বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে ২০২৫। বিশ্বজুড়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বছরটিকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি, গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যর্থ প্রচেষ্টা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে বছরটি ছিল চ্যালেঞ্জপূর্ণ।
২০২৫ সাল ইতিহাসের অন্যতম উষ্ণ বছর হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। ইউরোপের দাবানল, আফ্রিকার তীব্র খরা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণঘাতী বৃষ্টিপাত বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। উষ্ণতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পরেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, যা ‘বিশ্বের নববর্ষ রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত, উদযাপন চলাকালীন শহরটি শোকের আবহে ছিল। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বন্ডি বিচে একটি ইহুদি উৎসবের সময় বন্দুক হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় শহরটি এখনও স্তব্ধ। তাই রাত ১১টায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে সিডনি হারবার ব্রিজ সাদা আলোয় আলোকিত করা হয়।
সিডনির বাসিন্দা স্টেফ গ্রান্ট বলেন, “অনেক মানুষের জন্যই এটি ছিল কঠিন একটি বছর। আশা করি ২০২৬ আরও ভালো হবে।” মধ্যরাতে প্রায় নয় টন আতশবাজির প্রদর্শনী দেখতে হারবার এলাকায় জড়ো হন লক্ষাধিক মানুষ। নিরাপত্তা বাড়াতে সশস্ত্র পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল।
নববর্ষ উদযাপন সিডনির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে নিউইয়র্ক থেকে স্কটল্যান্ডের হগম্যানাই উৎসব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাজিলের কোপাকাবানা সৈকতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নববর্ষ উদযাপনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের।
২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে ঘটে নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। লাবুবু পুতুল বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা পায়, লুভর জাদুঘরে সাহসী চুরি সংঘটিত হয়, কেপপ তারকা বিটিএস আবারো সঙ্গীতমঞ্চে ফিরে আসে এবং খ্যাতিমান প্রাণিবিজ্ঞানী জেন গুডলের মৃত্যু বিশ্ববাসীকে শোকাহত করে। একই বছরে ভ্যাটিকানে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থী কর্মী চার্লি কির্কের হত্যাকাণ্ড দেশটির রাজনৈতিক বিভাজন আরও তীব্র করে।
২০২৫ সালের শুরুতে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক শুল্ক আরোপ করলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই নীতির প্রভাব প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে চীনের কারখানাগুলো পর্যন্ত পড়েছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৬ সালেও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা ও সংকটের প্রভাব বজায় থাকতে পারে।
গাজায় দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধের পর অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে এর স্থায়িত্ব অনিশ্চিত। তেমনি, ২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধও চতুর্থ বছরে প্রবেশ করছে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শান্তি এখনও দূরবর্তী লক্ষ্য।
নতুন বছরকে ঘিরে বড় আয়োজনও রয়েছে। নাসা ২০২৬ সালে চাঁদের উদ্দেশে আবারও মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। আর্টেমিস-২ মিশনে মানুষসহ মহাকাশযান চাঁদের চারপাশে ঘোরানোর কথা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয়ও বাড়ছে। ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে, আর যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় প্রথমবারের মতো ৪৮ দল নিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করা হবে।
উষ্ণতা, সংঘাত এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বছর পেরিয়ে বিশ্ব এখন নতুন বছরে নতুন আশার খোঁজে তাকিয়ে আছে। মানুষ আশা করছে, ২০২৬ হবে এমন একটি বছর যা শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সম্ভাবনার দিক উন্মুক্ত করবে।
এসআর