জিয়াউর রহমানের আদর্শ ভুলে যাওয়ায় তার অনুসারীরা গণতন্ত্র চর্চা করে না ও সংস্কার চায় না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেছেন, আমরা বলতে চাই না, কিন্তু আমাদেরকে শুনতে হয়- আজকের বিএনপি সেই জিয়াউর রহমানের বিএনপি নয়। জনগণের আস্থাশীল হতে হলে আজকের বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের বিএনপি হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় বিএনপি ছিল বড় দল, আজ সেই জায়গায় অবস্থান করে নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ‘ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমানের অনুসারীরা তার আদর্শ ভুলে গেছে। যার কারণে তারা এখন গণতন্ত্র চর্চা করে না, মানুষের সেন্টিমেন্ট তারা বুঝতে পারছে না, বুঝতে চেষ্টাও করছে না। তারা সংস্কার চায় না। জনগণের সেন্টিমেন্ট বুঝে রাজনীতি না করলে আওয়ামী লীগের মতই পরিণতি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না তারা ডাকসু নির্বাচনে ভয় পেয়েছে মন্তব্য করে ডা. তাহের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের পরাজয়ের পর তারা জাকসু, চাকুস, রাকসু নির্বাচন বন্ধে কত শত ষড়যন্ত্র করেছে, তা শিক্ষার্থীর পাশাপাশি দেশবাসীও দেখেছে।
তারা বুঝতে পারছে জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, তাহলে পরাজয়ের ভরাডুবি খেতে হবে। সেজন্য তারা জাতীয় নির্বাচনে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের যেভাবে বিরোধিতা করেছে একইভাবে গণভোটের বিরোধিতা করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘সিপাহি-জনতার বিপ্লব আর ছাত্র-জনতার বিপ্লব একই সূত্রে গাঁথা’। সিপাহি-জনতার বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে হলেও জাতীয় ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ গোলাম আজমের জানাজা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জানাজা। এই দুটি জানাজা বলে দেয় তাদের জনপ্রিয়তার পরিধি।
ডা. তাহের বলেন, শেখ মুজি মৃত্যুর পর তার দলীয় নেতারাও আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও রাজনীতিতে পুনবার্সনের সুযোগ দেন। জিয়াউর রহমান চেয়েছেন সবাই নিয়ে ঐক্যমত্যের একটি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে। তার সেই আদর্শ আজকের বিএনপি চর্চা করে না।
গণভোট প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, সময়ক্ষেপণ করে লাভ নাই, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। যতই চালাকি করে সময় নষ্ট করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। নতুবা জনগণ ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনায় আবার রাজপথে নেমে আসবে। সংকট সৃষ্টি না করে তিনি নভেম্বরের মধ্যে গণভোট সম্পন্ন করে জুলাই সনদের আলোকে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, দক্ষিণের নায়েবে আমির (ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী) অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির, সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান, সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, সহকারী মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী অফিস সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের যেই চেতনা, সেই চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় জুলাই বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। যেভাবে সিপাহি-জনতা নারায়ে তাকবির স্লোগান দিয়েছিল একইভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়েছে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ধারক বাহক হচ্ছে নারায়ে তাকবির স্লোগান। তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।