গাজার আল-ওয়াফা মেডিকেল পুনর্বাসন হাসপাতালে দুই ফিলিস্তিনি ছেলে একে অপরের পাশে শুয়ে আছে। তাদের মা, আয়া আবু আউদা তাদেরকে নরম স্বরে ডাকছেন, কিন্তু কোনো শিশুই সাড়া দিচ্ছে না। গত ৩১ আগস্টে তাদের বাস্তুচ্যুত শিবিরে ইসরাইলের বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয় এই দুই ভাই। ওই হামলায় ৫ বছর বয়সী ইলিয়াস আবু আল-জিবীন সম্পূর্ণ বধির হয়ে পড়ে এবং ৮ বছর বয়সী ইসমাইল আবু আল-জিবীন শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে। তবে এমন ঘটনা যে শুধু ইলিয়াস আর ইসমাইলের জীবনেই ঘটেছে এমনটি নয়, বরং এখন শ্রবণশক্তি হারানোর ক্ষতিতে ভুগছে ফিলিস্তিনের অসংখ্যা শিশুরা।
মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনের একজন অডিওলজি বিশেষজ্ঞ ইউসরা বাসিল জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসের ভারী বোমাবর্ষণ, বিশেষ করে এফ-১৬ বিমানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিস্ফোরক-বোঝাই যানবাহনগুলোর বিস্ফোরণ জনসংখ্যার শ্রবণশক্তির ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
তিনি আরো বলেছেন, দুই বছরের ইসরাইলের গণহত্যার সময় প্রতি ১০ জন আহতের মধ্যে কমপক্ষে চার জানেরই কোনো না কোনো ধরনের শ্রবণের ক্ষতি হয়েছে।
বাসিল বলেছেন, ‘বিস্ফোরণগুলোর কারণে অনেক ক্ষেত্রেই স্নায়ু কোষ এবং শ্রবণশক্তির স্নায়ু ধ্বংস করে ফেলে। অনেকের ক্ষেত্রে, কানের পর্দা ফেটে যায় অথবা মধ্যকর্ণের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে আংশিক বা সম্পূর্ণ শ্রবণশক্তি হ্রাস পায় এবং তার সাথে অবিরাম টিনিটাস (কানের ভেতর এক ধরনের শব্দ, যা কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই শুনতে বা বুঝতে পারে) হয়।’
গাজায় ইসরাইলের সেনারা বিস্ফোরক-বোঝাই যানবাহনগুলো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিচালনা করে। পরববর্তীতে এগুলো দিয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণ তৈরি করে; যা একসাথে প্রায় ২০টি বাড়ি পর্যন্ত ধ্বংস করে ফেলতে পারে, পাশাপাশি ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের কারণ হয়। গাজায়, এগুলিকে সাধারণত ‘বুবি-ট্র্যাপড রোবট’ বলা হয়, যেখানে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এগুলোকে ‘আত্মঘাতী এপিসি’ বলে।
বাসিল আরো জানিয়েছেন, গাজায় এই গুরুতর শ্রবণশক্তি হারাননোদের জন্য চিকিৎসার বিকল্প নেই, যার মধ্যে রয়েছে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট, শ্রবণযন্ত্র, বিশেষ ব্যাটারি এবং শ্রবণ পুনর্বাসনের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম। তবে ইসরাইল সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এই সমস্ত সরঞ্জাম স্ট্রিপে গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়াও ইসরাইল কর্তৃক পুনর্বাসন কেন্দ্র ধ্বংস এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের বাস্তুচ্যুতি বা হত্যা চিকিৎসায় বাঁধা সৃষ্টি করেছে।