প্রথম দিন শেষে হাসান মাহমুদ বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব আয়ারল্যান্ডকে অলআউট করার পরিকল্পনায় আছেন। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ১৪ বলের মধ্যে আইরিশদের অলআউট করে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। লাক্কাতুরার উইকেটে রান হবে, এই আন্দাজটা আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্রমাণটাই আজ করে দেখান বাংলাদেশি ব্যাটাররা। বিশেষ করে মাহমুদুল হাসান জয়। ওপেনিংয়ে নেমে দিনের শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকা জয় ২৮৩ বলে করেন ১৬৯ রান। জয়ের এই ইনিংস দেখে অবশ্য এমনটা বলার সুযোগ নেই, পুরো দিনে বাংলাদেশি ব্যাটাররা ক্লাসিক টেস্ট মেজাজে খেলেছেন। ব্যাটিংয়ের শুরুটা আগ্রাসী ভঙিমায় করে দিন শেষে ৮৫ ওভারে ১ উইকেটে ৩৩৮ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। পায় ৫২ রানের লিড।
অফফর্মের কারণে স্কোয়াড থেকে বাদপড়া জয়ের সুযোগ মেলে এনামুল হক বিজয়ের বদলি হিসেবে। ৩ বছর ৭ মাস ১২ দিন পর সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া জয়ের একাদশে থাকাটাই তৈরি করেছিল প্রশ্নের! বিজয়ের অফফর্মে সুযোগ পাওয়া টেস্টে ‘ফর্মহীন’ জয় প্রমাণ করে দেন পারফর্ম করতেই এসেছেন এবার। তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। নিজের সেরা ১৩৭-কে টপকে এখন তার নামের পাশে আছে ১৬৯ রান। ৩০ ইনিংস পর পান সেঞ্চুরির দেখা। এমন ইনিংস তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে সেটা স্পষ্ট ছিল তার ব্যাটিংয়ে। হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর থেকে ব্যাটিংয়ে ছিলেন আরো বেশি আগ্রাসী। যার প্রমাণ, সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর তার ব্যাটে এসেছে তিন ছক্কা। আর আগে ওভার বাউন্ডারি হাঁকান মাত্র একটি। তার পুরো ইনিংসে ছিল ১৪ চার।
পুরো দিনের আলো যখন মাহমুদুল হাসান জয় কেড়ে নিয়েছেন, তখন এই দারুণ ব্যাটিংয়ের সূচনাটা হয়েছিল সাদমান ইসলামের ব্যাটে। সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত দারুণ পারফর্ম করা সাদমানের সেঞ্চুরি ভাগ্য এবারও কাটা পড়েছে বেশ কাছে গিয়ে। ওয়ানডে ধাঁচে ব্যাটিং করা ৪৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ৫৮ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়া সাদমান বিরতি থেকে ফিরে শুরু করেন দারুণ ব্যাটিং। তবে ম্যাথিউ মেমফ্রিসের বলে আউট হলে তার ইনিংস থামে ৮০ রানের মাথায়। তার ইনিংসে ছিল ৯ চার ও এক ছক্কা। ফেরার আগে জয়ের সঙ্গে তার ছিল ১৬৮ রানের জুটি। ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। লাক্কাতুরার উইকেটে বাংলাদেশের দারুণ শুরুর পেছনে সাদমানের ছিল বড় অবদান। সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, বাজে বলে রান তুলেছেন তারা। আইরিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই রান তোলার গতিতে স্পষ্ট, বাজে বলের সংখ্যাটাই বেশি ছিল। সেই সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই নিয়েছেন তারা।
সাদমানের বিদায়ের পর আর থমকে যায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। রানের গতি খানিকটা শ্লথ হয়েছে বটে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে রান তোলেন মুমিনুল হক ও জয়। তিন নম্বরে সবসময়ই বাংলাদেশকে দারুণ সার্ভিস দেওয়া মুমিনুল হক দলের ভালো শুরুর সুবিধাটা কাজে লাগিয়েছেন বেশ। সাদমানের সমান ৮০ রান এসেছে তার ব্যাটে। ১২৪ বলে ৮০ রান করা মমিনুল আগামীকাল মাঠে নামবেন নিজের ১৪তম টেস্ট সেঞ্চুরির লক্ষ্যে। আর জয়ের সামনে এখন ডাবল সেঞ্চুরি করার সুযোগ। তিন ব্যাটারের এমন দারুণ ইনিংসে মাত্র ৫৫.৪ ওভারের মাথাতেই লিড পায় বাংলাদেশ। তাতে দিনশেষে বাংলাদেশের লিড এখন ৫২। আগামীকাল বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য সারাদিন ব্যাট করে লিড যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়া। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের লিড কততে গিয়ে থামে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।