। সেটাও হঠাৎ করে। আবার এই সপ্তাহের মধ্যে অনেককে রদবদল করা হয়েছে। এটার পেছনে মনে হয় যেন, কোনো একটা ডিজাইন করে। একটা উদ্দেশ্যে এই কাজটা কোনো জায়গা থেকে হচ্ছে।’
সংলাপে জামায়াতের পক্ষে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল লটারির মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলির পক্ষে মত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘লটারির মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হলে, যার যেখানে তকদির আছে, সে সেখানে চলে যাবে। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।’
নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনকে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার জন্য আস্থার জায়গা বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এর আগেও কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের সময়ে তফসিল ঘোষণার পর এক রাতে সব ডিসি-এসপির বদলি হয়েছে। তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন যেটা করা হচ্ছে, তা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্য নিয়ে করা হচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও নির্বাচনি আচরণবিধিতে তার উল্লেখ না থাকার বিষয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীরা কীভাবে গণভোট দেবেন, সে বিষয় স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে প্রবাসী ভোটের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিকল্প হিসেবে পাসপোর্টের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার বিধান করার বিষয়ে বলেন তিনি।
এ ছাড়া নির্বাচনি প্রচারে লাউডস্পিকারের ব্যবহার সীমিত করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা, ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি স্পষ্ট করতে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত পাঁচজন সেনাসদস্য মোতায়েনের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে প্রণীত আচরণবিধির কয়েকটি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এবং বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী প্রতিনিধি শিশির মনির। বিশেষ করে পোস্টার ব্যবহার, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি আরোপের এখতিয়ার এবং নির্বাচনি অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ না থাকায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির অসংগতিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পোস্টার ব্যবহারে ‘দ্বৈত নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন
আচরণবিধির ৭-এর ‘ক’ উপধারায় ‘কোনো প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাইবে না’ উল্লেখ থাকার পরও ৭-এর ‘ঘ’ উপধারায় পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় ইসির দ্বৈত নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিশির মনির।
তিনি বলেন, আগে বলছেন পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। আবার পোস্টার সরাতে পারবে না, এই কথা বলছেন কেন?
নির্বাচনি ইশতেহার পাঠ বাধ্যতামূলক করার দাবি
প্রতীক বরাদ্দের পর পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে নির্বাচনি প্রচারণার উদ্দেশে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক একই মঞ্চে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে ইশতেহার পাঠ ও আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা প্রদানের ব্যবস্থা ‘করতে পারবেন’ –এই বিধানকে ঐচ্ছিক না রেখে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান শিশির মনির।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় আপনাদের এখানে ইনডিসিশনে আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং অব মিন হচ্ছে ইলেকশন কমিশন ইন ইনডিসিশন। আপনারা একদিকে বলছেন করতে পারবেন... আমার বিবেচনায় সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য করা উচিত। এই আলোচনা নতুন প্রজন্মের কাছে একটি উদ্ভাবনী আইডিয়া দেবে এবং দেশের জন্য একটি গঠনমূলক সংস্কৃতি তৈরি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সময়সীমা আবশ্যক
নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ (আচরণবিধির ২৬) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই আইনজীবী।
শিশির মনির বলেন, আমি এখন গিয়ে দেখতে পেলাম আমার ইলেকশন হচ্ছে এক জায়গায় আমি আপনাকে কমপ্লেইন দিলাম। আপনাদের বাধ্যতা থাকা উচিত, আপনাদের সামনে তো কোনো স্টিক নাই। আমি কমপ্লেইন দিয়ে বসে থাকব, আপনারা ডিসপোজ করবেন না, আমার আর কিছু করার থাকবে না। সুতরাং ইউ টাইম লিমিট... এত ঘণ্টার মধ্যে, এত সময়ের ভেতরে ডিসপোজ করবেন। তিনি শত শত অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি বলেও মত দেন।
শাস্তি আরোপের এখতিয়ার নিয়ে ধোঁয়াশা
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও কে এই শাস্তি আরোপ করবেন (হু উইল ইম্পোজ দ্য পানিশমেন্ট), সে বিষয়ে আচরণবিধিতে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় শিশির মনির ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আপনার এই আচরণবিধিতে তো নাই। বলতে হতো কোর্টটা কে নির্ধারণ করবে? আপনার এই বিধান পড়ে মনে হয় না যে, আপনি যে শাস্তিটা আরোপ করতে চাচ্ছেন কে শাস্তি আরোপ করবে এই মর্মে আচরণবিধিতে উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনার বিধানেও তিনি অসংগতি তুলে ধরেন।