গোপন মার্কিন হামলার ফুটেজ প্রকাশে চাঞ্চল্য
কংগ্রেস সদস্যদের সামনে প্রদর্শিত একটি মার্কিন সামরিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্যারিবিয়ান সাগরে একটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকা ধ্বংসের পর ধ্বংসাবশেষে ভর করে বেঁচে থাকা দুই নিরস্ত্র ব্যক্তিকে পরপর চালানো হামলায় হত্যা করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র রয়টার্সকে এটি নিশ্চিত করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে ২ সেপ্টেম্বর। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পরিচালিত মোট ২২টি প্রাণঘাতী হামলার প্রথমটি ছিল এটি। শুরুতে একটি আকাশে বিস্ফোরণকারী গোলা নৌকার ১১ সদস্যের ওপর নিক্ষিপ্ত হলে নৌকাটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এবং মাত্র দুইজন জীবিত থাকে। তাদের গায়ে তখন কোনো পোশাক, অস্ত্র বা যোগাযোগ সরঞ্জাম ছিল না।
সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, ভিডিওতে দেখা যায় তারা প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও নৌকার ভাঙা অংশটি উল্টাতে পারছিল না।
তৎকালীন জয়েন্ট স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ফ্র্যাঙ্ক ব্র্যাডলি মূল্যায়ন করেন, নৌকায় থাকা কোকেনের কারণে ধ্বংসাবশেষটি ভেসে থাকতে পারে এবং উদ্ধার হওয়ার ঝুঁকি ছিল। মিশনের “সম্পূর্ণতা” নিশ্চিত করতে তিনি অতিরিক্ত হামলার নির্দেশ দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, আরও তিনটি গোলা ধ্বংসাবশেষে আঘাত হানে এবং দুই জীবিত ব্যক্তিই নিহত হন।
“তাদের মুখ, দেহ—সবকিছু দেখা যাচ্ছিল… তারপরই বুম, বুম, বুম,” সূত্রটি জানায়।
ক্যাপিটল হিলে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকে ব্র্যাডলি এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এই ফুটেজ দেখান।
ডেমোক্র্যাটরা বৈঠক শেষে স্পষ্টতই স্তব্ধ ছিলেন। সিনিয়র ডেমোক্র্যাট জিম হাইমস বলেন, এটি তার দেখা “সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনাগুলোর একটি।” সিনেটর জ্যাক রিড এই ফুটেজ প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন, তিনি “গভীরভাবে বিচলিত।”
অন্যদিকে রিপাবলিকানরা অভিযানকে সমর্থন করেছেন। সিনেটর টম কটন বলেন, তিনি দেখেছেন “দুই জীবিত ব্যক্তি নৌকাটি উল্টাতে চেষ্টা করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে পাঠানো মাদকসহ তারা লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।” তার দাবি, ব্র্যাডলি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ যথাযথ সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের যুদ্ধ আইন ম্যানুয়াল–এ বলা আছে, জাহাজডুবি বা যুদ্ধক্ষমতা হারানো এবং লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে না এমন ব্যক্তির ওপর হামলা “স্পষ্টতই বেআইনি।” তবে প্রশাসন পুরো অভিযানে যুক্তি দেখাচ্ছে—এটি সশস্ত্র মাদক কার্টেলের বিরুদ্ধে “যুদ্ধ,” এবং যুক্তরাষ্ট্রমুখী মাদককে প্রাণঘাতী হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ পর্যন্ত এই ‘অ্যান্টি-ড্রাগ’ অভিযানগুলোয় ৮৭ জন নিহত হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে পরিচালিত আরেকটি হামলায়ও মানুষ নিহত হয়েছে।
এসআর