হোম > রাজনীতি

অপপ্রচার প্রতিহত করাই বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ

ইসমাঈল হোসাইন সোহেল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে নির্বাচনের আগে সময় আছে প্রায় দুই মাস। ইতোমধ্যেই প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। সেই ধারাবাহিকতায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থীরা।

জানা গেছে, এ প্রচারে দলটির জন্য বড় ধাক্কা অপপ্রচার। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বাড়ছে বলে মনে করছে বিএনপি। এসব অপপ্রচারে তৃতীয় পক্ষেরও ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করেন দলের প্রার্থী ও নেতারা। এটি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আগামী নির্বাচন আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।

বিএনপির একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিকৃত ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। পুরোনো অনেক ভিডিওতে নতুন করে ভয়েস যুক্ত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আবার কখনো একজনের বক্তব্য আরেকজনের নামে ছড়ানো হচ্ছে। এসব নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সংঘবদ্ধ ‘কমেন্ট অ্যাটাক’ হচ্ছে।

এটা অনেক সময় তৃতীয় পক্ষ থেকেও হয়ে থাকে বলে মনে করেন বিএনপির প্রার্থীরা। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ভাঙন ধরানোই মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য তাদের। মিথ্যা প্রোপাগান্ডার ফলে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবর্তে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য, যা অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে সংঘাতের দিকে ধাবিত করছে।

নির্বাচন ঘিরে বিএনপির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে মনে করেন দলের প্রার্থীরা। ভোট যত ঘনিয়ে আসবে, ততই এর অপব্যবহার বহুগুণে বাড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।

আবার বিভিন্ন জায়গায় অন্য দলের প্রার্থীর পোস্টার বা স্টিকারের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি নেতাদের নির্বাচনি প্রচার পোস্টার বা স্টিকার লাগিয়ে চলছে দোষারোপের রাজনীতি। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে বিভিন্ন মহল থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।

এ অপপ্রচারের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউবে এ নেতিবাচক প্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ফেসবুকে ভুয়া ফটোকার্ড ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা ব্যাপক। বিভিন্ন নামে-বেনামের পেজ ও আইডি থেকে ফেসবুকে এসব ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ছে, যা সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সামাজিকমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যা খুশি লিখে এক ধরনের ‘নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে’। এজন্য সামাজিকমাধ্যমের দায়বদ্ধতা না থাকাকে দায়ী করেন তিনি। এমনভাবে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারে চালানো হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

এর আগে গত ২ নভেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি দেওয়া এক বক্তব্যে বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে আবারও একটি সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবে কোনো ষড়যন্ত্র বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সমাজ ও রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য এআইয়ের অপব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বক্তব্যকে বিকৃত করে অশ্লীল ও অশ্রাব্য কথা জুড়ে দেওয়া হয়। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আরেকটা আক্রমণ।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রার্থীর অযাচিত বক্তব্যও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করেন তারা। সেসব বক্তব্য বিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে বলেও মনে করেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এ কারণে দলের ওইসব বিতর্কিত প্রার্থী ও নেতাদের বিভিন্ন সময় সতর্ক করা হয়েছে। অযাচিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে তাদের। অন্যদিকে উদ্দেশ্যমূলক ও মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে যশোর-৬ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, এখনও ওইভাবে অপপ্রচার লক্ষ্য করিনি। তবে আমার বিপক্ষের জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর পোস্টারের ওপর আমার স্টিাকার লাগানো হয়েছেÑ এমন একটা অভিযোগ এসেছে। তবে সেটা তৃতীয় কোনো পক্ষ করছে। তারা আমাদের মধ্যে একটা বিভেদ বাধানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচনের আগে এটা হয়তো আরও ম্যাসিভ আকারে করা হতে পারে।

শ্রাবণ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপ্রচারের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। বৈধ ফেসবুক আইডি দিয়ে সত্য তুলে ধরা একং মিথ্য প্রোপাগান্ডা মোকাবিলায় দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়া থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল বলেন, আমরা সব সময় বলেছি, নির্বাচনের প্রচারটা সুস্থ হওয়া দরকার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারও চরিত্র হননের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করা, যেকোনো মন্তব্যের পেছনে বটবাহিনী দিয়ে আক্রমণাত্মকভাবে পেছনে লাগা, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টিকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের চেষ্টা করা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একজনের ভয়েস বিকৃত করে অশ্লীল ও অশ্রাব্য কথা জুড়ে দেওয়া, পুরাতন কোনো ছবিকে নতুন ছবি হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা; খণ্ডিত বক্তব্যের কিছু অংশ কেটে কেবল সেটি প্রচার করাÑ এমন সব অপপ্রচার চলছে।

আমরা আশঙ্কা করছি, আগামীতে এটা আরও বৃদ্ধি পাবে; যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে নির্বাচনে জনসাধারণকে প্রভাবিত করা শুধু নয়; বরং তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হবে। এটি বন্ধে বিটিআরসিকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাভেল বলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে তাদের আইডি যেন জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এর ফলে অপপ্রচারকারীদের মধ্যে একটা ভয় তৈরি হবে, সে শনাক্তযোগ্য।

মওদুদ হোসেন পাভেল বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রোপাগান্ডার চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বড়। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলে এ ব্যাপারে একটা প্রতিকার আসতে পারে।

বিএনপির প্রার্থীদের দাবি, নির্বাচনী অপপ্রচারের মাধ্যমে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে আগামী নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চাইছে ফ্যাসিস্ট শক্তি। এ জন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। সার্বিক বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন আমার দেশকে বলেন, ‘দেশের জন্য নির্বাচিত সরকার জরুরি। সে জন্য নির্বাচনটা হয়ে যাকÑ এটা সবাই চায়। কিন্তু যে মহল নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে চায়, ষড়যন্ত্র করতে চায়- এই অপপ্রচার তাদের কাজ। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে দোষারোপের রাজনীতি না করে বটবাহিনী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।’

এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি বিএনপির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে রিপন বলেন, দলের পক্ষ থেকেও বটবাহিনী ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পরের প্রতি মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন; নির্বাচন বিঘ্নিত করার চেষ্টায় লিপ্ত কোনো অপশক্তি যেন এখানে সুযোগ না পায়।

‘মাইনাস টু বা ফোর’ নিয়ে যা বললেন রুমিন ফারহানা

এনসিপির নেতৃত্বে নতুন জোটের ঘোষণা বিকেলে, থাকছে যারা

হাসিনাকে উদ্ধারে বিমানঘাঁটি ও কমান্ডো প্লাটুন প্রস্তুত রেখেছিল ভারত

এনসিপির নেতৃত্বে তিন দলের রাজনৈতিক জোট চূড়ান্ত

সেনা অফিসারদের হত্যার পরিকল্পনা আ.লীগের ৬ নেতার

ফ্যাসিস্ট শাসনে সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, নতুন করে গড়ে তুলতে হবে

সাইবার যুদ্ধে হেরে গেলে পরাজিত হতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রত্যাশা ক্রমেই বাড়ছে জামায়াতে ইসলামীর

টাকা বা পেশিশক্তি নয়, জনগণের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বড় শক্তি: জারা

ঐক্য ছাড়া জাতি অগ্রসর হতে পারে না: অধ্যাপক মুজিব